ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ত্রিপুরা পাড়ার শিশুরা

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ত্রিপুরা পাড়ার শিশুরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মীরসরাই, চট্টগ্রাম ॥ বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের নলখোঁ ত্রিপুরাপাড়ার বিদ্যালয় গমন উপযোগী শিশু-কিশোররা। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এই পাড়ায় ৭০০ জনের অধিক মানুষের বসবাস থাকলেও সাড়ে চার কিলোমিটারের মধ্যে নেই কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাই বাধ্য হয়ে সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে আগ্রহী কিছুসংখ্যক অভিভাবক তাদের শিশুদের পাঠায় ৫ কিলোমিটার দূরে অলিনগর বি এম কে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু কোমলমতি শিশুদের প্রতিদিন ২ কিলোমিটার সংকীর্ণ দুর্গম উঁচু-নিচু পাহাড়ি রাস্তায় হেঁটে এবং বাকি পথ বাস অথবা সিএনজি অটোরিক্সায় চড়ে সময়মতো স্কুলে পৌঁছানো দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া প্রতিদিন তাদের দরিদ্র অভিভাবকদের পক্ষে গাড়ি ভাড়া ৩০-৪০ টাকা দেয়া সম্ভব হয়না বলে তারা সপ্তাহে স্কুলে যায় বড়জোর দুই থেকে তিন দিন। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে এসব শিশুদের স্কুলে যাওয়া প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। এক পর্যায়ে এই ত্রিপুরাপাড়ার স্কুলগামী শিশুরা দুর্গম পথে যাতায়াত, দূরত্ব ও চরম দরিদ্রতার কারণে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকেই ঝরে পড়ছে। মৌলিক এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে তারা স্কুলে যাওয়ার বয়সেই এখন নিয়োজিত হচ্ছে তাদের পূর্বপুরুষের আদিম পেশায়। সরজমিনে নলখোঁ ত্রিপুরাপাড়ায় গিয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়, এই পাড়ায় সাতটি ছোট বড় পাহাড়ের উপর ১০০টি ত্রিপুরা পরিবারের বসবাস। তন্মধ্যে ১০টি পরিবার খ্রিষ্টান ধর্ম পালন করে এবং বাকিরা সনাতন ধর্মাবলম্বী। বর্তমানে এই পাড়ায় স্কুল গমন উপযোগী শিশু-কিশোর আছে এমন পরিবারের সংখ্যা ৫৬টি। এই পরিবারগুলোর মধ্যে ৫ থেকে ১২ বছর বয়সি শিশু-কিশোরের সংখ্যা ১১৪ জন। তাদের মধ্যে ৭৩ ছেলে এবং ৪১ জন মেয়ে। এই শিশু-কিশোরদের মধ্যে বর্তমানে স্কুলমুখী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৫১ জন। এছাড়া এই পাড়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানির অভাব, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সর্ম্পকে ধারণার অভাবসহ নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান। নলখোঁ ত্রিপুরাপাড়ার অধিবাসী রবার্ট রতট ত্রিপুরা ও পাড়াপ্রধান সাধন ত্রিপুরা বলেন, নলখোঁ ত্রিপুরাপাড়ার জনগোষ্ঠীদের অধিকাংশই নিরক্ষর হওয়ায় বর্তমান সমাজে তাদের পদে পদে নানারকম বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়। তাই আমরা চাই আমাদের সন্তানরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হোক। কষ্ট করে হলেও আমরা সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে চাই। কিন্তু এখানে কোন স্কুল না থাকায় সন্তানরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই পাড়ায় প্রায় ২০০ জন ভোটার রয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা এখানে এসে নানারকম প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আর তাদের দেখা মিলে না। আমরা চাই আমাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে, তাই এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হোক। স্কুলের জন্য জমি দেয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। এ ব্যাপারে মীরসরাই উপজেলা শিক্ষা অফিসার গোলাম রহমান চৌধুরী বলেন, ওই এলাকায় কোন বিত্তবান শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিগত উদ্যোগে যদি স্কুলের কার্যক্রম শুরু করে তাহলে আমি এর প্রশাসনিক বিষয়টি দেখব এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করব। হঠাৎ ওই এলাকায় সরকারী উদ্যোগে কোন স্কুল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
×