ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জামালপুরে সরকারী চাল সংগ্রহ অভিযান সফল হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৯ জানুয়ারি ২০১৮

জামালপুরে সরকারী চাল সংগ্রহ অভিযান সফল হচ্ছে না

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর, ৮ জানুয়ারি ॥ জামালপুরের সবচেয়ে বড় সরকারী খাদ্য গুদাম সিংহজানী খাদ্যগুদামের সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা জিনাত শামসুন্নাহার সুলতানা বিনা ছুটিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে চলতি চাল সংগ্রহ অভিযানে বিঘœ ঘটাসহ তালিকাভুক্ত ডিলারেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে ওই কর্মকর্তা অসুস্থতার কারণে মৌখিক ছুটিতে রয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। খাদ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত ডিলারেরা অভিযোগ করে জানান, সিংহজানী খাদ্যগুমাদের সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা জিনাত শামসুন্নাহার সুলতানা এখানে যোগদান করার পর থেকেই ঠিকমতো তার দায়িত্ব পালন করেন না। প্রতি মাসের বেশির ভাগ সময়ই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। সর্বশেষ প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে তিনি অসুস্থতা ও নানান অযুহাত দেখিয়ে সপ্তাহে দুয়েকদিন কর্মস্থলে গিয়ে সপ্তাহের হাজিরা দেন এবং বিল ভাউচার ও অন্যান্য দরকারি দাফতরিক কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে থাকেন। খাদ্য কর্মকর্তা নিয়মিতভাবে খাদ্যগুদামে না থাকার কারণে ডিলারদের খাদ্যগুদামে সরবরাহকৃত চালের দাম পেতে বিলম্ব হয়। চালবোঝাই ট্রাক লোড-আনলোডে গড়িমসি করা হয়। চালবোঝাই ট্রাক তিন-চার দিন ধরে খালাস না করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে করে ডিলারেরা ব্যবসায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অন্যদিকে তার দায়িত্বে থাকা খাদ্য পরিদর্শক ও উপ-খাদ্য পরিদর্শকদের দ্বারা স্বেচ্ছাচারিতা ও নানান হয়রানির স্বীকার হয়ে থাকেন। ডিলারেরা খাদ্য কর্মকর্তার এ ধরনের কাজের গাফিলতি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। জানা গেছে, সিংহজানী খাদ্যগুদাম হলো জেলার প্রধান এবং সবচেয়ে বড় সরকারী খাদ্যগুদাম। এখানে প্রতিটি গুদামে ৪ হাজার ৫০০ ধারণ মেট্টিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি বড় গুদাম রয়েছে। আরও দুটি গুদাম নির্মাণাধীন রয়েছে। বর্তমানে চলতি মৌসুমের সরকারী চাল সংগ্রহ অভিযান চলমান রয়েছে। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর থেকে ২ হাজার ৯০০ মেট্টিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু হওয়া চাল সংগ্রহ অভিযান সফল হচ্ছে না। সোমবার পর্যন্ত গত এক মাসে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে মাত্র ৯০০ মেট্টিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। সিংহজানী খাদ্যগুদামে সোমবার দুপুরে গিয়ে কর্মকর্তা জিনাত শামসুন্নাহার সুলতানাকে পাওয়া যায়নি। গুদামের দায়িত্বে থাকা উপখাদ্য পরিদর্শক খন্দকার ইলিয়াস হোসেন বললেন, উনার কোন কাজ নেই। আমরাই সবকিছু করি। ডিলারদের কাছ থেকে চাল ক্রয়ের বিল আমরা তৈরি করে রাখি। উনি এসে সব স্বাক্ষর করেন শুধু। আমাদের কাজে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। ডিলারদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বললেন, আমরা বিধি অনুযায়ী চাল নিরীক্ষা করে সংগ্রহ করে থাকি। এখানে চালের ট্রাক আসার পর আমরা ভাল করে দেখি। আর্দ্রতা ও গুণগতমান ভাল না হলে চাল গ্রহণ করি না। এ রকম ক্রয়ের অযোগ্য এক ট্রাক চাল আমরা চার-পাঁচদিন আগে ফেরত দিয়েছি। এসব কারণে হয়ত ডিলারেরা মিথ্যা অভিযোগ করছেন। সিংহজানী খাদ্যগুদামের সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা জিনাত শামসুন্নাহার সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছুটির আবেদন না করে ছুটিতে থাকার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আমি কর্মস্থলে থাকি না একথা সঠিক নয়। খাদ্য বিভাগের সবাইকে অন-ডিউটিতে থাকতে হয়। আমি অসুস্থ। তিন-চারদিন আগে আমি জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রককে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। আমি স্টেশনে না থাকলেও আমাদের গুদামে কাজের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। আমার অনুপস্থিতিতে সেখানে তিনজন কর্মকর্তা সবকিছু দেখভাল করছেন। কোন সমস্যা হলে বিধি অনুযায়ী উনারাই ব্যবস্থা নিচ্ছেন। জামালপুর জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক (চলতি দায়িত্বে) মাহবুবুর রহমান খান এ প্রসঙ্গে বলেন, সিংহজানী খাদ্যগুদামের সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা জিনাত শামসুন্নাহার সুলতানা অসুস্থতার কথা বলে মৌখিকভাবে ছুটি নিয়েছেন।
×