ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

আটপাড়ার দুই রাজাকার পাক সেনা নিয়ে ১০ জনকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৯ জানুয়ারি ২০১৮

আটপাড়ার দুই রাজাকার পাক সেনা নিয়ে ১০ জনকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার আটপাড়ার দুই রাজাকার হেদায়েতুল্লাহ ওরফে আঞ্জু বি.এসসি. ও সোহরাব ফকির ওরফে সোহরাব আলী ওরফে ছোরাপ আলীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী মোঃ খোরশেদ আলম খান ওরফে বাচ্চু জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, আসামিরা পাকিস্তানী আর্মিদের নিয়ে মোবারকপুর গ্রামে, মদন দক্ষিণপাড়া ও সোনাজুর গ্রামে ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করে। একই সঙ্গে তারা ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। যাদেরকে হত্যা করা হয় তারা হলেন, মালেক তালুকদার, কালাচাঁদ মুন্সী, হেলিম তালুকদার, শৈলেশ চন্দ্র সরকার, তারেশ চন্দ্র সরকার, দুর্গ শংকর ভট্টাচার্য, প্রফুল্ল বালা, পলূ দে, মনোরঞ্জন। আটকদের মধ্যে চান খাঁ ও আব্দুল হাকিম অর্থের বিনিময়ে ছাড়া পান। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ জানুয়ারি। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুস শুকুর খান। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ খোরশেদ আলম খান ওরফে বাচ্চু। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৫ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম স্বল্পশুনই, থানা আটপাড়া, জেলা নেত্রকোনা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৯ বছর। তখন আমি ময়মনসিংহ গৌরিপুর কলেজে বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলাম। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে ও সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের দেরাদুন গিয়ে ৫৮ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি ভারতের মহেশখোলা ইয়থ ক্যাম্পে যাই। সেখান থেকে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে জয় বাংলা পত্রিকা নিয়ে দেশে ফিরে আসি। একাত্তরের ২৩ আগস্ট আমার আত্মীয় বাড়ি কৈলং থেকে আসার পথে বেলা ১টার সময় আটপাড়া থানার মোকাবরপুর গ্রামে আব্দুল মালেক তালুকদারের পুকুর পাড়ে তার গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখি এবং পূর্বপাড়ার আব্দুল হামিদ তালুকদারের বাড়ি থেকে কাশেমের বাড়ি পর্যন্ত আনুমানিক ৫০/৬০টি বাড়ি আগুনে জ্বলতে দেখি। ঐ গ্রামের কাশেম, হাশেম ও নান্টুদের কাছে জানতে পারি যে, এদিন সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে আসামি হেদায়েতউল্লাহ (আঞ্জু) ও তার ভাই আসামি এনায়েত উল্লাহ (মঞ্জু) বর্তমানে মৃতসহ ১০/১২ জন রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মি এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা আব্দুল মালেক তালুকদার ও কালাচাঁন মুন্সিকে গুলি করে হত্যা করেছে। এরপর আমি আরও জানতে পারি ৩০ আগস্ট আসামিরা পাকিস্তানী আর্মি নিয়ে মদন দক্ষিণপাড়ায় ঢুকে হেকিম তালুকদারক গুলি করে হত্যা করে। পরে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়। সাক্ষী আরও বলেন, একাত্তরের ৪ সেপ্টেম্বর নাজিরপুর বাজারে গিয়ে আমি জানতে পারি, সশস্ত্র রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মিরা সুখারি গ্রামের হাশেমের বাড়ির কাছে ন্যেকা লাগায় এবং তারা এলোপাতাড়ি গুলি করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে ও অগ্নিসংযোগ করে। এরপর উপেন্দ্রকে আটক করে এবং অর্থের বিনিময়ে কিছুক্ষণ পর তাকে ছেড়ে দেয়। ঐ দিন তারা দিনভার লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে সন্ধ্যার পর ফিরে যাওয়ার সময় দীনেশ চন্দ্র সরকার, শৈনেশ চন্দ্র সরকার, তারেক চন্দ্র সরকার, দুর্গাশংকর ভট্টাচার্য, প্রফুল্ল বালা, পলু দে, মনোরঞ্জন, চান খাঁ ও আব্দুল হামিদকে অপহরণ করে। পরে তাদেরকে নৌকায় তুলে মদন পুরাতন থানায় আর্মি ক্যাম্পের পাশে মহড় নদীর পাড়ে গুলি করে হত্যা করে। এর পর তাদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়। চান খাঁ ও আব্দুল হামিদকে অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়।
×