স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজার সদরের খরুলিয়ায় অভিভাবকের হাত-পা বেঁধে নির্যাতনকারী শিক্ষক নামধারী লোকরা নিজেদের দোষ আড়াল করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। ঘটনার মূল হোতা মাস্টার জহিরুল হক, মাস্টার বোরহান উদ্দিন, মাস্টার নজিবুল্লাহ, নুরুল হক ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ব্যাপক তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোমবার সকালে আহত অভিভাবককে দেখতে যান এবং সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, এমন একটি দুঃখ ও লজ্জাজনক ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার কারও সুযোগ নেই। প্রশাসন এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দফতরে পৌঁছাবেন বলে জানান।
স্কুলের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চেয়ে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রবিবার সকালে আয়াত উল্লাহ নামে এক অভিভাবকের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় তোলপাড় চলছে। ঘটনায় জতিড়দের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে স্থানীয়রা। ঘটনার শিকার চিত্রশিল্পী আয়াত উল্লাহ খরুলিয়া ঘাটপাড়ার মাওলানা কবির আহমদের পুত্র। ন্যক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, ঘটনার পরপরই অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সবাই পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা যায়নি।
জানা গেছে, আয়াত উল্লাহর ছেলে শাহরিয়ার নাফিস (আবির) খরুলিয়া কেজি এ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। প্রথম শ্রেণীতে ছেলে কেন এ প্লাস পায়নি? তা জানতে রবিবার সকালে স্কুলে যান আয়াত উল্লাহ। পূর্বঘোষণা ছাড়াই ভর্তি ও মাসিক বেতন কেন বৃদ্ধি করা হয়েছে তাও জিজ্ঞেস করেন তিনি। এ নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাস্টার বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময়ে পার্শ্ববর্তী খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হককে ডাক দেয় বোরহান। স্কুল আঙ্গিনায় শুরু হয় ত্রিমুখী তর্ক বিতর্ক। ঘটনাটি হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়।
মাস্টার জহিরুল হক আয়াত উল্লাহকে প্রশ্ন করে, কেন এসব জানতে চাইছে। এতসব জানার তোমার কী দরকার? প্রশ্ন করে ধাক্কা দেয়। বোরহান উদ্দিনও মারে আরেক ধাক্কা। মাটিতে পড়ে যায় অসহায় অভিভাবক আয়াত উল্লাহ। এরপর রশি দিয়ে তার হাত ও পা বেঁধে ফেলা হয়। মারধর করতে থাকে দুই শিক্ষকসহ তাদের লেলিয়ে দেয়া বাহিনী। আয়াত উল্লাহকে লাথি ও থুথু মারে শিক্ষক জহিরুল হক ও বোরহান উদ্দিন। ঘটনায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আয়াত উল্লাহকে এমনভাবে মারা হচ্ছে যেন তিনি একজন দাগি আসামি, চোর বা বড় সন্ত্রাসী। মধ্যযুগীয় কায়দায় তাকে নির্যাতন করা হলেও কোন শিক্ষক তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যায়নি। সবাই দর্শকের ভূমিকায় ছিল। পরে তার চিৎকার শুনে স্কুলের আঙ্গিনায় গিয়ে পৌঁছে পথচারীরা। শিক্ষক-ছাত্রদের পায়ের নিচ থেকে উদ্ধার করে তাকে। শিক্ষক নামধারী ওই নরপশুদের ধিক্কার জানিয়েছে এলাকাবাসী।
আয়াত উল্লাহ বলেন, দুই স্কুলে প্রায় সময় অনিয়ম করা হয়। কিছু দিন আগে কোন ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। কেজি স্কুলে নানা অনিয়ম রয়েছে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অনিয়ম করে অনেক শিক্ষক। এ নিয়ে অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভ রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। আমার ছেলের কাক্সিক্ষত ফলাফল কেন হয়নি? কোন যুক্তিতে ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বাড়ানো হয়েছে? জানতে চাওয়ায় আমার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। দুই শিক্ষকই এ ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে। মাস্টার জহিরুল হক, মাস্টার নজিবুল্লাহ, নুরুল হকসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক আমার ওপর নির্যাতনে সরাসরি জড়িত।
এ দিকে এ ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ ১২জনের বিরুদ্ধে মামলা ও তিন শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। সোমবার ভুক্তভোগী অভিভাবক আয়াত উল্লাহর স্বজন বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় এ মামলাটি করেন। মামলায় খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক, শিক্ষক নজিবুল্লাহ, নুরুল হক, স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি এনামুল হক ও সদস্য মুস্তাকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।