ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পরিস্থিতি থমথমে, আট স্তরের নিরাপত্তাবলয় ॥ সর্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবায় ১৪ এ্যাম্বুলেন্স

টঙ্গীতে তিন দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব শুরু কাল

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

টঙ্গীতে তিন দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব শুরু কাল

নূরুল ইসলাম, টঙ্গী থেকে ॥ অবশেষে বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠান করার দৃঢ় শপথ নিয়ে দলে দলে মুসল্লিরা টঙ্গীতে আসতে শুরু করেছেন। তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির হযরতজী হুজুর মাওলানা সা’দকে এজতেমায় যোগদান করা না করা নিয়ে দুটি গ্রুপে চলা উত্তেজনার মধ্যেই এবারের বিশ্ব এজতেমা শুরু হচ্ছে। তাবলিগ জামাতের এক পক্ষ মাওলানা সা’দকে এজতেমা মাঠে দেখতে চায় না। অপর পক্ষ মাওলানা সা’দ এবারের বিশ্ব এজতেমায় যোগদান করতে না পারলে আগামীতে বাংলাদেশে এজতেমা অনুষ্ঠানে সকল আয়োজন বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মুসল্লিরা দোটানায় পড়েছেন এবারের এজতেমা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে কিনা ভেবে। বুধবার সকাল থেকে মাওলানা সা’দকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল থেকে কাকরাইল মসজিদে না যাবার জন্য বিক্ষোভের মুখে তাবলিগ জামাতের দুটি গ্রুপ এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। জানা গেছে, ঢাকার বিমানবন্দর থেকে পুলিশ প্রহরায় মাওলানা সা’দকে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ খবর জানার পরে বিক্ষোভরত মুসল্লিরা দু’দিকে ভাগ হয়ে একটি অংশ ঢাকার দিকে চলে যায় এবং অপর একটি অংশ বিশ্ব এজতেমার দিকে আসতে থাকে। ইতোমধ্যে টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠানের জন্য টঙ্গী এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। কাল শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের প্রথম পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমা। আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে তাবলিগ জামাতের এ এজতেমা। বিশ্ব এজতেমা ময়দানে বুধবার থেকে মুসল্লিরা দলে দলে আসতে শুরু করেছেন। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্বের বিশ্ব এজতেমা। চারদিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৯ জানুয়ারি থেকে। ২১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের সমাপ্তির মাধ্যমে ২০১৮ সালের বিশ্ব এজতেমা শেষ হবে। টঙ্গীর এই বিশ্ব এজতেমা ময়দানে এটি হবে ৫৩তম বিশ্ব এজতেমা। মুসল্লিদের চাপ কমাতে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ৪ ভাগে ভাগ করে প্রথম পর্বে ১৬ জেলা, দ্বিতীয় পর্বে ১৬ জেলার মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করবেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশ বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ তাবলিগ অনুসারী মুসল্লি বিশ্ব এজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এজতেমার মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা সংস্থার সদস্যকে নিয়ে। স্বাধীনতার পর মহান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টঙ্গীর বিভিন্ন মৌজায় বিশ্ব এজতেমার জন্য ১৬০ একর ভূমি এজতেমার জন্য বরাদ্দ দেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজতেমাস্থলের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশে এজতেমাস্থলের ব্যাপক উন্নয়নে রাস্তা-ঘাট, অসমতল ভূমি সমতল করা, পাকা পায়খানা, পাকা গোসলখানা, ওযুখানা, বিদেশী মুসল্লিদের জন্য প্রয়:প্রণালী, রান্না-বান্না, থাকার জন্য স্থায়ী পাকা টিনশেড ঘর নির্মাণ, এজতেমা সড়ক নির্মাণ, ড্রেন-কালভার্ট নির্মাণ ও অন্যান্য উন্নয়নের কাজ সমাপ্ত করান। গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আলহাজ এ্যাড. আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান বিশ্ব এজতেমার দেখভালের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। তারা জানান, বিশ্ব এজতেমায় আগত মুসল্লিদের সেবায় সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিবছরের ন্যায় এবারো সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বিআরটিসি স্পেশাল বাস সার্ভিস চালু করেছে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব এজতেমার শেষ দিন পর্যন্ত। টঙ্গী রেলস্টেশনে প্রতিটি ট্রেন ২ মিনিট করে যাত্রা বিরতি করবে। এছাড়া রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের সদস্যরা তুরাগ নদীর ওপর ৭টি স্থানে ভাসমান সেতু নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেছে। এ বছর ২০১৮ সালের ৫৩তম এবার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে এজতেমায় অংশ নেবেন ৩২টি জেলার মুসল্লি। জেলাগুলো হচ্ছে-ঢাকা, টাঙ্গাইল, শেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, নড়াইল, মাদারীপুর, ভোলা, মাগুরা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পঞ্চগড়, ঝিনাইদহ, জামালপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, নরসিংদী, কুমিলা, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, ফেনী, ঠাকুরগাঁও, সুনামগঞ্জ, বগুড়া, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা এবং পিরোজপুর। এজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়েছে। এবারও ৮ স্তরের র‌্যাব-পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে পুরো এজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা। এজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবায় ১৪টি এ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। মুসল্লিদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক ও ওষুধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এজতেমা ময়দানের পশ্চিমে তুরাগ নদীর ওপর ৭টি পন্টুন ব্রিজ তৈরি করবে সেনাবাহিনী, এজতেমায় আগতদের তিন স্তরে নিরাপত্তা দেবে র‌্যাব। এ ছাড়া মোটরসাইকেল টহল, নৌ টহল ও হেলিকপ্টার টহলে থাকবে র‌্যাব সদস্যরা। বিপুলসংখ্যক র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সাদা পোশাকে পুরো এজতেমা ময়দানে অবস্থান করবেন। র‌্যাবের ৯টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে এজতেমা ময়দানকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এজতেমার মোনাজাতের দিন ১১৫টি ট্রেন যাত্রাবিরতি করবে টঙ্গী স্টেশনে। মুসল্লির জন্য ওজু, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, অতিরিক্ত টিকেট কাউন্টার ও ভ্রাম্যমাণ টিকেট বিক্রি করা হবে। বিআরটিসির ৩৫০টি বাস মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য প্রস্তুত থাকবে। এ ছাড়া বিদেশী মেহমানদের কাকরাইল মসজিদ এবং বিমানবন্দর থেকে এজতেমা ময়দানে আনার জন্য পর্যাপ্ত এসি বাস বরাদ্দ থাকবে। এজতেমা ময়দানের বিদেশী নিবাসে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবার নতুন একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে। এজতেমার আগের দিন থেকে এজতেমা শেষ হওয়ার পর দিন পর্যন্ত পুলিশ মুসল্লিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। ৫ স্তরের নিরাপত্তা পার হয়ে এজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে হবে সবাইকে। এ ছাড়া এজতেমা শুরুর আগে ২০টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এজতেমা ময়দানের আশপাশে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ, বিলবোর্ড ও ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হবে। যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করবে। এছাড়াও বিশুদ্ধ খাবার নিশ্চিত, বিদ্যুত, টেলিফোন, গ্যাস, চিকিৎসাসেবা বাস্তবায়ন এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন ও পুলিশসহ বিভিন্ন দফতরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, এজতেমা মাঠে স্থাপিত ১২টি উৎপাদন নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন সাড়ে তিন কোটি লিটারেরও বেশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ওযু-গোসলের হাউস ও টয়লেটসহ প্রয়োজনী স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও পাকা দালানে প্রায় ৬ হাজারের মতো টয়লেট ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত ওযু-গোসলখানা এবং টয়লেটগুলো ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ভিডিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য ৫টি কন্টোলরুম এবং র‌্যাব ও পুলিশের জন্য ১৪টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, ২০টি ফগার মেশিন দিয়ে এজতেমা ময়দানে মশক নিধন, এজতেমা চলাকালে ২০টি ট্রাকের মাধ্যমে রাত দিন বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা, এজতেমায় ২৪ ঘণ্টা সিটিকর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ সেবা কার্যক্রম, এজতেমা ময়দানে বিনামূলে ৫৪টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকবে। ডেসকো’ কর্তৃপক্ষ জানায়, এজতেমা এলাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুত সরবরাহের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রীড ও টঙ্গী নিউ গ্রীডকে মূল ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। যে কোন একটি গ্রীড নষ্ট হলেও সামগ্রিক বিদ্যুত সরবরাহ বিঘিœত হবে না। এজতেমা এলাকায় ৪টি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর এবং ৫টি ট্রলি-মাউন্টেড ট্রান্সফরমারও সংরক্ষণ করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, এজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে সার্বক্ষণিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা অবস্থান করবেন। ময়দানের প্রতি খিত্তায় অগ্নি নির্বাপকযন্ত্রসহ দমকল কর্মী, গুদাম ঘর ও বিদেশী মেহমানখানা এলাকায় ৩টি পানিবাহী গাড়ি, ৩ সদস্যের ডুবুরি ইউনিট, ১টি স্ট্যান্ডবাই লাইটিং ইউনিট এবং ৫টি এ্যাম্বুলেন্স থাকবে। সূত্র আরও জানায়, এজতেমা মাঠ ও আশপাশের রাস্তা-ঘাট ধুলামুক্ত করতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন সার্বক্ষণিক পানি ছিটানোর ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে। টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার জানান, নিয়মিত শয্যা ছাড়াও অতিরিক্ত শয্যা বাড়িয়ে মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিক্যাল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করে চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে মন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা কারাখানার গেট ও টঙ্গী হাসপাতালমাঠসহ ৬টি অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এখানে হৃদরোগ, এ্যাজমা, ট্রমা, বার্ণ, চক্ষু এবং ওআরটি কর্ণারসহ বিভিন্ন ইউনিটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চিকিৎসা দেবেন। রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম এ লতিফ জানান, তাদের সমিতির মাধ্যমে মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণের কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এজতেমা মাঠের দায়িত্বে নিয়োজিত মুরব্বি গিয়াসউদ্দিন জানান, তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে প্রতিবছর এ এজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এজতেমায় দেশী মুসল্লি ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের মুসল্লিরা অংশ নেন। প্রতিবারের মতো এজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিমাংশে বিদেশী মেহমানদের জন্য বিশেষ ভাবে টিনের ছাউনির মাধ্যমে পৃথক কামরা তৈরি করা হয়েছে। গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, এজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের নিরাপত্তায় সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বুধবার থেকে ৭ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য ২৪ ঘণ্টা মুসল্লিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পর্যাপ্ত সদস্য নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবে। এদিকে পন্টুন ব্রিজ নির্মাণ ও মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধার্থে কামারপাড়া ব্রিজ থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত তুরাগ নদীর সকল ধরনের নৌ-যান চলাচল নোঙ্গর করা ১১ জানুয়ারি থেকে এজতেমা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে নৌ-যানগুলো টঙ্গী ব্রিজের পূর্ব পাশে এবং কামারপাড়া সেতুর উত্তর পাশে নোঙ্গর করতে পারবে। এজতেমা চলাকালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে আগত মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য মহাসড়ক পরিহার করে টঙ্গীর কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিল কম্পাউন্ড, মেঘনা টেক্সটাইল মিলের পাশে রাস্তার উভয় পাশে শফিউদ্দিন সরকার একাডেমি মাঠ প্রাঙ্গণ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠ, চান্দনা চৌরাস্তা হাইস্কুল মাঠ, তেলিপাড়া ট্রাকস্ট্যান্ড এবং নরসিংদী-কালীগঞ্জ হয়ে আগত মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন টঙ্গীর কে-টু ও নেভী সিগারেট ফ্যাক্টরি সংলগ্ন খোলা স্থান ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। উল্লেখিত সড়ক পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এজতেমা ময়দান থমথমে ॥ সর্বশেষ খবরে জানা গেছে বুধবার সন্ধ্যায় টঙ্গী বিশ্ব এজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব মারকাজের আমির মাওলানা সা’দ-এর আগমন ঠেকাতে একদল মুসল্লি এক বিশাল মিছিল নিয়ে এজতেমা ময়দানে ঢুকে পড়ে। এ সময় মিছিলকারীরা ‘সা’দ-এর ঠিকানা, এজতেমায় হবে না। বীর বাঙালী অস্ত্র ধরো সা’দকে বাংলা থেকে বিদায় কর’ এসব সেøাগান দিতে থাকে। এ সময় এজতেমায় আসা সাধারণ মুসল্লিরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তারা দিগবিদিক ছুটাছুটি শুরু করে। পুরো বিশ্ব এজতেমা ময়দান জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। এজতেমা শুরুর একদিন আগে মুসল্লিদের যে স্রোত নামার কথা ছিল দু’গ্রুপের মধ্যে কোন্দ্বলের কারণে সাধারণ মুসল্লিরা এজতেমা ময়দানে এ মুহূর্তে আসতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। এদিকে, ঢাকা বিমানবন্দরে সা’দ-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত মুসল্লিদের অবস্থানের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে শত শত যানবাহন দু’দিকে আটকা পড়ে যায়। শত শত যানবাহনে হাজার হাজার যাত্রী দিনভর চরম দুর্ভোগের শিকার হন। বিমানবন্দর থেকে উত্তরে টঙ্গী জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার মহাসড়কজুড়ে যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। অপরদিকে, বিমানবন্দরের দক্ষিণে সারাদিন ঢাকার প্রতিটি রাস্তায় যানজটে ছিল ঠাসা। সন্ধ্যার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-আশুলিয়া মহাসড়কে যানচলাচল শুরু হলেও ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজটে আটকা ছিল শত শত যানবাহন। গভীর রাত পর্যন্ত এ অবস্থা চলছিল।
×