ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ বিপুলসংখ্যক কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনায় বিস্মিত কর্তৃপক্ষ

দ. কোরিয়ায় শ্রমবাজার যে কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৯ জানুয়ারি ২০১৮

দ. কোরিয়ায় শ্রমবাজার যে কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে

ফিরোজ মান্না ॥ দিন দিন শিল্পোন্নত দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। গত বছর দেশটিতে বসবাসরত দেড় হাজারেরও বেশি কর্মী বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী সেজে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে। হঠাৎ করে বিপুল সংখ্যককর্মী রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হওয়ায় দেশটির কর্তৃপক্ষ বিস্ময় প্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক আশ্রয়ের মূল কারণ তুলে ধরেছে, দেশে তাদের নামে একাধিক রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। দেশে ফিরলেই পুলিশ তাদের আটক করবে। মামলার সপক্ষে তারা বিভিন্ন কাগজপত্রও জমা দিয়েছে। যারা রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে তাদের বেশিরভাগেরই চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। তারা যাতে কোরিয়ায় স্থায়ীভাবে থাকতে পারে- তার জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার হিড়িক পড়েছে। বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দেশ থেকে একটি দালালচক্র ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে দিচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএমইটি সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশী কর্মী কাজ করছেন। তাদের বেতন ভাতা বাংলাদেশের শ্রম বাজারের চেয়ে অনেক বেশি। কোরিয়ার সরকার তাদের ভাষা শিক্ষা দিয়ে দেশ থেকে কোরিয়ায় নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কোরিয়া এভাবেই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করে আসছে। প্রতি বছরই দেশ থেকে দেড় থেকে ২শ কর্মী কোরিয়াতে কাজ পাচ্ছেন। কর্মী প্রতি সর্বনি¤œ ১২শ মার্কিন ডলার থেকে শুরু করে এক হাজার ৮শ ডলার বেতন পেয়ে আসছে। এত বড় অংকের টাকা বেতন পেয়ে কর্মীরা কাজ করছেন। অন্য কোন শ্রম বাজারে এই বেতনে চাকরি নেই। প্রথম দিকে যে সব কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন, তাদের অনেকের এখন চাকরি শেষ পর্যায়ে। তারা দেশে এসেও ভাল কাজ করতে পারবেন। কারণ তারা অনেক টাকা জমাতে পেরেছেন। হঠাৎ করে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করার কারণ কি জানতে চাইলে ওই সূত্র জানিয়েছে ইউরোপ আমেরিকার চেয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় চাকরিতে বেশি আয় করা যায়। দেশটিতে কর্মীদের মালিকই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করছে। এখানে যা বেতন তাই কর্মীদের থেকে যাচ্ছে। ফলে দেশে তারা অনেক বেশি টাকা পাঠাতে পারছে। এখন দেশে ফেরার সময় হয়েছে, তাই দেশটিতে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ জন্য নানা কৌশল হাতে নিয়েছে। কোরিয়া থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, দেশটিতে দেড় হাজারের বেশি বাংলাদেশী ভুয়া রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে। দেশ থেকে এক শ্রেণীর দালাল নানা ধরনের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে তাদের কাছে পাঠাচ্ছে। এর বিনিময়ে তারা বড় অঙ্কের টাকাও নিচ্ছে। ওই সব কাগজপত্র আইনজীবীর মাধ্যমে কোর্টে রাজনৈতিক আশ্রয় চাচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোন বাংলাদেশী রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে আশ্রয় পাননি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তারা জানেন না। কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে কোন চিঠি বা ই- মেল দেয়নি। আমরা জানতে পারলে অবশ্যই এ বিষয়ে কী করা যায় তা দেখব। তবে বিষয়টি পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানতে পারে বলে তিনি জানান। এ ধরনের আবেদনে বাংলাদেশের বাজার নষ্ট হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, তা তো হতেই পারে। কারণ কোরিয়ার সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি আছে তাতে চাকরি শেষ হলে তারা দেশে ফিরে আসবে। এ ঘটনায় দেশটিতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়বে। এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) স্কিমের আওতায় নির্ধারিত সময়ে কাজের কন্ট্রাক্টে দেশটিতে স্থায়ীভাবে থাকার কোন সুযোগ নেই। নির্ধারিত সময়ে দেশে ফিরে না এলে দেশটি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগই বন্ধ করে দিতে পারে। যদিও শ্রমবাজারটি ছোট। তবে এই বাজার থেকে রেমিটেন্সের পরিমাণ অনেক বেশি। বাজারটি নষ্ট হলে সহজে এই বাজার উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। ভুয়া ‘পলিটিক্যাল এসাইলাম’ চেয়ে অন্য কর্মী ও দেশের ক্ষতি করছে তারা। সূত্র মতে, কোরিয়াতে যারা রাজনৈতিক প্রার্থনা করেছেন, তাদের শতকরা ৯৯ ভাগই বিএনপি-জামায়াতের কর্মী বলে দাবি করেছে। অথচ দেশে তারা এই দুই সংগঠনের কোন পর্যায়েরই কর্মী ছিলেন না। তারা ইপিএস স্কিমের আওতায় কোরিয়ায় চাকরি পেয়েছে। তাদের দেশে ৬ মাসের কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়েছে। যদি তারা বিএনপি জামায়াতের কর্মী হতেন তখনই তাদের শনাক্ত করা যেত। কোরিয়ান কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়োগ দেয়ার সময় অঙ্গীকারনামাও নিয়েছে। চার বছর মেয়াদে তারা চাকরি নিয়ে কোরিয়ায় যান। সেখানে তারা এক দফা চাকরি বাড়াতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে মালিককে চাইতে হবে। অবশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুই মেয়াদে তারা চাকরি করতে পারেন। এখন যা করা হচ্ছে, কোরিয়া কর্তৃপক্ষকে রীতিমত ধোকা দিয়ে দেশটিতে কিছু কর্মী থেকে যাওয়ার ফন্দি করছেন। এ কারণে কোরিয়ার শ্রমবাজারটি নষ্ট হতে পারে।
×