ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রিপোর্টারের ডায়েরি

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

রিপোর্টারের ডায়েরি

এ্যাডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ডে একদিন ২২ ডিসেম্বর একটি স্মরণীয় দিন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয় সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়ক সংলগ্ন এ্যাডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ডে। শুধু দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেই নয়, প্রাণের টানে এ মিলনমেলায় যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও আসে অনেকে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে আনন্দ উৎসবের পাশাপাশি ব্যাচভিত্তিক বন্ধুদের আড্ডা। ক্ষণিকের জন্য হলেও মিলনের মোহনায় যেন স্মৃতির ক্যাম্পাসকে ফিরে পায় সবাই। আমরা ঢাকার বন্ধুরা একসঙ্গে বেলা সোয়া ১১টায় প্রবেশ করি এ্যাডভেঞ্জার ওয়ার্ল্ডে। প্রবেশ মুখেই দেখা হয় সিলেট, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লাসহ দেশ-বিদেশ থেকে আগত অনেক বন্ধু ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সিনিয়র-জুনিয়র ভাই-বোনদের সঙ্গে। দীর্ঘদিন পর প্রিয়জনদের কাছে পেয়ে কুশল বিনিময় করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পরে সবাই। ভেতরে প্রবেশ করেই ব্যাচভিত্তিক বন্ধুরা শুরু করে হৈচৈ। সবাই নিজ নিজ ব্যাচের বন্ধুদের ফিরে পেতে চিৎকার করে ডাকাডাকি শুরু করে এক জায়গায় জড়ো করতে থাকে। এদিকে মূল মঞ্চে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান চলতে থাকলেও কারোরই সেদিকে মনোযোগ নেই। সবাই নিজ নিজ ব্যাচের বন্ধুদের নিয়ে দল বেঁধে ঘোরাঘুরি ও ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সবাই মিলে কখনও বসে কখনও দাঁড়িয়ে আবার কখনও বা হাঁটতে হাঁটতেই ছবি তুলতে থাকে। এ সময় কে কাকে পেছনে ফেলে নিজেকে ক্যামেরার ফ্রেমের মধ্যে নিয়ে আসবে এ নিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। আবার কেউ সেলফি তুলেই বেশি আনন্দ উপভোগ করে। এবার সিলেটের পুনর্মিলনীতে অংশ নেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২ হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে আমাদের ২১তম ব্যাচের বন্ধুদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। প্রথমেই আমরা শতাধিক বন্ধু একত্রিত হয়ে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি বিভিন্ন স্পটে গ্রুপ ছবি তুলি। মূল মঞ্চের দূরে আমাদের ব্যাচের বন্ধুদের ছবি তোলা এবং আড্ডাবাজি চলে অবিরাম প্রায় ২ ঘণ্টা। এ কুশল বিনিময় ও আড্ডাবাজিতে যারা সরব ছিল তারা হলো চট্টগ্রামের বন্ধু জহির, বাবু, শাহেদ, মাহবুব, ইভা, শিখা, খারেস, মৃদুল, শ্যামল, স্বপন, সাঈদ, পারভীন, তাহমিনা, মোস্তাফা, বাসন্তী, জাহাঙ্গীর, ফারুক, লাকী, ইকবাল, সিলেটের বন্ধু শোয়েব, ফেরদৌস, হাফিজ, নীলুফা, রুনী, ইমরান, মিলি, চিনু, সলিম, জসিম, নাসরিন, সুপ্তি, মোহসীন, ইমতিয়াজ, জামসেদ, শাহজাহান, পুলিন, নিয়াজ, ঢাকার বন্ধু বশির, রঞ্জু, ফজলে, মাসুদ, শিপন, মিজান, শতদল, শিল্পী, মিনু, সাহীদ, রুবি, বেলি, আঞ্জু, কচি, জাহাঙ্গীর, আনিতা, নাসির, জীবন, জাকির, জসিমসহ অনেকে। মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিতে গিয়ে ভিড় দেখে পাগাড়ের পাদদেশে আড্ডা দিতে গিয়ে দেখা হয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বড় ভাই ইকবাল কবির, মঞ্জুর আলম শাহীন, মোকাদ্দেস আলী শাহীন, আবুল বাশার, মারুফ আহমেদ মনসুর, জয়ন্ত দাস, চেরি ইকবাল, সুপর্ণা দে, রতিনা জামানসহ অনেকের সঙ্গে। সিলেটের পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ ভাইকে সারাক্ষণই এদিক-সেদিক দৌড়ঝাঁপ করে সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করতে দেখা গেছে। মধ্যাহ্নভোজের সময় পরিচয় হয় আমাদের ২১ ব্যাচের বন্ধু ও সিলেট ক্লাবের সভাপতি শোয়েব ও পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মনিরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। মধ্যাহ্নভোজের পর আবার ‘আমরা একুশ’-এর সব বন্ধুরা মূল মঞ্চের পাশে সিঁড়িতে গিয়ে বসি। স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগের পাশাপাশি গল্পবাজির ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে ধারাবাহিক ছবি তোলা। তখনও বিরামহীনভাবে বিভিন্ন এ্যাঙ্গেলে বন্ধু ইউসুফ বাবুর সেলফি চলছেই। রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চললেও কুয়াশার কারণে ঠা-া অনুভূত হওয়ায় আমরা ক’জন বন্ধু রাত সাড়ে ৯টার মধ্যেই হলিগেইট হোটেলে ফিরে আসি। কিছুক্ষণ বিশ্রামের ও ডিনার শেষে রাত ১১টায় বন্ধু বশিরের ডাকে আমরা সবাই মিলিত হই হলিগেইট হোটেলের সম্মেলন কক্ষে। শুরু হয় রাতের ঘরোয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একের পর এক শিল্পী আরিফুল ইসলাম মিঠুর গাওয়া মন মাতানো গজলের সুর সবাইকে মাতোয়ারা করে দেয়। এ ছাড়া বন্ধু বশির ও শিল্পীর গাওয়া গানও সবার মন ছুঁয়ে যায়। রাত ৪টায় এ অনুষ্ঠান শেষে আমরা যে যার কক্ষে ফিরে যাই। শরীফুল ইসলাম বাউলদের মিলনমেলা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ ফোন পেলাম তপন দার কাছ থেকে। তপন দা অর্থাৎ তপন কুমার বসু প্রফুল্ল সিংহ আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি জানান, মাগুরায় শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী বাউল উৎসব। খবর পেয়ে মাগুরা শহরতলীতে যাই। সেখানে প্রয়াত বাউল সাধক ও গবেষক গোঁসাই মনোরঞ্জন বসুর ৪র্থ মৃত্যু বার্ষিকী স্মরণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রয়াত মনোরঞ্জন বসুর পুত্র অধ্যক্ষ তপন কুমার বসু এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। গিয়ে দেখি অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। লালন ও বাউল দর্শনের ওপর বক্তব্য অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বক্তব্য রাখেনÑ মাগুরা প্রফুল্ল সিংহ আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তপন কুমার বসু, অধ্যাপক গৌতম বসু, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক লিটন বরণ শিকদার, সবিতা বসু, ঝিনাইদহের কালচারাল অফিসার জহিরউদ্দিন, কেরামত সাঁইজি প্রমুখ। বাউল সাধক ও গবেষক গোঁসাই মনোরঞ্জন বসুর স্মরণে স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়, যেখানে তার সম্পর্কে নানা ধরনের লেখা রয়েছে। উৎসবে বাউল সঙ্গীত পরিবেশন করেন নূর আলী, তমাল তনু বসু, সিরাজ শাহ, অধির গোস্বামী, আভা রানী মিত্র, ফকরউদ্দিন প্রমুখ বাউল শিল্পী। তারা বাউল ও লালন শাহ্ এর নানা ধরনের গান গেয়ে উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করেন। আমিও একজন শ্রোতা হিসেবে বেশ কিছু গান শুনি। আধ্যাত্মিক গানগুলি উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে। উৎসবে কুষ্টিয়া মেহেরপুর, কুমিল্লা, মাগুরা. যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাংগা, নড়াইল, মেহেরপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ৫ শতাধিক লালান ও বাউল সাধক এবং শিল্পী অংশ নেন। তপন কুমার বসু জানানেল, সারা রাত ধরে গান চলবে। বুধবার বিকেলে ভোজের মাধ্যমে শেষ হয়েছে এই মহতী অনুষ্ঠান। বুধবার দুপুরে আবার দেখি অনুষ্ঠান চলছে। লালনের নানা ধরনের গান হচ্ছে। যা উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে। বাউল সাধক ও গবেষক গোঁসাই মনোরঞ্জন বসু লালন ও বাউল দর্শনের ওপর ব্যাপক গবেষণা করেছেন। যার জন্য বাউলরা আজও তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সঞ্জয় রায় চৌধুরী, মাগুরা
×