ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও শীতের তীব্রতা কমেনি

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও শীতের তীব্রতা কমেনি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও শীতের তীব্রতা কমেনি। কয়েক জেলার ওপর দিয়ে এখনও বয়ে যাচ্ছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে সোমবার যেখানে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস মঙ্গলবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। এদিকে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন রোগব্যাধি। শিশু এবং বৃদ্ধরাই এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে আরও ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, একদিনের ব্যবধানেই তাপমাত্রার উন্নতি হয়েছে। মঙ্গলবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এছাড়া রাজধানীর ঢাকায় আগের দিনের চেয়ে তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী পর্যন্ত বেড়েছে। এদিন ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে তাপমাত্রা বাড়লেও প্রচ- শৈত্যপ্রবাহের কারণে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। তারা জানিয়েছে আজ থেকে শীত পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হতে পারে। তবে সার্বিকভাবে জানুয়ারি মাসজুড়েই শীতের অনুভূতি থাকবে। তাদের দেয়া হিসাব মতে গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে এখনও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শ্রীমঙ্গল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিদ্যমান শৈত্যপ্রবাহ পরিস্থিতি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে অব্যাহত থাকতে পারে উল্লেখ করা হয়েছে। মঙ্গলবার উত্তরের জেলাসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকায় তাপমাত্রা অস্বাভাবিক পর্যায়ে অবস্থান করছিল। তাপমাত্রা অস্বাভাবিক পর্যায়ে অবস্থানের কারণে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা এবং বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। এলাকার খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ শীতে কাহিল হয়ে পড়ছে। গরম কাপড়ের অভাবে শীত নিবরণ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষের একটু উত্তাপের জন্য আগুনের কু-লীর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। খটকটা জ্বালিয়ে তারা এই কুণ্ডলী তৈরি করছে। এদিকে তীব্র শীতের কারণে সোমবার পর্যন্ত রংপুরে ১৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ফলে শীতজনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষায় রংপুর সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে ৮৫টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। কুড়িগ্রামে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে এখনও স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জে শীতের হাত থেকে একটু উত্তাপ পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে ডাবুল শেখ নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ২.৬ ডিগ্রী থেকে বেড়ে মঙ্গলবার ৫.২ পৌঁছেছে। নীলফামারীতে শীতের তীব্রতা অব্যাহত রয়েছে। গাইবান্ধায় কনকনে ঠা-ায় দরিদ্র মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। রংপুর ॥ উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। হিমেল হাওয়ার সঙ্গে কনকনে শীতের কারণে এ অঞ্চলের প্রায় ৩০ লাখ হতদরিদ্র শীতার্ত মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। শীত মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসনের প্রস্তুতি খুব সামান্য। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে সবচেয়ে বেশি। সে সাথে বাড়ছে শীতজনিত রোগবালাই। রংপুরে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার পর্যন্ত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ১৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের রক্ষায় রংপুর সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে জেলায় ৮৫টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। তিস্তার তিরবর্তী তিন উপজেলার দেড় শতাধিক চরে বসবাসকারী হাজারো ছিন্নমূল মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন। কুড়িগ্রাম ॥ অব্যাহত শৈতপ্রবাহে কুড়িগ্রামের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনের টানা তীব্র শীতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। তীব্র ঠা-া আর ঘন কুয়াশার ফলে কাজে বের হতে পারছে না শ্রমজীবী মানুষ। দেরিতে কাজে যাওয়ার ফলে মজুরি কমে যাচ্ছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ১ শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে এই শীতের সময় বিভিন্ন রোগে ১৪ জন মারা গেল। তবে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শীতজনিত রোগে নয় বিভিন্ন রোগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে তারা মারা যায়। কনকনে ঠা-ার ফলে বয়স্ক আর শিশুরা অল্পতেই কাহিল হয়ে পড়ছে। দেখা দিচ্ছে নানান রোগব্যাধি। নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ মোটা কাপড়েও ঠেকাতে পারছে না হিম ঠা-া। মানুষকে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে। নীলফামারী ॥ উত্তরী হিমবাতাস অব্যাহত ছিল। দিনের বেলা রোদের ঝিলিক পাওয়া গেলেও বিকেল হতেই শুরু হয় ঠা-ার তীব্রতা। ভয়াবহ ঠা-া আবহাওয়া বিরাজ করায় এখানকার জনজীবনে নেমেছে চরম দুর্ভোগ। মানুষের সঙ্গে প্রাণীকুলও রক্ষা পাচ্ছে না এই দুর্ভোগ থেকে। হাড়কাঁপানো কনকনে ঠা-া ও হিমেল হাওয়ায় সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এখানকার গ্রাম-গঞ্জে ঠা-ায় কাতর মানুষজন খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণ পাওয়ার চেষ্টা করছেন। ফুটপাথের পুরনো মোটা কাপড়ের দোকানে গ্রাম-গঞ্জের এসব মানুষের ভিড়ও দেখা যাচ্ছে। এদিকে জেলার হাসপাতালসহ উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে ঠা-াজনিত রোগীর সংখ্যা। সিভিল সার্জন ডাঃ রণজিৎ কুমার বর্মন জানান মেডিক্যাল কাজ করছে গ্রামে গ্রামে। এছাড়া হাসপাতালে রোগীদের বিশেষভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। রাজশাহী ॥ টানা তিনদিন ধরে অব্যাহত তীব্র শৈত্যপ্রবাহের পর তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও রাজশাহী অঞ্চলে কমেনি শীতের তীব্রতা। টানা শীতে রীতিমতো কাবু হয়ে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলসহ রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল ও কর্মজীবী মানুষ। হাড়কাঁপানো শীতের তীব্রতায় কাতর হয়ে পড়েছেন কর্মজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ। টানা শৈত্যপ্রবাহে মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা ও কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। উত্তরের হিমেল হাওয়া বয়ে যাওয়ার কারণে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। গাইবান্ধা ॥ কয়েকদিনের শৈত্যপ্রবাহ ও কনকনে ঠা-ার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষরা। তীব্র ঠা-ার সঙ্গে কুয়াশার প্রকোপও বেড়ে গেছে। ফলে শস্যে ক্ষেতের শস্য ফুল ঝড়ে পড়ছে এবং শীতকালীন নানা সবজিগুলোতে ছত্রাক রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এছাড়া কনকনে ঠা-ায় বৃদ্ধ ও শিশুদের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। দুপুর বেলা সূর্যের দেখা মিললেও তাতে কোন উত্তাপ না থাকায় শীতের প্রকোপ কমছে না। প্রচ- ঠা-ার কারণে কৃষকরা ক্ষেতে নামতে পারছে না। ফলে ইরি-বোরো চাষ পিছিয়ে পড়ায় তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে শীতকালীন নানা সবজি, বোরো বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। পঞ্চগড় ॥ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তাপাঙ্ক ৫.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছিল। সোমবারের চেয়ে একটু তাপাঙ্ক বাড়লেও দেশের মধ্যে সর্বনি¤œ তাপাঙ্ক ছিল। ফলে গোটা জেলাজুড়ে জেঁকে বসেছে কনকনে শীত, বিপর্যস্ত জনজীবন। সকাল থেকে বইছে হিমেল হাওয়া। ঘন কুয়াশা পড়েছে। সিরাজগঞ্জ ॥ উল্লাপাড়ায় প্রচ- শীতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ডাবলু সেখ (৩২) নামে এক ট্রলি চালকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত ডাবলু সেখ উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের ছানোয়ার শেখের ছেলে। কলাপাড়া ॥ শেষ পৌষের প্রচ- হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে সাগরপাড়ের উপকূলীয় জনপদ কলাপাড়া। কনকনে শীতের সঙ্গে বইছে ১০-১২ কিমি গতির হিমশীতল বাতাস। জনজীবনে বিপর্যস্ত অবস্থা বিরাজ করছে। খেটে খাওয়া হাইলা-কামলা শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন বিপাকে। শৈত্যপ্রবাহে কমে গেছে কুয়াকাটার পর্যটক। অনেক হোটেলের আগাম বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগাক্রন্ত মানুষ। যার মধ্যে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের কষ্ট যেন বেশি। উপজেলা প্রশাসন শীতার্ত দরিদ্র মানুষকে কিছু কম্বল দিয়েছেন।
×