মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ আবার রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত রবি ও সোমবার দুদিনে আড়াই শতাধিক রোহিঙ্গা টেকনাফের সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে অনুপ্রবেশ করেছে। রবিবার ১৩৭ ও সোমবার ১৪৩ নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর তাদেরকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়েছে। অপরদিকে, আরও ১৫ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা মংডুর দংখালিতে জমায়েত হয়েছে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য। ধারণা করা হচ্ছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ভ-ুল করতে ষড়যন্ত্রকারী মহলগুলো তৎপর হয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ইস্যুটি যখন কার্যকর হওয়ার পথে ঠিকই সেই মুহূর্তে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে পরিস্থিতিকে আবারও উত্তপ্ত করার অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠন বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার তৎপরতা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। মংডু শহরের অদূরে পাহাড়ী এলাকায় গত শুক্রবার সকালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গাড়ির ওপর হামলার নেপথ্যে আরসা সদস্যরা জড়িত বলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে দাবি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আরসা এর দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি মিয়ানমারে এখনও শান্তি ফিরে আসেনি। প্রত্যাবাসিত হওয়ার পরই পুরুষ সদস্যদের আটক করা হবে। মহিলারা আবার ধর্ষিত হবে। শিশুদের জবাই করা হবে। এ জাতীয় ভয়ভীতি ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে। অপরদিকে, আরসা সংগঠনটির মিয়ানমার সরকারের মদদপুষ্ট বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত আগস্ট মাসে সে দেশের একটি সেনাসহ ৩০ পুলিশ চৌকিতে হামলার জন্যও আরসা দায়দায়িত্ব স্বীকার করে। এরপরই ২৫ আগস্ট রাতে শুরু হয় রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান। চলে গণহত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও পোড়াও, লুটতরাজসহ বর্বরতম নানা ঘটনা। এরপর একপর্যায়ে আরসা এককভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। যা মিয়ানমার সরকার নাকচ করে দেয়। এ ঘটনার পর বাংলাদেশে দলে দলে রোহিঙ্গারা পালিয়ে অনুপ্রবেশ করতে থাকে। যা বর্তমানে ১৩ লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। অদ্ভুত পরিস্থিতিতে সারাবিশ্বে এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। মিয়ানমারের ওপর নানামুখী চাপ বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকে বসে আগামী ২২ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রত্যাবাসন শুরুর আগে আগামী ১৫ জানুয়ারি মিয়ানমারে দুদেশের মধ্যে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের ৩০ সদস্যের একটি বৈঠকের দিন ধার্য রয়েছে। এ অবস্থায় রাখাইন রাজ্যে আবারও সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলার জন্য আরসার নাম উঠে এসেছে। এ প্রেক্ষিতে সে দেশে এখনও অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মাঝে চরম ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আবারও রোহিঙ্গা আগমন বেড়েছে।
জিরো পয়েন্ট থেকে সরানো হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ॥ অবশেষে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রুসহ নাইক্ষ্যংছড়ির জিরো পয়েন্টে অবস্থানরত ১৫ হাজার রোহিঙ্গাকে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয় ক্যাম্পে নিয়ে আসা হচ্ছে। সীমান্ত ব্যাংক উদ্বোধন করতে টেকনাফে সফরে আসলে বিজিবি মহাপরিচালক এসব রোহিঙ্গাদের সরিয়ে আনার ঘোষণা দেন। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনা করে সীমান্তের একেবারে জিরো পয়েন্টে এসব রোহিঙ্গাকে শীঘ্রই আশ্রয় ক্যাম্পে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজিবি। আগে দ্বিমত পোষণ করলেও এখন ওই রোহিঙ্গারাও নির্ধারিত আশ্রয় ক্যাম্পে যেতে রাজি। তারা বলেন, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় আমরা শুধু ত্রাণ ছাড়া অন্য কিছুই পাচ্ছিনা। টেকনাফ ও উখিয়ার ১২টি ক্যাম্পে যে সব রোহিঙ্গা রয়েছে, শুনেছি তারা ত্রাণ ছাড়াও নগদ টাকাসহ আরও অনেক কিছু পাচ্ছে। তারা অতিরিক্ত ত্রাণ পেয়ে বিক্রিও করছে। তাই আমরা ওই ক্যাম্পে চলে যাব।
সাড়ে তিন হাজার ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত ॥ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ৩০ জন। পরিস্থিতি সামাল দিতে যুক্তরাজ্য থেকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ডিপথেরিয়া বিশেষজ্ঞ ৪০ জনের একটি চিকিৎসক দল বাংলাদেশে এসেছে। কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৩০ জন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে রোহিঙ্গারা ॥ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা যুবক, নারী ও শিশুরা অনৈতিক কর্মকা-ে লিপ্ত হয়ে স্থানীয়দের জীবনযাত্রা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এমনকি অনেক রোহিঙ্গা নারী কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে পতিতা কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েছে। উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন কমপক্ষে ১’শ রোহিঙ্গা পকেটমার টার্গেট নিয়ে থাকে। এদের প্রধান লক্ষ্য থাকে মোবাইল ফোন এবং মেয়েদের ব্যাগ।