ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদ

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৯ জানুয়ারি ২০১৮

বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদ

বিবিসির চীন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ডেস্কের সম্পাদক কেরি গ্রেসি পুরুষ সহকর্র্মীদের সঙ্গে তার বেতন বৈষম্যের অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেছেন। বিবিসি। গ্রেসি ত্রিশ বছরের বেশি সময় বিবিসিতে কর্মরত আছেন। তিনি তার পদত্যাগের কারণ হিসেবে এক খোলা চিঠিতে বলেন, এই কর্পোরেশনে গোপন ও অবৈধ বেতন কাঠামো বিরাজ করছে। এই সংস্থায় কর্মরত দুই-তৃতীয়াংশ সহকর্র্মী পুরুষ হওয়ার কারণে বছরে দেড় লাখ পাউন্ডের বেশি বেতন পাচ্ছে। এটি জানাজানি হওয়ার পর এখানে বিশ্বাসের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিক্ষুব্ধ কেরি গ্রেসি গত সপ্তাহে সংস্থাটির বেজিং ব্যুরো অফিস থেকে সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করলেও তিনি বিবিসির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকবেন বলে জানিয়েছেন। গ্রেসির দীর্ঘদিন চীনে অবস্থান এবং এ দেশীয় রাজনীতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহ থাকায় একজন চীন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এছাড়া চীনে মান্ডারিন ভাষায়ও তিনি বেশ পারদর্শী। গ্রেসি তার ব্লগে এই মর্মে একটি চিঠি পোস্ট করেন যে, লাইসেন্স ফি পরিশোধ করার সুবাদে বিবিসির দর্শক শ্রোতাদের এটি জানার অধিকার আছে যে, সংস্থাটি স্বীকৃত সাম্যতা আইন ভঙ্গ করছে এবং তারা গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ বেতন কাঠামো প্রতিষ্ঠার দাবি উপেক্ষা করে চলেছে। গত বছর জুলাই মাসে নানাবিধ চাপের মুখে বিবিসি বছরে দেড় লাখ পাউন্ডের বেশি বেতন গ্রহীতা কর্মকর্তাদের তালিকা প্রকাশ করে। তালিকা প্রকাশের পর গ্রেসি এটি দেখে অবাক হন যে, দু’জন পুরুষ সহকর্র্মী একই পদে থেকে তার চেয়ে ৫০ ভাগ বেতন বেশি পান। যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির আন্তর্জাতিক সম্পাদক জন সোপেলের বার্ষিক বেতন দুই থেকে আড়াই লাখ পাউন্ড এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সম্পাদক জেরেমি বোয়েন পান দেড় থেকে দুই লাখ পাউন্ড। এই তালিকায় গ্রেসি এবং বিবিসির ইউরোপ বিষয়ক নারী সম্পাদক কাটিয়া এডলারের নাম অনুপস্থিত থাকায় এটি স্পষ্ট হলো যে, এই দু’জন নারী সম্পাদকের বার্ষিক বেতন দেড় লাখ ডলারের নিচে। এর পরই গ্রেসি ও এডলার তাদের বেতন কাঠামোর পুরুষ সহকর্র্মীদের সঙ্গে সমতা বিধান করার জন্য বিবিসি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পত্র পাঠান। তাদের স্বাক্ষরিত আবেদন পত্র দু’টির কপি ডেইলি টেলিগ্রাফে ছাপা হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত খোলা চিঠিতে গ্রেসি বলেন, ২০১০ সালের সাম্যতা আইনে এটি পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, নারী ও পুরুষ একই ধরনের কাজ করলে তারা অবশ্যই একই ধরনের বেতন কাঠামো অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবেন। বিবিসিও প্রকাশ্যে এই সাম্যতা আইনের পক্ষে তাদের অবস্থানের কথা ঘোষণা করে। গ্রেসি এলেন, আমি বেতন কাঠামোয় সমতার শর্তে আমার দায়িত্ব গ্রহণ করি, কিন্তু আমাদের কর্তৃপক্ষ পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্যের সৃষ্টির মাধ্যমে এটিই প্রমাণ করলেন যে কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের দক্ষতা তাদের নারী সহকর্মীদের চেয়ে বেশি। গ্রেসি বলেন, আমিসহ চারজন আন্তর্জাতিক সম্পাদকের একই রকম স্কেলে বেতনের দাবি করেছিলাম, কিন্তু আমাকে বর্তমানে যে পারিশ্রমিক দেয়া হয় Ñ তার চেয়ে অনেক বেশি বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় বিবিসি। কিন্তু হিসেব করে দেখা যায়, সম্ভাব্য এই বেতন বৃদ্ধির পরও পুরুষ সহকর্মীদের বেতন কাঠামোর অনেক নিচে আমি অবস্থান করছি। একথা ঠিক জনগণের অর্থায়নে পরিচালিত অনেক সংস্থাভুক্ত কর্মকর্তার চেয়ে আমার বেতন যথেষ্ট বেশি। কিন্তু আমি চাই-বিবিসি আইনানুগ পন্থায় এগিয়ে চলুক এবং সঠিকভাবে নারী ও পুরুষের মূল্যায়ন করুক। তা না হলে এই সংস্থায় কর্মরত নারীদের মধ্যে ধৈর্যচ্যুতি ঘটবে এবং অবিশ্বাস দানা বেঁধে উঠলে কর্মস্পৃহাতে ঘাটতি দেখা দেবে। পত্রিকায় প্রকাশিত গ্রেসির চিঠি ও পদত্যাগপত্র নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বিবিসি কর্তৃপক্ষও কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে নিরপেক্ষ একজন বিচারকের অধীনে সংস্থায় কর্মরত সকল কর্মীর বেতন কাঠামো নিরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। এই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যে, এই সংস্থায় পদ্ধতিগতভাবে নারীদের বিরুদ্ধে কোন বৈষম্য করা হচ্ছে না এবং অদূর ভবিষ্যতে যেসব গণমাধ্যম কর্মী সরাসরি সম্প্রচার কাজে জড়িত তাদের সম্পর্কে আরেকটি পৃথক বেতন কাঠামো রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। গত বছর বিবিসি থেকে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে নারী-পুরুষ কর্মীদের মধ্যে বেতন বৈষম্য ১০ দশমিক সাত ভাগ এবং তা পুরুষ-সহকর্মীদের অনুকূলে। এ প্রসঙ্গে বিবিসির মহাপরিচালক লর্ড হল আশ্বাস দেন যে, ২০২০ সালের মধ্যে বেতন কাঠামোয় স্বচ্ছতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এই বৈষম্য কমিয়ে আনা হবে। ইতোমধ্যে বিবিসি গণমাধ্যম সম্পাদক অমল রাজন বলেন, গ্রেসির পদত্যাগ কর্পোরেশনের জন্য বেশ বড় ধরনের মাথাব্যথার কারণ হয়েছে। কারণ বিবিসি এতদিন ধরে যে বেতন বৈষম্য নিরসনের কথা বলে আসছে গ্রেসির পদত্যাগের মাধ্যমে তা অন্তসারশূন্য বলে প্রতীয়মান হলো। অপরদিকে ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস এর জেনারেল সেক্রেটারি স্টেনিসট্রিট মিশেল বলেছেন, বৈষম্যমূলক বেতন কাঠামোর অধীনে গ্রেসি চুপ না থেকে পদত্যাগ করবেন এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এছাড়াও, বিবিসি সাংবাদিক গোষ্ঠীসহ বহু লোক টুইটারে গ্রেসির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে তাদের মতামত দিয়েছে।
×