স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টানা তিন জয়ে ট্রফি পুনরুদ্ধারের পর স্বাগতিক অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ বলেছিলেন, এবার ৫-০’তে চোখ তাদের। কিন্তু ‘বক্সিং ডে’র চতুর্থ টেস্ট ড্র হওয়ায় সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। তবে সিডনির শেষ দ্বৈরথেও ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিল অসিরা। ইনিংস ও ১২৩ রানের দাপুটে জয়ের মধ্য দিয়ে ৪-০’র স্মরণীয় এক সাফল্যে এ্যাশেজ শেষ করল স্মিথবাহিনী। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে নামা ইংলিশদের ইনিংস হার এড়াতেই শেষদিনে দরকার ছিল ২১০ রান। ৪২ রানে অপরাজিত জো রুট জনি বেয়ারস্টোকে সঙ্গে নিয়ে স্বপ্নটা ধারণ করছিলেন। কিন্তু পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে রাতটা হাসপাতালে কাটানো ইংল্যান্ড অধিনায়কের পক্ষে দলকে বেশিদূর টেনে নিতে পারেননি। সেটি আর তার পক্ষে সম্ভবও ছিল না। ১৮০ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা, প্রথম ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ছিল ৩৪৬/১০। অস্ট্রেলিয়া ৬৪৯/৭ (ডিক্লেঃ)। ৮ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন পেসার প্যাট কামিন্স। দুরন্ত ব্যাটিংয়ে সিরিজসেরা স্মিথ।
ড্র করতে হলে সফরকারীদের একমাত্র আশা ছিল রুটকে নিয়ে। ডায়রিয়া ও বমি নিয়ে হাসপাতালে রাত কাটানো অধিনায়ক মাঠে আসেন খেলা শুরুর কিছুক্ষণ আগে। দেরি হওয়ায় শুরুতে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি। জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে দিনের শুরু করেন মঈন আলী। দুজন প্রায় এক ঘণ্টা কাটিয়ে দিয়েছিলেন। মঈনকে (১৩) এলবিডব্লিউ করে জুটি ভাঙ্গেন নাথান লিয়ন। সিরিজে মঈনকে এ নিয়ে সাতবার আউট করলেন অস্ট্রেলিয়ান এ স্পিনার। তাতে তিনি স্পর্শ করেন বিশ্ব রেকর্ড। একক কোন সিরিজে একই ব্যাটসম্যানকে সর্বোচ্চ সাতবার আউট করেছেন আরও চারজন অস্ট্রেলিয়ারনÑ গ্লেন ম্যাকগ্রা, জিওফ লসন, ক্লারি গ্রিমেট ও ইংল্যান্ডের ব্রায়ান স্ট্যাথাম। মঈনের বিদায়ের পরই উইকেটে আসেন রুট। নিয়মিত বিরতিতেই পানি পান করতে হয়েছে তাকে। সিরিজে নিজের পঞ্চম ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন। তবে লাঞ্চের পর আর ক্রিজে ফেরেননি। ব্যক্তিগত ৫৮ রান নিয়ে ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হয়ে সাজঘরে ফিরে গেছেন। অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে ইংল্যান্ডের লোয়ার অর্ডার আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিল। প্যাট কামিন্সের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ৩৮ রান করেন বেয়ারস্টো। এরপর স্টুয়ার্ট ব্রড ও ম্যাসন ক্রেন দ্রুতই ফেরেন, দুজনই কামিন্সের বলে উইকেটকিপার টিম পাইনকে ক্যাচ দিয়েছেন। আর এ্যান্ডারসনকে পাইনের ক্যাচ বানিয়ে ইংল্যান্ডের ইনিংসের ইতি টানেন জশ হ্যাজলউড। এ্যান্ডারসন রিভিউ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের নির্ধারিত রিভিউ শেষ হয়ে গেছে আগেই। স্থানীয় সময় ২টার পরপরই ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ১৮০ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট পেয়েছেন কামিন্স। ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন তিনিই। সিরিজসেরা হয়েছেন স্মিথ। সিরিজে তার রান ৬৮৭ যা ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ডেভিড মালানের চেয়ে ‘মাত্র ’ ৩০০ বেশি। ৪-০, স্কোরলাইন একপেশে মনে হলেও এবার কিন্তু লড়াই হয়েছে যথেষ্টই। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমের পর এ্যাশেজে এবারই প্রথম পাঁচটি টেস্টেরই ফয়সালা হয়েছে শেষদিনে।
র্যাঙ্কিংয়ে পাঁচ নম্বরে নেমে যাওয়া ঠেকাতে সিডনি টেস্ট জিততেই হতো। উল্টো ইনিংস ব্যবধানে হারে আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়েও পাঁচে নেমে গেছে ইংল্যান্ড (৯৯)। অন্যদিকে এ্যাশেজ জিতে তিনে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া (১০৪)। শীর্ষে থাকা ভারতের (১২৪ পয়েন্ট) চেয়ে অস্ট্রেলিয়া পিছিয়ে আছে ২০ পয়েন্টে, আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার (১১১) থেকে ৭ পয়েন্ট। চারে নিউজিল্যান্ড (১০০)। অনেক প্রত্যাশা নিয়েই এবারের এ্যাশেজ খেলতে এসেছিল ইংলিশরা। কিন্তু প্রথম থেকে প্রায় সবকিছুই গেছে তাদের বিপক্ষে। ব্রিস্টলের নাইটক্লাবে মারামারি করায় পাওয়া যায়নি অন্যতম সেরা খেলোয়াড় বেন স্টোকসকে। যারা ছিলেন মাঠের পারফর্মেন্স কারওরই প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। কুলিন ইংলিশরা হয়তো এই এ্যাশেজের কথা ভুলে যেতে চাইবে।
স্কোর কার্ড
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ৩৪৬/১০ (১১২.৩ ওভার; কুক ৩৯, স্টোনম্যান ২৪, ভিঞ্চ ২৫, রুট ৮৩, মালান ৬২, বেয়ারস্টো ৫, মঈন ৩০, কুরান ৩৯, ব্রড ৩১, ক্রেন ৪, এ্যান্ডারসন ০*; স্টার্ক ২/৮০, হ্যাজলউড ২/৬৫, কামিন্স ৪/৮০, লিয়ন ১/৮৬) ও দ্বিতীয় ইনিংস ১৮০/১০ (৮৮.১ ওভার; কুক ১০, স্টোনম্যান ০, ভিঞ্চ ১৮, রুট ৫৮ (আহত অবসর), বেয়ারস্টো ৩৮, মঈন ১৩, কুরান ২৩*, ব্রড ৪, ক্রেন ২, এ্যান্ডারসন ২; স্টার্ক ১/৩৮, হ্যাজলউড ১/৩৬, লিয়ন ৩/৫৪, কামিন্স ৪/৩৯, স্মিথ ০/৬, মিচেল মার্শ ০/০)।
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস : ৬৪৯/৭ ডিক্লেঃ (১৯৩ ওভার; ওয়ার্নার ৫৬, খাজা ১৭১, স্মিথ ৮৩, শন মার্শ ১৫৬, মিচেল মার্শ ১০১, টিম পেইন ৩৮*, স্টার্ক ১১, কামিন্স ২৪*; এ্যান্ডারসন ১/৫৬, ব্রড ১/১২১, মঈন ২/১৭০, কুরান ১/৮২, ক্রেন ১/১৯৩)।
ফল ॥ অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ও ১২৩ রানে জয়ী।
সিরিজ ॥ পাঁচ টেস্টের সিরিজ অস্ট্রেলিয়া ৪-০তে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ ॥ কামিন্স (অস্ট্রেলিয়া)।
ম্যান অব দ্য সিরিজ ॥ স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া)।