ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিসে সেমিনার

রোহিঙ্গা ইস্যু মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত করেছে ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

রোহিঙ্গা ইস্যু মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত করেছে ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপক্ষীয় সম্পর্কন্নোয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে তারা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। বুধবার রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) মিলানয়তনে ‘পরিবর্তনশীল বিশ্ব : বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এ পরামর্শ দেন। সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক তিক্ত করে দিয়েছে। বিস আয়োজিত এই সেমিনারে সভাপতি ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মুহম্মদ জমির। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সেমিনারে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান মনসুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দকী, বিস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ, বিস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আব্দুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি ‘বন্ধুত্ব সবার সঙ্গে, শত্রুতা কারও সঙ্গে নয়।’ তবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক তিক্ত করে দিয়েছে। নানা কূটনৈতিক চাপের পর ২৩ নবেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোয় দু’দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ সংক্রান্ত ‘ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট’ সমঝোতা স্মারক সই হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আশাকরি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। ২০১৭ সালকে জাতিসংঘ মহাসচিব শান্তির বছর ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী আক্রমণ হয়েছে এ বছরেই। তিনি বলেন, গোটা বিশ্ব সাক্ষী ২০১৭ সালে কিভাবে নির্যাতিত হয়ে সাড়ে ছয় লাখ মানুষ মাত্র তিন মাসে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এখন দেশে অবস্থান করছে দশ লাখ মিয়ানমারের অধিবাসী। মাহমুদ আলী বলেন, বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। তার মধ্যে প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় গেছে। তিনি বলেন, সৌদি আরব মুসলিম বিশ্বকে বরাবরের মতোই নেতৃত্ব দিয়েছে। জলবায়ু সঙ্কটে কার্যকরী ভূমিকা নিতে নেতৃত্ব দিয়েছে ফ্রান্স। বিশ্ব অব্যাহতভাবে বদল হচ্ছে। তাই নতুন সমুদ্রসীমানা, আঞ্চলিক সহযোগিতা ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক, জাপান, চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন হবে। মানবাধিকার রক্ষায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান বেড়েছে। সমুদ্র সহযোগিতা বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রে সীমানা নির্ধারণ বিষয়ক জটিলতা মীমাংসা হওয়ায় আমরা এ বিষয়ে আরও জোর দিচ্ছি। আঞ্চলিক অন্তর্ভুক্তিকরণ ও কানেক্টিভিটি বাংলাদেশের আরেকটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র নীতি। সার্ক, বিমসটেক, সাসেক, বিসিআইএম, বিবিআইএন ইত্যাদি আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি প্রকল্পে বাংলাদেশ আরও বেশি ভূমিকা রাখবে। মাহমুদ আলী বলেন, নিকটবর্তী প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করার জন্য বাংলাদেশ আরও জোরালো পররাষ্ট্র নীতি অব্যাহত রাখবে। কার্যকরী অর্থনীতি অংশীদারিত্বের জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র এদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব জোরদার করেছে। সেমিনারে বিশেষ অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বর্তমান সময়ে কূটনীতিতে যেসব চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, অতীতে এমন ধরনের চ্যালেঞ্জ আসেনি। তবে সকল দিক ঠিক রেখে আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে চলেছি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, অতীতে বিভিন্ন সরকার কূটনীতিতে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি সরকারের আমলে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ভারতে একটি গ্যাস লাইন নেয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল মিয়ানমার। তবে মিয়ানমারের সেই প্রস্তাবে বিএনপি সম্মতি দেয়নি। মিয়ানমারকে যদি বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে গ্যাস লাইন দেয়া হতো, তবে এখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা তাদের আটকাতে পারতাম। আবার তথ্য পাচারের অজুহাতে থ্রি জি কানেকশনেরও বিরোধিতা করেছিল বিএনপি। একইভাবে একজন যুদ্ধাপরাধীকে ওআইসি মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করেছিল বিএনপি, সে কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নষ্ট হয়। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, আমরা এখন বৃহৎ ঐক্য গড়ে তোলা, শান্তি প্রতিষ্ঠা, উদ্ভাবন, মানবতাবাদ, আঞ্চলিক সহযোগিতা, সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন, বহুমুখী ফোরামে অংশগ্রহণ ইত্যাদিতে জোর দিচ্ছি। নতুন বছরে আমরা কি ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করব, সেটা নিয়েও আলোচনা করেছি। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ অর্জনে পররাষ্ট্র নীতির নিয়ামকসমূহের মধ্যে সার্বভৌমত্ব রক্ষা, ভৌগলিক অখ-তা, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, জনগণের জীবনমান উন্নয়নে টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ ও বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত করাকে চিহ্নিত করেন। এ সময় তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপক্ষীয় সম্পর্কন্নোয়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা, সামরিক-বেসমারিক ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, গবেষক ও শিক্ষাবিদ অংশগ্রহণ করেন।
×