ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সঞ্চালন লাইন জরুরী

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৯ জানুয়ারি ২০১৮

সঞ্চালন লাইন জরুরী

পটুয়াখালীর পায়রায় দেশের প্রথম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে ২০১৯ সালের এপ্রিলে। আর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া সঞ্চালন লাইনটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০১৯ সালের জুনে। এর ফলে বিদ্যুত কেন্দ্রটি উৎপাদন তো দূরের কথা, টেস্টিংও করতে পারবে না। বিদ্যুত উৎপন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা বাঞ্ছনীয়। উৎপাদিত বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার কথা রয়েছে। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এক বৈঠকে বিদ্যুত কেন্দ্রটি উৎপাদনে যাওয়ার আগে যেভাবেই হোক সঞ্চালন লাইনের নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য বলা হয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানিকে। বিপুল ব্যয়ে নির্মিত একটি বিদ্যুত কেন্দ্রের অযথা দুই মাস বসে থাকার আদৌ কোন যৌক্তিকতা নেই। পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাবিশিষ্ট বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) এবং নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল চায়না। নির্মাণ ব্যয়ের ৩০ শতাংশ করে অর্থ দিচ্ছে বাংলাদেশ ও চায়না এবং বাকি অর্থ পাওয়া গেছে বৈদেশিক সহায়তা থেকে। মালিকানার শর্ত ৫০:৫০। কেন্দ্রটি নির্মাণে অনুসরণ করা হচ্ছে রামপালের প্রক্রিয়া। নরিনকোর কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র পরিচালনায় অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ দেশের প্রতিটি সরকারী কোম্পানিকে কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে পটুয়াখালীতে নর্থওয়েস্টের সঙ্গে আরপিসিএল এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনকে তিনটি ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেগুলো নির্মাণাধীন। দায়িত্ব গ্রহণের পর বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় ছিল দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য বিদ্যুত সমস্যার সমাধান। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সরকার ২০১৬ সাল নাগাদ ১৬ হাজার মেগাওয়াট, ২০২৪ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকার তার উদ্দেশ্য পূরণে অনেকটাই সফল হয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে এবং এর সুফল পাচ্ছে ৭০ শতাংশ মানুষ। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। এর পাশাপাশি সরকার দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে শিল্পোৎপাদনেও নতুন বিদ্যুত সংযোগ দিতে সমধিক আগ্রহী। এর জন্য নতুন ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিনিয়োগ ও শিল্পে উৎপাদন বাড়ানোর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করে তোলা। সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুত বিভাগ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তাতে অনেকটাই সফল হবে বলে আশা করা যায়। সঙ্গত কারণেই সরকার যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের ওপর সবিশেষ জোর দিয়েছে এটিও প্রশংসাযোগ্য। বর্তমান বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেশ কমলেও আমদানি করতে হয় বিধায় এটি নিঃসন্দেহে ব্যয়বহুল। সে তুলনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র ব্যয়সাশ্রয়ী, সহজলভ্য ও সুলভ। আপাতত আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে চাহিদা মেটানো হলেও বড়পুকুরিয়া ও ফুলবাড়ির কয়লা উত্তোলন করে ব্যবহার করা হলে উৎপাদন খরচ আরও কমে আসবে। পরিবেশের ওপর কিছু বিরূপ প্রভাব পড়লেও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে কার্বন নিঃসরণও অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রটি উৎপাদনে গেলে পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ দেশের উন্নয়ন ও যোগাযোগে প্রভূত অবদান রাখতে সমর্থ হবে।
×