ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার সেনার ওপর হামলায় ফের রোহিঙ্গা স্রোতের শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৮ জানুয়ারি ২০১৮

মিয়ানমার সেনার ওপর হামলায় ফের রোহিঙ্গা স্রোতের শঙ্কা

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ প্রত্যাবাসনে চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যানবাহনের ওপর আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে অধিকার আদায়ের নামে সক্রিয় থাকা সংগঠনগুলো প্রকৃতপক্ষে রোহিঙ্গা সমস্যার সুরাহা চায় কিনা। সমস্যা জিইয়ে রেখে এই সংগঠনটির নেতারা নিজেদের স্বার্থরক্ষায় তৎপর কিনা সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। কেননা, নতুন করে এ হামলায় আবারও রাখাইন প্রদেশে সেনা নির্যাতনের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। যদি তাই হয়, তাহলে শুধু প্রত্যাবাসনে অনিশ্চয়তাই নয়, বাংলাদেশ অভিমুখে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের স্রোতও সৃষ্টি হতে পারে। এদিকে, রোহিঙ্গা সংগঠন আরসা’র নেতা আতাউল্লাহ টুইটারে হামলার দায় স্বীকার করে জানিয়েছেন, এটি তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। এমন হামলা আরও চালানো হবে। বিবিসি জানিয়েছে, টুইটারে হামলার দায় স্বীকার করা আতাউল্লাহ বলেছে, মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছাড়া তাদের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই। এ যুদ্ধ রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আদায়ের যুদ্ধ। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে এ ধরনের হামলা পুরো পরিকল্পনাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিতে পারে, এমনই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতনের মুখে অধিকাংশ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসার পর রাখাইনে তাদের শক্তি কমে গেলেও কিছু সন্ত্রাসী যে রয়ে গেছে সেটিই প্রমাণ করে এ হামলা। এমন অবস্থায় মিয়ানমারে যদি ফের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু হয় তাহলে আবারও রোহিঙ্গার চাপ আসতে পারে বাংলাদেশ সীমান্তে। এদিকে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে এ ধরনের হামলা উদ্দেশ্যমূলকও হতে পারে, এমন বিশ্লেষণও উঠে আসছে। প্রশ্ন উঠেছে, রোহিঙ্গাদের কিছু উগ্রবাদী সংগঠনের নেতারা আসলেই সমস্যার সমাধান চায় কিনা। কেননা, আরসাসহ সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের কেউই মিয়ানমারে থাকে না। তারা অবস্থান করে পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে। একটি ঘটনা ঘটাতে পারলেই রোহিঙ্গাদের সাহায্য, সহানুভূতি এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সহযোগিতার নামে এ নেতাদের হাতে বিভিন্ন উৎস থেকে চলে আসে বিপুল পরিমাণ অর্থ। অধিকাংশ রোহিঙ্গা অত্যন্ত দরিদ্র এবং অসহায় হলেও নেতাদের অবস্থা তেমন নয়। সে কারণেই তারা চায় না, শান্তিপূর্ণ কোন সমাধান হোক। এর আগে জাতিসংঘের গঠিত আনান কমিশনের পক্ষ থেকে অত্যন্ত ইতিবাচক একটি রিপোর্ট পেশের ছয় ঘণ্টার মধ্যেই মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ৩০টি পুলিশ ও সেনা পোস্টের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। সেই হামলারও দায় স্বীকার করে নিয়েছিল এই আরসা। বেড়েছে নতুন অনুপ্রবেশের আশঙ্কা ॥ মিয়ানমার অভ্যন্তরে মংডুতে দেশটির সেনাবাহিনীর গাড়িতে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের হামলার ঘটনার জের ধরে ফের রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের স্রোত আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার সকালে মংডু শহরের অদূরে স্থল মাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় ৫ সেনা সদস্য গুরুতর জখম হয়েছে। নৌবাহিনীর সদস্যরা গুলি করে হত্যা করেছে এক সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা যুবককে। মিয়ানমার প্রশাসনের ভাষ্য হচ্ছে, আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) সেনা গাড়ি চলাচলের পথে মাইন পুঁতে রেখেছিল। সেনারা আহত হওয়ার পর পাহাড়ের কাছাকাছি অবস্থান করে গাড়িতে হামলা করেছে আরসা ক্যাডাররা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার থেকে হাজারও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য মংডু দংখালী সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। শনি ও রবিবার ভোরে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ ঘোলা পাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ শতাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। এদিন ৫২ জন রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উত্তর রাখাইনে সেনাবাহিনীর গাড়িতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হামলে পড়ার পেছনে কারণ হিসেবে রোহিঙ্গা ফেরত প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করা বলে মন্তব্য করেছেন সীমান্তের অধিবাসীরা। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় নাখোশ আরাকান বিদ্রোহীরা ॥ আগামী ১৫ জানুয়ারি রোহিঙ্গা ফেরতের বিষয় নিয়ে দু’ দেশের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের কথা রয়েছে। রোহিঙ্গা ফেরতের বিষয়ে মিয়ানমার রাজি হওয়ার বিষয় নিয়ে চরম নাখোশ আরাকান বিদ্রোহীরা। সীমান্ত এলাকায় ও বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের (আরএসও) সদস্যরা তা বানচাল করতে পরিকল্পিতভাবে মিয়ানমারে ওই হামলার ঘটনা ঘটিয়ে দেশটির প্রশাসনকে রাগান্বিত করে তুলছে বলে সীমান্তের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গার অনেকে পালিয়ে আসতে জড়ো হচ্ছে বলে জানা গেছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন, শাহপরীর দ্বীপ পয়েন্ট দিয়ে শনিবার ১৬ পরিবারে ৫২ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড তাদের আটক করে টেকনাফ সাবরাং হারিয়াখালী সেনা বাহিনীর ত্রাণকেন্দ্রে নিয়ে যায়। অনুপ্রবেশকারী প্রতিটি পরিবারকে চাল, ডাল, সুজি, চিনি, তেল, লবণসহ ত্রাণ সহায়তা দিয়ে গাড়িযোগে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। আরসা সন্ত্রাসী নিহত ॥ মিয়ানমারে হামলা চালিয়ে দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নাফ নদী হয়ে নৌকাযোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় মিয়ানমার নৌবাহিনী তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলে মারা যায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোপন বৈঠক ॥ মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়ার বিষয়ে উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে চারদিন ধরে মফিজুর রহমান নামে ভয়ঙ্কর এক রোহিঙ্গা জঙ্গী বৈঠকে উপস্থিত থেকে সাধারণ রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে না যাওয়ার প্ররোচনা দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
×