ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছাত্রলীগের সম্মেলন মার্চে, উজ্জীবিত নেতা কর্মীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৯ জানুয়ারি ২০১৮

ছাত্রলীগের সম্মেলন মার্চে, উজ্জীবিত নেতা কর্মীরা

সোহেল তানভীর ॥ বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। পাকিস্তান আমলে ও স্বাধীনতার পর অনেক সঙ্কটে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকা এ সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। তাই এই সংগঠনকে নেতৃত্ব দেয়ার স্বপ্ন থাকে ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যথাসময়ে ছাত্রলীগে সম্মেলন না হওয়ায় অনেক নেতাই ছিলেন হতাশ। অনেকে আবার রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাদের সাক্ষাতকালে ৩১ মার্চ ২৯তম সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হয়েছে বলে জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। তিনি বলেন, ‘নেত্রীর সাথে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আমরা ৩১ মার্চ সম্মেলনের তারিখ ঠিক করেছি। সেদিন নেত্রীর অন্যকোন গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম না থাকলে ৩১ মার্চ হবে সম্মেলন।’ সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করার পর পরেই উজ্জীবিত হয়ে উঠে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর ক্যাম্পাসে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন অনেক নেতাকর্মী। ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ‘দৌড়ঝাপ’ শুরু করেছেন পদ প্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা। ছাত্ররাজনীতির আতুরঘর খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন হয়ে উঠেছে সরগরম। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আড্ডার বিষয়বস্তু এখন ‘ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন’। কারা আসছে ছাত্রলীগের পরবর্তী নেতৃত্বে- এমন প্রশ্ন এখন অহরহ শোনা যাচ্ছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে। বয়সের কারণে ছাত্রলীগ ছেড়ে দিতে হবে বলে অনেকে আবার শোক প্রকাশ করেছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলন না হওয়ায় ছাত্রলীগের একটা অংশ অনেকদিন আগে থেকে সম্মেলনের দাবি জানিয়ে আসছিল। গঠনতন্ত্র মেনে সম্মেলনের দাবিতে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) কাফেটারিয়ায় সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মেহেদি হাসান রনি, আরেফিন সিদ্দিক সুজন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম খান, শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একাংশ। এর আগেই সম্মেলনের বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রলীগের নেতাদের ডাকেন আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড। আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে মতবিনিময় করলে সম্মেলনের আশ্বাস দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। এদিকে, ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার ইচ্ছা চলতি বছরের মার্চ মাসে (স্বাধীনতার মাস) ছাত্রলীগ সম্মেলন করুক। তিনি ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বকে জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর নেতা হওয়ার স্বপ্নে উজ্জীবিত হয়ে উঠে ছাত্রলীগের একঝাক তরুণ নেতাকর্মী। তবে, বয়সের কারণে ছাত্রলীগ ছেড়ে দিতে হবে বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন অপেক্ষাকৃত সিনিয়র নেতারা। ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব অনেকটাই নির্ধারণ করেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। তাই পদ প্রত্যাশীরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন নিয়মিত। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার সাংগঠনিক দক্ষ, শিক্ষার্থীবান্ধব, দায়িত্বশীল, পরিপক্ব, মেধা ও বিচক্ষণ নেতা ছাত্রলীগে আসবে এমন প্রত্যাশা সাধারণ নেতাকর্মীদের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আবিদ আল হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুকে লালন করে, দুঃসময়ে মাঠে ছিল, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয়, আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামাতের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিতে সক্ষম এমন সংগঠক, মেধাবীদের ছাত্রলীগের আগামী নেতৃত্বে প্রত্যাশা করি।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্মেলনের নির্দেশ দেয়ার সাথে সাথে নেতাকর্মীদের আনন্দ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল পুরো সমাবেশস্থল। সম্মেলনের খবরে রাজধানীতে ছাত্রলীগের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায়ও নেতা-কর্মীরা ছিল উজ্জীবিত। তবে, এবার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে না জানিয়ে অনেকটা অবাক করার মতোই ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলনের ঘোষণা আসে। গত দুই দশকে এত অল্প সময়ে ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলন হয়নি। ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৮তম ও সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে সাইফুর রহমান সোহাগকে সভাপতি ও এসএম জাকির হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে দুই বছরের জন্য সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। এরপর কেটে গেছে দুই বছর পাঁচ মাস। যদিও ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১ (খ) ধারা অনুযায়ী, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদ দুই বছর। সে হিসেবে ছাত্রলীগের চলমান কমিটির মেয়াদ পাঁচ মাস পূর্বেই শেষ হয়েছে। কিন্তু ২৯তম জাতীয় সম্মেলন আর ডাকা হয়নি। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র উপেক্ষার এ ধারাবাহিকতার বিরোধিতা করে সংগঠনটির একটি অংশের নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল যথাসময়ে সম্মেলন করা। কিন্তু তাদের সে দাবি উপেক্ষিত ছিল অনেক দিন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছাত্রলীগের সম্মেলন হবে কিনা তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছিল অনেক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সম্মেলন প্রত্যাশী অংশের নেতা এবং ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম খান জনকণ্ঠকে বলেন, গঠনতন্ত্র মেনে নির্দিষ্ট সময়ে সম্মেলন না করায় নেতাকর্মীরা অনেকে ছিল হতাশ। কেন্দ্রীয় কমিটির পদপ্রাপ্ত নেতা হিসেবে দায়বদ্ধতা থেকে আমরা যথাসময়ে সম্মেলন চেয়েছি। এ ব্যাপারে নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ইতিবাচক সাড়া পেয়ে আমরা সন্তুষ্ট। তাই আগামী সম্মেলনকে সফল করার জন্য আমরা বর্তমান সভাপতি-সধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে কাজ করব। ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মেহেদি হাসান রনি বলেন, সম্মেলন সারা দেশের নেতা-কর্মীদের দাবি ছিল। নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) পক্ষ থেকে সম্মেলনের নির্দেশ দেয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
×