ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র ও দুই সিটির নতুন ৩৬ ওয়ার্ডের ভোট ২৬ ফেব্রুয়ারি

ঢাকা উত্তরের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

ঢাকা উত্তরের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং দুই সিটির নবগঠিত ৩৬ ওয়ার্ডের নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগামী ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র ২১ ও ২২ জনুয়ারি বাছাই করা হবে। তফসিলে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন রাখা হয়েছে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের কথা আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী মেয়র পদে ভোট হবে দলীয় ভিত্তিতে। কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সিইসি কেএম নুরুল হুদা এই তফসিল ঘোষণা করেন। আইনগত জটিলতা মাথায় নিয়েই মেয়র পদে উপনির্বাচনের পাশাপাশি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী কোন উপনির্বাচনে বাকি মেয়াদের জন্য ভোটগ্রহণ করা হয়। সাধারণ নির্বাচনে পুরো মেয়াদের জন্য ভোটগ্রহণ করা হয়। কিন্তু মাঝপথে এসে ঘোষণা করা তফসিলে ৩৬ ওয়ার্ডের নির্বাচনের মেয়াদ কতদিনের জন্য হবে আইনে তা স্পষ্ট নয়। যদিও বাকি মেয়াদে নির্বাচনের জন্য ৩৬ ওয়ার্ডেরও তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ইসি জানিয়েছে নির্বাচনের আইনগত কোন জটিলতা নেই। তফসিল ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে ইসি আপোসহীন। এছাড়া নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আইনী কোন বাধা নেই। রাজধানীতে এ নির্বাচন করা ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ। এ নির্বাচনকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে দেখবে ইসি। সবাই নির্বাচনে অংশ নেবে এবং শেষ পর্যন্ত থাকবে। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করার জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কোন আপোস করা হবে না। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় সিসি ক্যামেরা থাকবে। পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। সরকার, ভোটার, প্রার্থী সবাই মিলে সহায়তা করলে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। আশা করি সবাই মিলে সহায়তা করবেন। নির্বাচনে যাদের প্রচারের সুযোগ রয়েছে, তারা সবাই প্রচারে অংশ নিতে পারবেন। এ বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে কারও প্রতি কোন বাধা নেই। যারা প্রচারে অংশ নেবেন, তাদের সবাইকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করা হবে। নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, দুই সিটি কর্পোরেশনের দু’টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা রয়েছে। এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন করব। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সবাই নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সবাইকে আহ্বান জানাবো, সবাই ভোটকেন্দ্রে আসুন, ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন উল্লেখ করেন। উত্তরের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ইসির যুগ্ম সচিব (চলতি দায়িত্ব) আবুল কাসেম ও ১২ সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে, দক্ষিণের ১৮টি ওয়ার্ডের নির্বাচনের জন্য ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মন্ড কে রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ৬ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের একটি করে ভোট কেন্দ্রে ইসির নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি ডিজিটাইজড ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকার উত্তর-দক্ষিণের কয়েকটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচনে জন্য মোট ভোটার রয়েছে ২৯ লাখ ৪৮ হাজার ৫১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ২২ হাজার ৭২৬ এবং নারী ভোটার ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৭৮৪। এছাড়া উত্তরের ১৮ ওয়ার্ডে ভোটার ৫ লাখ ৭১ হাজার ৬৮৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫। নারী ভোটার ২ লাখ ৮২ হাজার ৬৪৯। দক্ষিণের ১৮ ওয়ার্ডে নির্বাচনের জন্য মোট ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪৫ হাজার ৪১৬। নারী ভোটার ২ লাখ ৩২ হাজার ৯৪। উত্তরের ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ৩৪৯ এবং ভোটকক্ষ রয়েছে ৭ হাজার ৫১৬টি। দক্ষিণের নির্বাচনের জন্য ভোট কেন্দ্র রয়েছে ২৩৩টি এবং কক্ষ রয়েছে ১ হাজার ২৪০টি। উল্লেখ্য, গত ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে সর্বশেষ ভোট অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের সমর্থনে ওই নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক। প্রায় দুই বছর ধরে ওই দায়িত্ব পালনের মধ্যেই চলতি বছর জুলাইয়ে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বছর ৩০ নবেম্বর তার মৃত্যু হয় তার। ফলে স্থানীয় সরকার বিভাগ ১ ডিসেম্বর থেকে মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করে। আইন অনুযায়ী পদ শূন্য ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার এ সিটি নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করল।
×