ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পল্লীবিদ্যুতের ‘রাইট অব ওয়ে ক্লিয়ারিং

কাপাসিয়ায় গাছ লুটের হিড়িক

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

কাপাসিয়ায় গাছ লুটের হিড়িক

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ কাপাসিয়ায় পল্লী বিদ্যুতের তার ও খুঁটির আশপাশের সরকারী গাছ কেটে নেয়ার হিড়িক পড়েছে। পল্লী বিদ্যুতের ‘রাইট অব ওয়ে ক্লিয়ারিং’ কাজের আওতায় গাছের ডালপালা কেটে ফেলার পর সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন জাতের কয়েক হাজার ফলজ ও কাঠের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও সড়ক বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন এসব গাছ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় কেটে নিয়ে বিক্রি করে নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুত বিভাগও বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে বলে জানান একাধিক কর্মকর্তা। গাজীপুর পল্লী বিদ্যুত-২ এর কাপাসিয়া অফিসের এজিএম (অপারেশন এ্যান্ড মেইনটেনেন্স) প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, যে সব এলাকার মধ্য দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের লাইন গেছে, সেসব এলাকার বিদ্যুতের তারের পাশের গাছ কেটে পরিষ্কার করার বিধান রয়েছে। ঝড়ের সময় বাতাসে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে যাতে বিদ্যুতের তারের কোন ক্ষতি না হয়, সেজন্য প্রতি বছরের মতো এবছরও বৈদ্যুতিক তার হতে নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রেখে কাপাসিয়ায় গাছ ও গাছের ডালপালা কাটা হচ্ছে। গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুত সরবরাহের লক্ষ্যেই এ কার্যক্রম চলছে। তবে এ কার্যক্রম শুরুর আগে এলাকায় মাইকিং করে গাছ কাটার বিষয়টি জানানো হয়। এছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউনিয়র পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তিনি জানান, কাপাসিয়া উপজেলায় ১২ কিলোমিটারের বেশি বিদ্যুত লাইন রয়েছে। বিদ্যুত লাইনের ওই এলাকায় কাঁঠাল, তাল, আম, জাম, লিচু, গজারি, মেহগনি, আকাশী, শিশুসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩৬ হাজার বড় গাছ রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই কাঁঠাল গাছ। নিয়ম অনুযায়ী , বিদ্যুতের লাইনের তার থেকে ডানে ১০ ফুট এবং বামে ১০ ফুট এলাকার গাছ কাটতে হবে। পরে ৪৫ ডিগ্রী কৌণিকভাবে গাছের ডালপালা কেটে ছেঁটে দিতে হবে, যাতে বাতাস বা ঝড়ের সময় ডালপালা ভেঙ্গে বিদ্যুতের তারের উপর না পড়ে। এ লক্ষ্যে পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে দৈনিক ভিত্তিতে শ্রমিকদের দিয়ে শুধু মেইন লাইন সংলগ্ন গাছগুলোর ডালপালা কেটে ছেঁটে পরিষ্কার করানো হচ্ছে। কোন গাছের গুঁড়ি (কা-) কাটা হচ্ছে না। কারণ এখানকার বেশির ভাগ গাছই ফলদ বৃক্ষ। গাছের গুঁড়ি কেটে ফেলা হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে- বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করা হচ্ছে। শ্রমিকরা ডালপালা কেটে দেয়ার পর গাছের মালিকরা তা নিয়ে যায়। তবে পল্লী বিদ্যুতের শ্রমিকরা গাছের ডালপালা কেটে ফেলার পর কিছু লোকজন নির্ধারিত দূরত্বের চেয়ে বেশি দূরের এমনকি সরকারী সড়কের অন্য পাশ থেকেও সরকারী গাছগুলো গোড়া থেকে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এসব গাছ কাটার সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন জড়িত নয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রতকর অবস্থায় আছি। এদিকে সরেজমিনে জানা গেছে, কাপাসিয়া উপজেলার আমরাইদ, বড়হর, হাইলজোরসহ কয়েকটি এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন গাছের শুধু ডালপালা কেটে বিদ্যুতের লাইন পরিষ্কার করছে। তবে তারা গাছের কা- কাটছে না। ডালপালা কাটার এ সুযোগে কোন ধরনের অনুমতি না নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা ও সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের নাম ভাঙ্গিয়ে স্থানীয় একাধিক মহল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও সড়ক বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন এসব গাছের অবশিষ্টাংশ (কা-) কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রভাবশালীরা বিদ্যুতের মেইন লাইনের নির্ধারিত দূরত্বের চেয়ে বেশি দূরের সরকারী গাছগুলো গোড়া থেকে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি সরকারী সড়কের একপাশে বিদ্যুতের লাইন থাকলেও অন্য পাশ থেকেও তারা নির্বিচারে অবৈধভাবে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের হুমকির প্রেক্ষিতে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। এসব গাছ স্থানীয় বিভিন্ন স’মিল বা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে নিজেদের মধ্যে অবৈধভাবে টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে। সরকারী এসব গাছ লুটপাটের বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের আমরাইদ অফিসের ইনচার্জ জামালউদ্দিন জানান, আমি বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেন সরকার টিটু জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসের কথা বলে গাছ কেটে নিয়েছে মোস্তফা কামাল বাদল। তবে তিনি পার্টি অফিসে তা দিয়েছেন কি না - আমি বলতে পারব না। এ বিষয়ে মোস্তফা কামাল বাদলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি কোন গাছ নেইনি। তবে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন আমার কাছে সহযোগিতা চেয়েছিল , এ কারণে আমি কয়েকবার কয়েকটি স্পটে গিয়েছি। তবে এবার নয়, বেশ কিছুদিন আগে আমি একটি সরকারী গাছ নিয়ে পার্টি অফিসের জন্য ৫টি চেয়ার বানিয়েছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কেবিএম সাদ্দাম হোসেন জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। এদিকে গাছ কাটার বিষয়টি জানতে পেরে গাজীপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেনের নির্দেশে গত রবিবার কাপাসিয়া থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মেদ আবদুল্লাহ জানান, গাছ চুরি করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। আরও তদন্ত করে এর সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×