ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষা খাতে শেখ হাসিনা সরকারের অবদান

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৯ জানুয়ারি ২০১৮

শিক্ষা খাতে শেখ হাসিনা সরকারের অবদান

একটি রাষ্ট্র ব্যর্থ কি সফল হবে তা বেশ কয়েকটি নির্দেশকের ওপর নির্ভর করে। ওই সব নির্দেশকের মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। শিক্ষাই অগ্রগতি তথা রাষ্ট্রের জন্য উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশ সরকারও শিক্ষাক্ষেত্রে প্রসার ও জনগণকে শতভাগ শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসার জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শুধু উদ্যোগ গ্রহণ করেই সরকার ক্ষান্ত হয়নি, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার সেই সব উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে। কারণ শিক্ষার মাধ্যমেই পরিবর্তন সম্ভব এবং সেই পরিবর্তনের মাধ্যমেই স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া সম্ভবপর হবে। কাজেই, সামষ্টিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষার বিকল্প নেই এবং বর্তমান সরকারও সেই বিষয়টি উপলব্ধি করে উন্নয়নের সিঁড়ি হিসেবে শিক্ষাকেই বেছে নিয়েছে এবং তদানুযায়ী পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। আমরা জানি সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সব সেক্টরের সামঞ্জস্যতা প্রয়োজন, তা ছাড়া কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব নয়। কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেই টেকসই উন্নয়ন হবে না যদি সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাসহ অন্যান্য মানবসম্পদের উন্নয়ন না ঘটানো হয়। সরকার তথা দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে অবিরাম। মানবসম্পদের যথাযথ উন্নয়ন ব্যতীত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখা যায় না। বর্তমান বাংলাদেশেও তেমনটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কারণ, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। তাই নারীদের শিক্ষার জন্য শেখ হাসিনা সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবে প্রতিফলিত হতে শুরু করেছে। লেখাপড়ায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ও সফলতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের সফলতাকে দেখিয়ে দিচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি মেয়েদের অংশগ্রহণ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে এ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকার উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেশে-বিদেশে সুনামের সঙ্গে নিজেদের সক্ষমতা দেখিয়েছে। সাফল্য দেখিয়েছে নানাবিধ সেক্টরে। সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ আন্তর্জাতিক পরিম-ল থেকে এসেছে অনেক স্বীকৃতি। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিকভাবে গবেষণা করে তাদের নিজেদের দেশে প্রয়োগের চেষ্টাও চালাচ্ছে অনেক দেশ। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, জঙ্গীবাদ নির্মূলের জন্য বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে ইত্যবসরে অনেক দেশ নিজেদের দেশে প্রয়োগ করেছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিকভাবে কাজ করার জন্য আগ্রহও প্রকাশ করেছে। এ সবই বর্তমান সরকারের সাফল্য, আর এ সাফল্যের পেছনে রয়েছে সাহসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। আজ থেকে ৯ বছর পূর্বে কেউ কি ভেবেছিল বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে? কিন্তু আজ এটা স্বপ্ন নয় বরং সত্যিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে, যদি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকে। কারণ আমরা দেখেছি ২০০৯ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পরে বর্তমান সরকার এমন সব ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যার ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ এখন চ্যালেঞ্জিং বিশ্বের উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ, কোন মানুষ আজ না খেয়ে মরছে না, অবহেলায় কারও মৃত্যু হচ্ছে না। ইচ্ছা করলেই কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে, কর্মসংস্থানের পাশাপাশি উদ্যোক্তা হচ্ছে নতুন প্রজন্মের অনেক শিক্ষিত তরুণ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াসে সর্বদা সচেষ্ট। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুত, কৃষি এবং অন্যান্য সেক্টরে উন্নয়নের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বিদ্যুত সেক্টরে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে বর্তমান সরকার। গ্রামে-গঞ্জে বিদ্যুতের বিস্তার ঘটেছে। যোগাযোগ খাতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। যোগাযোগ এবং বিদ্যুতের উন্নয়নের ফলেই গ্রামেই এখন আধুনিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়ার ফলে গ্রামে বসেই যে কোন শিক্ষার্থী উন্নত বিশ্বের সঙ্গে নিজের পড়াশোনা তথা উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে পারছে সব সময়। এ সবই শেখ হাসিনার সরকারের অবদান। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। শিক্ষার অগ্রগতি ও প্রসারের কারণেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেগবান হচ্ছে। ভিত্তি যদি শিক্ষা হয় তাহলে উন্নয়নের সড়কে সাফল্য আসাটাই স্বাভাবিক অথচ শেখ হাসিনার সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বের চিত্র কিন্তু এ রকম ছিল না। তিনি যখন রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করেন তথা জনগণ যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেন তখন দেশের যে অবস্থা ছিল সে অবস্থা অতিক্রম করে দেশ আজ স্বাবলম্বী, তথা উন্নয়নের মিছিলে শামিল। সরকার শিক্ষাকে ভিত্তি হিসেবে নিয়ে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশের তরে কাজ করে চলেছেন এবং জনগণও শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার তার শাসনকালে শতভাগ শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার সাফল্য দেখিয়েছে। আজ থেকে ৯ বছর পূর্বে প্রাথমিকে শতকরা ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্র্র্র্তির রেকর্ড ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বর্তমানে শতভাগ শিশু স্কুলে যাচ্ছে। সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তের কারণেই দেশ উত্তরোত্তর সাফল্য ও সফলতার দিকে এগিয়ে চলেছে। প্রাথমিকের সঙ্গে সঙ্গে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষায়ও সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো আলোর মুখ দেখেছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর নিমিত্তে সরকার আধুনিক সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পুরো ব্যবস্থাটিকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনার লক্ষ্যে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা কাজকে আরও সহজতর ও আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি স্কুলে আইসিটি ল্যাব চালু হচ্ছে। কম্পিউটার কোর্সকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষ্যে ছেলেমেয়েদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার প্রয়াসে আইসিটিমেলা ও বিজ্ঞানমেলার আয়োজন করা হচ্ছে স্কুলভিত্তিক। সংস্কৃতির কার্যক্রমকে বিকাশমান করার লক্ষ্যে স্কুলভিত্তিক প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যেও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মাদ্রাসা কাঠামোতে বিজ্ঞান ও কম্পিউটার শাখা চালু করা হয়েছে। স্থাপিত হয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর ও ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুষ্ঠু তদারকির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম। গবেষণা খাতে বিশেষ গুরুত্ব আরোপের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রমের প্রশিক্ষণ পরিচালিত হচ্ছে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রহণীয় উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেছে। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আর সেশন জটের নজির দেখা যায় না। মসৃণ গতিতে চলছে উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও এখন আর সেশন জট নেই বললেই চলে। নিয়মিত ভর্তি পরীক্ষা, ক্লাস, পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বর্তমান সরকার শিক্ষা খাতে গ্রহণীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে সফলতা দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে ও বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার্থে প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে এবং এ পরিসংখ্যানই বলে দেয় শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের অর্জনের বিপ্লবের প্রতিরূপ। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে শিক্ষাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে সফলতার যে প্রতিচ্ছবি দেখিয়েছে ভবিষ্যতেও তা বলবত থাকবে বলেই আশা করা যায়। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার আকাক্সক্ষায় শিক্ষার কোন বিকল্প নেই, তথাপি বিকল্প নেই রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তনের অগ্রযাত্রায় জননেত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা অগ্রগণ্য হিসেবে আজ প্রতিষ্ঠিত। লেখক : উপাচার্য মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
×