ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্লট নয় ফ্ল্যাট

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

প্লট নয় ফ্ল্যাট

একটি দেশের রাজধানী কতটা জনভারাক্রান্ত হতে পারে, অপরিকল্পিতভাবে সম্প্রসারিত হতে পারে সে ব্যাপারে সম্ভবত রেকর্ড করে ফেলেছে ঢাকা মহানগরী। করার ছিল অনেক কিছুই, পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়ে নানামুখী। তবু সেসব উদ্যোগে যথাযথ গতি আসেনি। অবশ্য বর্তমান সরকার সচেষ্ট হয়েছে এই শহরকে খাদের কিনার থেকে টেনে তোলার। আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হবে, একটি আধুনিক শহরের রূপ দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক বাস্তব পরিস্থিতির কারণেই ঢাকামুখী জনস্রোত কমানো যায়নি। দেশের নাগরিকদের ওপর কোন ধরনের জোরাজুরির অবকাশ নেই, তার স্বাধীন চলাচলে হস্তক্ষেপ করা চলে না। ফলস্বরূপ ঢাকা জনতার চাপে ভেঙ্গে পড়ার দশা হয়েছে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণই শুধু নয়, আরও কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হলে এমনিতেই ঢাকা কিছুটা হাল্কা হতে পারত। ইতোমধ্যে ঢাকার বাইরের মানুষ শহরের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে উঠেছে। তাদের আবাসন একটি বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। ঢাকার জমি তো আর বাড়ছে না। তাই যেটুকু জমি আছে তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার জরুরী। বর্তমান সরকার সচেতন বলেই ঢাকায় মানুষের আবাসন সহজ ও নিশ্চিত করার জন্য নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজধানীতে বসবাসকারী নাগরিকদের প্লট বরাদ্দ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে প্রায় ৮৫ হাজার ফ্ল্যাট তৈরির ঘোষণা দেয়া হয়েছে সম্প্রতি। সরকারের জনবান্ধব এই নীতি প্রশংসাযোগ্য। বলাবাহুল্য, সরকার গ্রামাঞ্চলেও মানুষের আধুনিক আবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ফ্ল্যাট তৈরির ব্যবস্থা নিয়েছে। স্বাধীনতার পর এতগুলো বছর কেটে গেলেও গ্রামাঞ্চলে এখনও পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আবাসন ও বাণিজ্যিক প্রয়োজন মেটাতে স্থাপনা গড়ে তোলার জন্য প্রতিদিন ২৩৫ হেক্টর কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। দেশে যে পরিমাণ কৃষি জমি রয়েছে তা প্রতি বছরই আশঙ্কাজনকভাবে কমে আসছে গ্রামাঞ্চলে কল-কারখানা কিংবা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কারণে। এতে ভবিষ্যতে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে। সরকার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন বলেই গ্রামে ১০ হাজার ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে সরকার রাজধানীতে বস্তিবাসীদের জন্যও ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে গ্রাম কিংবা শহর যেখানেই ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হোক না কেন ওইসব ফ্ল্যাটে বিদ্যুত ও পানির সংযোগ থাকা আবশ্যক। সেইসঙ্গে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও আধুনিক হতে হবে। অর্থাৎ আধুনিক আবাসনের যা যা শর্ত রয়েছে সেগুলো পূরণ করতে হবে। বহুতল ভবন নির্মাণের সময় বিজ্ঞানসম্মত বিধিমালা মেনে চলা এবং নির্মাণ শেষে রক্ষণাবেক্ষণÑ এসব শর্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ না করা হলে বিপদ ঘটার আশঙ্কা থেকে যাবে। উঁচু ভবনে ফ্ল্যাটবাড়িতে একসঙ্গে বহু লোক বসবাস করবে, তাই নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার আবশ্যকতা রয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো নির্মাণ পরবর্তী সময়ে ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখনও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি এসব ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় অনেক বহুতল ভবন থেকে যাচ্ছে ঝুঁকির মধ্যে। তৈরি বহুতল ভবনের সুরক্ষা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এখন সময়ের দাবি। স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার কাজটিও এইসঙ্গে এগিয়ে নেয়া চাই। আশা করা যায়, ঢাকাবাসীর জন্য পরিকল্পিত নতুন ৮৫ হাজার ফ্ল্যাট মহানগরীর আবাসন সমস্যা অনেকটাই মেটাবে।
×