ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারী কর্মসংস্থান বাড়ানো হচ্ছে প্রবৃদ্ধির সুফল পেতে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৯ জানুয়ারি ২০১৮

বেসরকারী কর্মসংস্থান বাড়ানো হচ্ছে প্রবৃদ্ধির সুফল পেতে

এম শাহজাহান ॥ জিডিপি প্রবৃদ্ধির সুফল পেতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সরকারী খাতের পাশাপাশি বেসরকারীখাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দক্ষ শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে সামষ্টিক কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে বিনিয়োগ বোর্ডের ওয়ানস্টপ সার্ভিস পুরোপুরি নিশ্চিত করা। এছাড়া কর্মসংস্থান বাড়াতে রাজস্ব পলিসি, প্রণোদনা পলিসি, রেগুলেটরি পলিসি সংশোধন ও ডুয়িং বিজনেস কস্ট কমানোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জন দারিদ্র্য বিমোচনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে ৭ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে দেশে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে গত দেড় বছরে কর্মসংস্থান হয়েছে আরও ১৫ লাখ মানুষের। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বরাদ্দের হারও বেড়েছে। এসব কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সূত্রমতে, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সেই হারে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারীখাতের বিনিয়োগ বিকাশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করা জরুরী হয়ে পড়ছে। রাজস্ব বোর্ডের কর, ভ্যাট ও বন্ডেড ওয়্যার হাউস সংক্রান্ত সমস্যা দূরীকরণ, বেশি সংখ্যক নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং স্কিল ডেভলপমেন্টের কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলা হবে। এছাড়া চলতি বাজেটে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে যেসব পদক্ষেপ রয়েছে তা শতভাগ বাস্তবায়নে কাজ শুরু করা হয়েছে। জানা গেছে, দেশের বিপুলসংখ্যক নারী এখনও শ্রমশক্তির বাইরে রয়েছেন। উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থানে তেমন সুখবর নেই। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গামেন্টস খাত বড় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হলেও বিভিন্ন চাপের মুখে কারখানার সংখ্যা বাড়ছে না। আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারেও চাপ আছে। ফলে অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান দ্রুত বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কর্মসংস্থান বাড়াতে সব ধরনের নীতিগত সহায়তা কীভাবে দেয়া যায় কিংবা সরকারের করুণীয় কি হতে পারে এসব বিষয় নির্ধারণে একটি কর্মকৌশল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। অর্থসচিব মোঃ মুসলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে শীঘ্রই এ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করতে যাচ্ছে অর্থবিভাগ। এই বৈঠকে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিশেষ করে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত হচ্ছে কি না, কিংবা কিভাবে উদ্যোক্তাদের সেবা দেয়া হচ্ছে সেসব বিষয়ে বিশ্লেষণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আজিজুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বেসরকারীখাতকে নীতিগত সহায়তা দিতে সরকারের পক্ষ থেকে কর্মকৌশল তৈরি করা হচ্ছে। বিনিয়োগ বোর্ডের ওয়ানস্টপ সার্ভিসটি যাতে পুরোপরি বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, সরকারের সরাসরি কর্মসংস্থার তৈরির তেমন কোন সুযোগ নেই। তবে বিনিয়োগ বিকাশ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সরকারের নীতিগত সহায়তা খুব জরুরী। কি ধরনের নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন সে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। এদিকে, কর্মসংস্থান নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ তৈরি পোশাকখাতে কর্মসংস্থানে ধীরগতি। ২০০৩ থেকে ২০১০ সালে এ খাতে গড়ে প্রতিবছর ৩ লাখ শ্রমিক যোগ হয়েছে। ২০১০ সালের পরে এ সংখ্যা ৬০ হাজারে নেমেছে। সার্বিকভাবে পোশাকখাতে মোট কর্মসংস্থানের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তৈরি পোশাকের বাইরে চামড়া ও ওষুধের মতো কিছু খাতে রফতানি সম্ভাবনা থাকলেও এসব খাত পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছে না। সংস্থাটির ঢাকা অফিসের লিড ইকোনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, গত অর্থবছরে রফতানি বেড়েছে মাত্র ২ শতাংশ। গত দুই অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে। এ দুটি খাতে ধীরগতি কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, এখন জনমিতিক লভ্যাংশ সঙ্কুচিত হয়ে আছে। ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে কর্মসংস্থান বেড়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। তবে ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ। যদিও এ সময়কালে মাথাপিছু জিডিপি বেড়েছে আগের সময়কালের চেয়ে বেশি। এখন জোরালও প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এই প্রবৃদ্ধির সুফল নিশ্চিত করতে হলে কর্মসংস্থান বাড়ানো প্রয়োজন। অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় থাকায় কর্মসংস্থান বাড়বে ॥ বাংলাদেশ এ বছর রেকর্ড পরিমাণ ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে উদ্যোক্তাদের কারণে। সরকারের হাতে এখন ১ হাজার ৪৫০টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের চেহারা বদলে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বেসরকারীখাতের বিনিয়োগ বাড়াতে সুদের হার এখন সর্বনি¤œ পর্যায়ে রয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে শিল্পঋণের ক্ষেত্রে ১১ শতাংশ ও আবাসন ঋণের ক্ষেত্রে নয় শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে পাঁচ শতাংশের একটু বেশি। গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে এ হার ছিল পাঁচ দশমিক ৪৩ শতাংশ। পয়েন্ট টু পয়েন্ট (গত বছরের একই সময়ের সঙ্গে তুলনা) ভিত্তিতে এ হিসাব করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, গত তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় পাঁচ দশমিক ৮৬ শতাংশে। তবে, বর্তমানে সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তাই আগামী মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। আশা করছি অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই থাকবে। এছাড়া রিজার্ভ পরিস্থিতি ভাল থাকায় ব্যালেন্স অব পেমেন্টের চাপ সামলিয়ে মোটামুটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রবৃদ্ধি হচ্ছে উৎপাদনশীলতার মাধ্যমে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। কিন্তু অর্থনীতিতে যে ধরনের বৈচিত্র্যায়ন দরকার, যার মাধ্যমে অধিকসংখ্যক মানুষকে কর্মসংস্থান দেয়া যাবে, সেখানে বড় ধরনের বিচ্যুতি রয়েছে। এজন্য রফতানি বৈচিত্র্যায়ন করে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। দক্ষ শ্রমিক বাড়াতে হবে।
×