ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ বাংলাদেশী নিহত

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৮ জানুয়ারি ২০১৮

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ বাংলাদেশী নিহত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সৌদি আরবের জিজানে এক সড়ক দুর্ঘটনায় দশ বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। এত আহত হয়েছেন আরও দশজন। রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব (প্রেস) মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম জানান, শনিবার সকালে জেদ্দা থেকে ৮০০ কিলোমিটার দূরে জিজান প্রদেশে ইয়েমেন সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের। শাহীন শাজাহান নামের এক প্রবাসী বাংলাদেশী জানিয়েছেন, তার ভাই আমির হোসেনও রয়েছেন নিহতদের মধ্যে। হতাহতরা সবাই আল্ ফাহাদ নামে একটি সৌদি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। শনিবার সকালে কোম্পানির পিকআপে করে তারা মোট ২০ জন কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় পেছন থেকে একটি গাড়ির ধাক্কায় পিকআপটি উল্টে যায়। রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্ঘটনাস্থলেই আট জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান আরও দুই জন। জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রম কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম বলেন, তারা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়েছেন। সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। আল ফাহাদ কোম্পানিতে কর্মরত ফরিদুল ইসলাম নিহতদের মধ্যে ছয় বাংলাদেশীর নাম জানাতে পেরেছেন। এরা হলেন সিরাজগঞ্জের দুলাল, টাঙ্গাইলের সফিকুল, নারায়ণগঞ্জের মতিউর রহমান, নরসিংদীর আমির হোসেন ও হৃদয় এবং কিশোরগঞ্জের জসিম। এদিকে সৌদি আরবের আলহাসা কাতার রোডে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাদল (৩৬) নামে আরেক বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায় বলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা জানিয়েছেন। আমির হোসেনের বাড়িতে মাতম ॥ স্টাফ রিপোর্টার নরসিংদী থেকে জানান, সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আমির হোসেন (৫০) এর বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের বাউশিয়া গ্রামে চলছে শোকের মাতম। ওই গ্রামের মৃত আবুল কালাম মিয়ার পুত্র আমির হোসেন সাড়ে ৮ বছর পূর্বে সৌদি আরবে আল ফাহাদ কোম্পানিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে চাকরি শুরু করেন । বাংলাদেশ সময় রবিবার সকাল ৬টায় সৌদি আরবে জিজান প্রদেশে নরসিংদীর আমির হোসেন ও মোঃ ইদন মিয়াসহ ১০ বাংলাদেশী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। সরেজমিনে নরসিংদী সদর উপজেলার দুর্গমচর এলাকা বাউশিয়া গ্রামে গিয়ে জানা যায় এক ছেলে দুই মেয়ের জনক আমির হোসেন ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে ২৫০ রিয়াল বেতনে সৌদি আরবে চাকরি করতেন। স্বল্প বেতনভোগী আমির হোসেনের সংসার চলতো অতিকষ্টে। অসুস্থ মা সোনাব্বরের নেছা (৭০) দীর্ঘদিন যাবত শয্যাশায়ী। ছেলে রবিউল্লাহ (১৭) স্থানীয় রসুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র এবং মেয়ে সামসুন্নাহার (১৪) একই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। অপর মেয়ে সাবিনা (১০) বাউশিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। নিহত আমির হোসেনের স্ত্রী শাহানা বেগম (৪৬) জানান, আমার অসুস্থ শাশুড়ির চিকিৎসা খরচ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ সাংসারিক খরচাদি জোগাতেন স্বামী আমির হোসেন। এখন এ সংসার কিভাবে চলবে এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন শাহানা। তিনি জানান, ২ বছর পূর্বে আমির হোসেন বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ মাকে দেখার জন্য দেশে আসার কথা মোবাইল ফোনে জানিয়ে ছিলেন আমির হোসেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আর জীবিত আসা হলো না তার। নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, সৌদি সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পেছন দিক থেকে তীব্র গতিতে আল ফাহাদ কোম্পানির পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বহনকারী গাড়িকে ধাক্কা দেয়। এ সময় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের গাড়িটি উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আমির হোসেন ও মোঃ ইদনসহ ১০ বাংলাদেশী নিহত হন। আহত হয় আরও ১৫ পরিচ্ছন্নতাকর্মী। অপর আহত মোঃ ইদন মিয়ার বাড়ি রায়পুরা উপজেলার সাপমারা গ্রামে বলে জানা গেছে। এলাকাবাসী জানায়, আমির হোসেন খুব ভাল মানুষ এবং সংসারের উপার্জনকারী ছিলেন। এখন এ সংসারটি কিভাবে চলবে এ নিয়ে চিন্তিত সকলে। দেলদুয়ার ও কালিহাতীতে আহাজারি ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল থেকে জানান, সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে দুইজনের বাড়ি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার ও কালিহাতি উপজেলায়। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবার খবর বাড়িতে পৌঁছলে মাতম শুরু হয় পরিবার দুটিতে। দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল ইউনিয়নের ডুবাইল গ্রামের বাড়িতে এখন চলছে মৃত্যু শোকে আহাজারি। আব্দুর রহিম মিয়ার ছেলে আমিন মিয়া (৩৩) সৌদি আরবে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। এ খবর বাড়িতে পৌঁছলে মাতম শুরু হয়। রবিবার দুপুরে আমিন মিয়ার (৩৩) বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বৃদ্ধ বাবা রহিম মিয়াকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। তার মায়ের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। স্বামী শোকে তার স্ত্রী হ্যাপী বেগম নির্বাক। প্রতিবেশীরা জানান, রহিম মিয়া তার দুই ছেলে আমিন ও ফিরোজ মিয়াকে ধার ও সুদে টাকা এনে সৌদি আরব পাঠান। এর মধ্যে বড় ছেলে আমিন মাত্র দুই মাস আগে সৌদি আরব যায়। তাদের বাড়ি ঘরের অবস্থাও ভাল নয়। আমিন মিয়া বিয়ে করেছেন তিন বছর আগে। কিন্তু কোন সন্তান নেই। ছোট ভাই ফিরোজের একটি মেয়ে রয়েছে। একই চিত্র কালিহাতী উপজেলার কস্তুরী পাড়া গ্রামে। নিহত হামেদ আলীর ছেলে শফিকুল ইসলামের (৩৫) বাড়িতেও কান্নার রোল পড়েছে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজনরা নানাভাবে সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করছেন।
×