ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে পাস হলো বহুল আলোচিত মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন বিল

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

সংসদে পাস হলো বহুল আলোচিত মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন বিল

সংসদ রিপোর্টার ॥ বহুল আলোচিত মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পাস হয়েছে। পাসকৃত বিলে বলা হয়েছে, কোনও হাসপাতাল সরকারের অনুমতি ছাড়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করতে পারবে না। এই আইন কার্যকর হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে এই চিকিৎসা সেবা দিতে অনুমতির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। তবে সরকারী হাসপাতালের বিশেষায়িত ইউনিটে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের ক্ষেত্রে অনুমতি লাগবে না। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার রাতে সংসদ অধিবেশনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) নামক বিলটি উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। তবে বিরোধীদলের কয়েকজন সংসদ সদস্য বিলটির ওপর জনমত যাচাই-বাছাই এবং কিছু সংশোধনী প্রস্তাব আনলেও তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এছাড়া মঙ্গলবার সংসদে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বিল, ২০১৮ নামের নতুন একটি বিল উত্থাপন করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন বিলটি পাসের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আইনটি পাস হওয়ার ফলে মানুষ দেশেই মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করার সুযোগ পাবে। আগে কিডনিসহ নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের জন্য বিদেশে গিয়ে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করতে হত। প্রতারণার শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব যাচ্ছিল। এই আইন পাশের মাধ্যমে দেশেই মানুষ কমমূল্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের সুবিধা পাবেন। তবে কেউ অপরাধ করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। পাস হওয়া আইনে বলা হয়েছে, সুস্থ ও স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির চোখ ছাড়া অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিযুক্তির কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যাঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা না থাকলে তিনি নিকটাত্মীয়কে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন। তবে চোখ ও অস্থিমজ্জা সংযোজন ও প্রতিস্থাপনে নিকটাত্মীয় হওয়ার প্রয়োজন হবে না। বিদ্যমান আইনে শুধু পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী এবং রক্তের সম্পর্কে সম্পর্কিত আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা এই ১২ জন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান ও গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়াও আইনে ‘নিকট আত্মীয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে পিতা-মাতা, পুত্র-কন্যা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী ও রক্ত সম্পর্কিত আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা, নানা-নানি, দাদা-দাদি, নাতি-নাতনি, আপন চাচাত-মামাত-ফুপাত-খালাত ভাই-বোনেরাও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান ও গ্রহণ করতে পারবেন। মৃত ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও অন্যের শরীরে সংযোজন করা যাবে। বিলে ‘অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে’র সংজ্ঞায় মানবদেহের কিডনি, হৃৎপি-, ফুসফুস, অন্ত্র, যকৃত, অগ্ন্যাশয়, অস্থি, অস্থিমজ্জা, চোখ, চর্ম ও টিস্যুসহ মানবদেহে সংযোজনযোগ্য যে কোন অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গকে বোঝানো হয়েছে। বিলে আত্মীয়ের মিথ্যা তথ্য দেয়াসহ আইন ভঙ্গের অপরাধে সাজার মেয়াদ কমলেও বাড়ানো হয়েছে জরিমানা। এতে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি নিকটাত্মীয় সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিলে বা মিথ্যা তথ্য দিতে উৎসাহিত বা প্ররোচিত করলে বা ভয় দেখালে অনধিক দুই বছরের সশ্রম কারাদ- বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ- দেয়া যাবে। আইনের অন্যান্য বিধান লঙ্ঘন করলে অথবা লঙ্ঘনে সহায়তা করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের সশ্রম কারাদ- বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ে দ-িত করা যাবে।
×