ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ ॥ তীব্র সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রী

মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনে মে ব্যর্থ

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনে মে ব্যর্থ

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনে নতুন কিছু মুখকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিতে গিয়ে একজন মন্ত্রীর পদত্যাগের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি তালগোল পাকিয়ে ফেলার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। খবর এএফপি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট। পদত্যাগী শিক্ষামন্ত্রী জাস্টিন গ্রীনিংকে টেরেসা মে গণপূর্ত ও পেনশন সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ে বদলি করার প্রস্তাব করায় গ্রীনিং তাতে অসম্মত হয়ে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাকে মন্ত্রিসভায় ধরে রাখার জন্য টেরেসা ও অন্য সহযোগিরা বেশ সচেষ্ট ছিলেন, কিন্তু তিন ঘণ্টাব্যাপী যুক্তিতর্ক ও বাগবিত-ার পর ক্ষুব্ধ জাস্টিন রাত আটটার দিকে প্রধানমন্ত্রী ভবন ত্যাগ করেন। জাস্টিনকে নিয়ে গত নবেম্বর থেকে এ পর্যন্ত টেরেসা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগকারী মন্ত্রীর সংখ্যা চার-এ গিয়ে দাঁড়াল। তার আগে টেরেসার ডেপুটি হিসেবে কর্মরত মন্ত্রী ডেমিয়েন গ্রিন তার কম্পিউটারে পর্ণোগ্রাফি সংরক্ষণের অভিযোগে পদত্যাগ করেন। গত নবেম্বরে নারী ঘটিত কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা ও ত্রাণমন্ত্রীও পদত্যাগ করেন। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে উত্তর আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্ট সদস্যদের সমর্থনে সরকার গঠন করে টেরেস অভ্যন্তরীণ ও বিদেশ নীতিতে খুব জোরের সঙ্গে তার ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হচ্ছিলেন না। তার ওপর বিরোধী লেবার দলনেতা জেরেমি করবিনের সমালোচনা তো ছিলই। করবিন বলেছিলেন, এই দুর্বল সরকার অচিরেই নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে এবং তখন লেবার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করবে। এ সরকার যে মোটেই দুর্বল নয় মন্ত্রিসভায় এখনও তার কর্তৃত্ব যথারীতি বহাল আছে এটি প্রমাণের জন্য এবং অনুগত কিছু পার্লামেন্ট সদস্যকে ঠাঁই করে দেয়ার লক্ষ্যে টেরেসা মে তার মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের জন্য সোমবারের বৈঠক ডাকেন। কিন্তু এই বৈঠকের ফলাফলে টেরেসা মে’র কোন প্রাপ্তি যোগ হয়নি বরং অধীনস্থ মন্ত্রীদের নিয়ন্ত্রণে তার ব্যর্থতা প্রকটভাবে উন্মোচিত হয়েছে যা ব্রিটিশ সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের মুখরোচক খবরে পরিণত হয়েছে। টাইমসের প্রথম পাতায় গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রিসভার পুনর্বিন্যাসকে শ্যামবোলিক (লজ্জাজনক) এবং ডেইলি টেলিগ্রাফ টেরেসার এই উদ্যোগকে ভোঁতা চুরির রাত্রি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। মন্ত্রণালয় পুনর্বণ্টনের প্রতিবাদে জান্টিন গ্রিনিং শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে গেলেও অধিকাংশ প্রভাবশালী মন্ত্রীই তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ছেড়ে অন্য কোন মন্ত্রণালয়ে যেতে রাজি হননি। এদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোরিস জনসন, অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আম্বাররাড এবং ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ডেভিসের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেরেমি হান্ট শুধু তাকে সরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা প্রতিহত করেননি বরং তার ক্ষমতার অতিরিক্ত কিছু দায়িত্ব বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন। এখন থেকে ব্রিটেনের এনএইচএস (ন্যাশনাল হেলথ সিস্টেম) ও সোশ্যাল কেয়ার বিভাগটিতে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একীভূত করে নিতে পারবেন। মন্ত্রিসভায় নিজের ক্ষমতা সুসংহত করতে গিয়ে টেরেসার দুর্বলতা এতো প্রকটভাবে প্রকাশিত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশ্লেষকদের অভিমত যে, একটি সংখ্যালঘু সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রভাবশালী মন্ত্রীদের ক্ষেপিয়ে দিয়ে টেরেসা মে তার প্রতিপক্ষ ও সমালোচকদের দল ভারি করার ঝুঁকি নিতে চাননি। এসব প্রভাবশালী মন্ত্রী যদি শিক্ষামন্ত্রী জাস্টিনের মতো একযোগে পদত্যাগ করতেনÑ তবে নিঃসন্দেহে তারা ব্যাকবেঞ্চার এমপিদের সঙ্গে মিলেমিশে তার প্রতিটি কজের সমালোচনা করতেন যা লেবার দলের হাতে একটি বড় অস্ত্র তুলে দেয়ার কাজ হতো। এছাড়া আগামী মার্চ মাসে ব্রেক্সিট নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবেÑ তাতে এ বিষয়ে অভিজ্ঞমন্ত্রী ডেভিড ডেভিসের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
×