ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব তাবলিগের আমিরকে ঘিরে এজতেমা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

বিশ্ব তাবলিগের আমিরকে ঘিরে এজতেমা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্ব তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা সা’দ কান্ধলভির আসন্ন বিশ্ব এজতেমায় যোগদানকে কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিভিন্ন দেশ। তাকে আসন্ন বিশ্ব এজতেমায় যোগ দিতে না দিলে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে এজতেমা সরিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছে। এদিকে বিশ্ব এজতেমা বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নিতে পাকিস্তানের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্র জানায়, ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের (প্রধান কেন্দ্র) মাওলানা সা’দ কান্ধলভি বর্তমানে তাবলিগ জামাতের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে মাওলানা সা’দের গত বছর দেয়া একটি বক্তব্য ঘিরে বিভিন্ন দেশের তাবলিগ জামাত তার পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আসন্ন বিশ্ব এজতেমায় তার যোগদান নিয়ে এখন দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশের তাবলিগ জামাত। বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়া তাবলিগ জামাতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মাওলানা সা’দকে বাংলাদেশের বিশ্ব এজতেমায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া না হলে, তারা বাংলাদেশ থেকে বিশ্ব এজতেমা মালয়েশিয়ায় সরিয়ে নেবে। এদিকে মাওলানা সা’দের বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য ইন্দোনেশিয়ার তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়ে তাকে বাংলাদেশে আসতে না দেয়ার অনুরোধ করেছে। আর দক্ষিণ আফ্রিকার তাবলিগ জামাত মাওলানা সা’দের ঢাকায় আসা নিয়ে একটি শান্তিমূলক সমাধান চেয়ে চিঠি দিয়েছে। মাওলানা সা’দকে আসন্ন বিশ্ব এজতেমায় অংশগ্রহণ নিয়ে বাংলাদেশের মধ্যেই দুটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। মাওলানা সা’দের ঢাকায় আসা ঠেকাতে মাঠে নেমেছে হেফাজতে ইসলাম। আর মাওলানা সা’দের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাবলিগ জামাতের একটি অংশ। মাওলানা সা’দের বাংলাদেশের এজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য পক্ষে বিপক্ষে সম্প্রতি কাকরাইল মসজিদে হাতাহাতিও হয়েছে। বিষয়টি সরকারের উচ্চমহলেও গেছে। এখন উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা চলছে। এদিকে তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেয়ার হুমকির পেছনে পাকিস্তানের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশের তাবলিগ জামাত ও বিশ্ব এজতেমার মুরব্বি সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, গাজীপুরে টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমায় ভারতের মাওলানা সা’দ সাহেব যদি না আসেন, তবে এটা বিশ্ব এজতেমা থাকবে না। এটা হবে আমাদের স্থানীয় এজতেমা, পাকিস্তানী ম্যানেজড এজতেমা। এটা হবে বাংলাদেশী এজতেমা, এটা বিশ্ব এজতেমা হবে না। কারণ অনেক বিদেশী ও দেশের মুসল্লিরা জানিয়েছেন, সা’দ সাহেব যদি বিশ্ব এজতেমায় অংশ না নিতে পারেন তবে তারা এ এজতেমায় অংশ নেবেন না। এটা পাকিস্তানীদের একটা চাল। এ ব্যাপারে তিনি সরকার তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছেন। এছাড়া বিদেশী মুসল্লিদের জন্য অন এ্যারাইভাল ভিসার মেয়াদ ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। ড. রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, বিশ্ব এজতেমা নিয়ে চক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে বিশ্ব এজতেমা সরিয়ে নিতে পাকিস্তানীরা আমাদের দেশের একটি পক্ষকে ইন্ধন দিচ্ছে। মাওলানা সা’দের পক্ষে মালয়েশিয়া তাবলিগ জামাতের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যেভাবে আমরা মাওলানা সা’দকে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও মূল্যায়ন করছি, বাংলাদেশ সরকারও সেটা করবে বলে আমরা আশা করছি। কারণ, তিনি এবং তার পূর্বসূরিরা নিজামুদ্দিন থেকে এসেছেন যারা এর আগে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। টঙ্গী বিশ্ব এজতেমার প্রস্তুতি ও আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্দেশ্য করে এতে বলা হয়, এই কর্মকা- পুনরুজ্জীবনে আল্লাহ নিজামুদ্দিনকে জন্মস্থান হিসেবে পছন্দ করেছেন। সেখান থেকেই বিশ্বের আনাচে-কানাচে এই কাজ ছড়িয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে নিজামুদ্দিনের মুরব্বিরা অত্যন্ত সম্মানিত হয়ে আসছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা দোয়া করি, এই দ্বীনি সমাবেশের মূল্যবোধ ও ঐতিহ্য মেনে এই এজতেমায় নিজামুদ্দিনের প্রতিনিধিদের থেকে আমির ও ফায়সাল অনুমোদনে আল্লাহ আয়োজকদের পথনির্দেশনা দেবেন। যদি আয়োজকরা নিজামুদ্দিনের প্রতিনিধিদের থেকে আমির ও ফায়সাল নির্বাচনের মূল্যবোধ ও ঐতিহ্য মানতে ব্যর্থ হন, তাহলে আমরা মালয়েশিয়া তাবলিগের শূরা বাংলাদেশের পরিবর্তে বিশ্ব এজতেমা আয়োজনে মালয়েশিয়াকে প্রস্তাব করতে একমত হয়েছি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের মারকাজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ। ১৯৬৭ সাল থেকে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব এজতেমা। এ এজতেমায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুসলমান ছাড়াও বিশ্বেও প্রায় ৫০টি দেশ থেকে তাবলিগের অনুসারী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অংশ নেন। আগামী ১২ জানুয়ারি ও ১৯ জানুয়ারি দুই দফায় তিন দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দফায় ১৪ জানুয়ারি ও দ্বিতীয় দফায় ২১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। সা’দ এর উপস্থিতি অনিশ্চিত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা টঙ্গী, জানান, শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমা ময়দানের ৯৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী দু’দিনের মধ্যে ৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন এজতেমার শীর্ষস্থানীয় মুরব্বিরা। মঙ্গলবার বিকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল মাঠ পরিদর্শনকালে জানান, মাঠের প্রস্তুতি কাজ প্রায় সম্পন্ন। তিনি জানান, লাখ লাখ মুসল্লিদের সেবা দিতে সরকারের বিভিন্ন সেবা সংস্থাসমূহ রাত-দিন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব এজতেমার জিম্মদার প্রকৌশলী গিয়াসউদ্দিন আহম্মেদ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে জানান, সম্প্রতি তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বিদের মধ্যে একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ব তাবলিগ মারকাজের মজলিসে শূরার প্রধান মাওলানা হযরতজী হুজুর সা’দ এবারের বিশ্ব এজতেমায় যোগ দেবেন কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে তাবলিগ মুরব্বিদের শীর্ষ পর্যায়ে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। বৈঠকের পর বৈঠক করেও কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছেন না মাওলানা সা’দ এর উপস্থিতি নিশ্চিত করা নিয়ে। জিম্মাদার গিয়াসউদ্দিন আরও জানান, এসব ঘটনায় বিশ্ব এজতেমার বিশাল আয়োজনে কোন প্রভাব পড়বে না বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ ও জেলা থেকে নির্ধারিত যে জামাতগুলো বিশ্ব এজতেমা ময়দানে যোগদান করবেন সে জামাতগুলো টঙ্গীর পথে রয়েছে। ইতোমধ্যে বহু দেশের তাবলিগ অনুসারী মেহমান বাংলাদেশে এসে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে অবস্থান করছেন।
×