ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার নিয়োগ পরীক্ষা

প্রবেশপত্র ডাউনলোড না করায় লক্ষাধিক পরীক্ষা দিতে পারছে না

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

প্রবেশপত্র ডাউনলোড না করায় লক্ষাধিক পরীক্ষা দিতে পারছে না

রহিম শেখ ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত ৮ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পেতে আবেদন করেও সময়মতো প্রবেশপত্র ডাউনলোড না করায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না লক্ষাধিক আবেদনকারী। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর দেড় হাজারেরও বেশি পদের বিপরীতে আবেদন করেন প্রায় সোয়া তিন লাখ চাকরিপ্রার্থী। কিন্তু এই আবেদনকারীদের মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারেননি এক লাখেরও বেশি। প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে না পারা শত শত আবেদনকারী প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংকে ধর্ণা দিলেও সবাইকে ফিরতে হচ্ছে হতাশ হয়ে। ব্যাংকার সিলেকশন কমিটি বলছে, যারা প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারেননি কোনভাবেই তাদের আর প্রবেশপত্র সরবরাহের সুযোগ নেই। এদিকে আগামী ১২ জানুয়ারিই রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৬৯২ পদের পরীক্ষা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব মোঃ মোশারফ হোসেন খান। সোনালী, রূপালী ও জনতা ব্যাংকের পদগুলো ছাড়াই এ পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। জানা গেছে, সমন্বিতভাবে সোনালী ব্যাংকে ৫২৭, জনতা ব্যাংকে ১৬১, রূপালী ব্যাংকে ২৮৩, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ৩৯, কৃষি ব্যাংকে ৩৫১, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ২৩১, বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশনে ১ এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশনের ৭০টিসহ মোট ১ হাজার ৬৬৩ পদে নিয়োগ দিতে গত ২৩ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি (বিএসসি)। এসব পদে অনলাইনে আবেদন করেন ৩ লাখ ২৬ হাজার ৬৭০ জন চাকরিপ্রার্থী। পরে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য বিবেচিতদের বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে ১৩ দিনের সময় দিয়ে গত ১৯ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি দেয় বিএসসি। ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, নির্ধারিত সময়ের পর প্রার্থীদের প্রবেশপত্র সংগ্রহের আর সুযোগ থাকবে না। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে মোট আবেদনকারীদের মধ্যে ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭০ জন প্রার্থী প্রবেশপত্র তোলেননি; যা মোট আবেদনকারীর এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে না পারাদের কেউ কেউ বলছেন, বিএসসির পক্ষ থেকে মোবাইলে কোন এসএমএস না দেয়ায় সময়মতো খবর জানতে পারেননি। তাছাড়া ব্যক্তিগত কম্পিউটার বা স্মার্টফোন না থাকায় তারা নির্ধারিত সময়ে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারেননি। কেউ কেউ আবার ডাউনলোড করেও সফটকপি বা প্রিন্ট করা কপি হারিয়ে ফেলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম সময়মতো প্রবেশপত্র তুলতে না পারায় মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যান। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়ে দেয়, নতুন করে আর প্রবেশপত্র তোলার সুযোগ নেই। শরিফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, কোন এসএমএস না পাওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ঝামেলার কারণে বাংলাদেশে ব্যাংকের ওয়েবসাইট ফলো করতে পারিনি। তাই আবেদন করেও নির্ধারিত সময়ে আমি প্রবেশপত্র তুলতে পারিনি। এজন্য সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে আমাকে জানানো হয়েছে নতুন করে কাউকে প্রবেশপত্র দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আমার মতো অনেকেই এসেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। সবার কথা বিবেচনা করে বিএসসির উচিত নতুন করে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করার সুযোগ দেয়া। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী তানিম ইশতিয়াক জানিয়েছেন, আমার পরিচিত অনেকেই তুলেছিল। কিন্তু কেউ কেউ প্রিন্ট করা কপি হারিয়ে ফেলেছে। পরে আর সফটকপি খুঁজে পায়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল আমিন খুরশেদ বলেন, ব্যক্তিগত কিছু ঝামেলার কারণে নেটে আসা হয়নি। যতদূর জানি ওয়েবসাইটে খুব বেশি দিন প্রবেশপত্র তোলার সুযোগ রাখা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যসচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোঃ মোশারফ হোসেন খান জনকণ্ঠকে বলেন, অন্তত ৭টি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং আটটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে জানানোর পরেও যারা প্রবেশপত্র তুলতে পারেননি আমার মনে হয় তারা চাকরির বিষয়ে আন্তরিক নয়। তাই নতুন করে কাউকে প্রবেশপত্র দেয়ার সুযোগ নেই বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি। পরীক্ষার্থীদের কোন রকম মেসেজ দেয়া হয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। এদিকে স্থগিত হওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের পরীক্ষা বাদে অন্য পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা ১২ জানুয়ারি যথাসময়ে হবে বলে জানান মোশাররফ হোসেন খান। মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে কমিটির সদস্যসচিব বলেন, এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই, পরীক্ষা যথাসময়েই হবে। এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি আজকের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। মোশাররফ হোসেন বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে ৫২৭টি, জনতা ব্যাংক লিমিটেডে ১৬১টি, রূপালী ব্যাংক লিমিটেডে ২৮৩টিসহ মোট ৯৭১ পদের নিয়োগ স্থগিত থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডে ৩৯, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ৩৫১, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ২৩১, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনে ১ ও ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশে (আইসিবি) ৭০টি পদসহ মোট ৬৯২ পদের নিয়োগ পরীক্ষা হবেই। তিনি বলেন, আমরা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলছি। যাতে জটিলতা এড়িয়ে আরও নিয়োগ দেয়া যায়, সেই চেষ্টা করছি। এর আগে গত রবিবার জনতা, সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম গ্রহণ না করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই তিন ব্যাংকের নিয়োগ সংক্রান্ত ২০১৭ সালের সার্কুলার কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ২০১৭ সালের সার্কুলারের পরীক্ষার পূর্বে কেন ২০১৬ সালের সার্কুলারের পরীক্ষা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রবিবার রুলসহ এ আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এর ফলে ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আট ব্যাংকের মধ্যে ওই তিন ব্যাংকের পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। এদিকে সোনালী, রূপালী ও জনতা ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার পর বাকি পাঁচ ব্যাংকের পরীক্ষা স্থগিত করে সমন্বিতভাবে পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছে সাধারণ পরীক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই মানববন্ধন হয়। এর আগে সকালে শাহবাগের জাতীয় গণগ্রন্থগার থেকে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থগারের সামনে আসে। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বেলা ১১টার দিকে মানববন্ধন করে। পরে ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্য আবারও মানববন্ধন করে তারা। রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধনে শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির বরাবর স্মারকলিপি দিতে রওনা দেয় কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ সময় তাদের হাতে ‘দাবি মোদের একটাই/ সমন্বিত পরীক্ষা চাই; ‘এক দফা এক দাবি, সমন্বিত পরীক্ষা নিতে হবে’, ‘সমন্বিত পরীক্ষা চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
×