ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতে বেগম জিয়া দেরিতে আসায় অসন্তুষ্ট বিচারক

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

 আদালতে বেগম জিয়া দেরিতে আসায় অসন্তুষ্ট বিচারক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পক্ষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় যুক্তিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া আদালতে দেরিতে হাজির হওয়ায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বিচারক। এ সময় খালেদার আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকের বাকবিত-া হয়। আদালত বলেন, ‘আপনারা বারোটার সময় কেন আসলেন? আপনারা আসেন না আসেন, এরপর থেকে আমি সকাল সাড়ে দশটায় আদালতের কার্যক্রম শুরু করব।’ একই সঙ্গে আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন দ্রুত শেষ করতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ সময় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বিচারককে স্মরণ করিয়ে দেন যে, আসামিপক্ষে সর্বোচ্চ চার আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন করতে পারবেন বলে তিনি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। দিনের শুনানি শেষে বিচারক বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বৃহস্পতিবার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার তার বাকি বক্তব্য আদালতের সামনে তুলে ধরবেন। অন্যদিকে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী হারুনর রশীদসহ ৬ সাক্ষীর শাস্তি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার যুক্তিতর্কে বলেন, ‘বিদেশ থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের যে টাকা এসেছে তার একটি টাকাও আত্মসাৎ করেননি বিএনপি চেয়ারপার্সন। আইনানুযায়ী মামলা থেকে খালাস পাবার হকদার তিনি। যুক্তি উপস্থাপনে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামকে এ পি জি মোহাম্মদ আলী বলায় আদালতে মুচকি হাসলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বুধবার অষ্টম দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার পুনরায় অসমাপ্ত যুক্তিতর্কের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালত এ আদেশ প্রদান করেছেন। বেগম জিয়া বুধবার বেলা এগারোটা ৫২ মিনিটে আদালতে উপস্থিত হয়ে দুই মামলায় হাজিরা দেন। এরপর দুপুর ১২টার দিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার পক্ষে ৮ম দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তার যুক্তি উপস্থাপন শেষে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও যুক্তি উপস্থাপনের জন্য একই দিন ধার্য করা হয়েছে। বেলা ৩টা ১২ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়া আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন। এর আগে, ১৯ ডিসেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। এদিন রাষ্ট্রপক্ষ খালেদা জিয়াসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। এরপর ২০, ২১, ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর এবং ৩ ও ৪ জানুয়ারি খালেদার পক্ষে যুক্ত উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা। ৪ জানুয়ারি খালেদার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় ১০ ও ১১ জানুয়ারি পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। বিচারকের অসন্তুষ্টি ॥ এদিকে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আদালতে দেরিতে হাজির হওয়ায় বিচারক অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। বুধবার বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসন আদালত হাজিরা দিতে আসেন। খালেদা আদালতের আসার পর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান দুপুর বারোটায় আদালতের এজলাস কক্ষে বসেন। এসময় বিচারক খালেদার উদ্দেশে বলেন, এভাবে সময় নষ্ট করলে চলবে না। আপনার হাজিরা সময় ছিল সাড়ে ৯টা, কিন্তু এখন বাজে ১২টা। আগামীকাল থেকে সাড়ে ১০টায় কোর্টে হাজির থাকতে হবে। এই সময় খালেদার আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকের বাকবিত-া হয়। খালেদার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বিচারককে বলেন, রাস্তায় যানজট ছিল। তাই ম্যাডামের আসতে দেরি হয়েছে। তখন বিচারক খালেদার আইনজীবীকে বলেন, আপনারা তো সাড়ে ৯টায় আদালতে এসেছেন। উনার আসতে এতো দেরি হয় কেন? বিচারক বলেন, “এটা কোর্ট। এখানে এত দেরি করে আসলে তো হবে না। আমি কিন্তু এরপর দশটার মধ্যে এজলাসে উঠে যাব এবং বিকাল ৪ টা পর্যন্ত শুনানি নেব।” খালেদার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এ সময় বলেন, “আমরা মার্শাল ল কোর্ট দেখেছি, প্রধান বিচারপতির কোর্টও দেখেছি। এভাবে কোনো বিচারক কথা বলেন না। একদিন না হয় একটু দেরিই হয়েছে। আসামির বয়স, শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করা উচিত।” বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা এ সময় সমস্বরে তার কথায় সমর্থন জানাতে শুরু করেন। বিচারক তখন তাদের সতর্ক করে বলেন, এরকম চললে বিচার চালানো কঠিন হয়ে যাবে। খালেদার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এটা সামরিক আদালত না যে সঠিক সময় আদালতে হাজির হতে হবে। তখন বিচারক বলেন, আপনারা অষ্টম দিনের মত যুক্তি উপস্থাপন করছেন। আজকের মধ্যে আপনাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করতে হবে। ৬ সাক্ষীর শাস্তির আবেদন ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী হারুনর রশীদসহ ৬ সাক্ষীর শাস্তি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আবেদন করেন খালেদার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। যাদের বিরুদ্ধে শাস্তি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন- মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মাজেদ আলী ও আবদুল বারেক, সাবেক মুখ্য সচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত সচিব সৈয়দ জগলুল পাশা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার, বিনিযোগ বোর্ডের পরিচালক তৌহিদুর রহমান। খালেদা হাসলেন ॥ যুক্তি উপস্থাপনে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামকে এ পি জি মোহাম্মদ আলী বলায় আদালতে মুচকি হাসলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। যুক্তি উপস্থাপনের এক পর্যায় ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের কথা তুলে ধরেন। তিনি যুক্তিতে এ পি জে আব্দুল কালাম না বলে এ পি জে মোহাম্মদ আলী বলেন। এটা শুনে খালেদা জিয়া মুচকি হাসতে থাকেন। ওই সময় এজলাসে থাকা আইনজীবীরাও হাসতে থাকেন।
×