ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খাসিয়া পান এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৮ জানুয়ারি ২০১৮

খাসিয়া পান এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সিলেটর মৌলভীবাজার হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের এলাকায় বন ও পাহাড়ে খাসিয়া আদিবাসীদের বসবাস। পান চাষ এ অঞ্চলের আদিবাসীদের প্রধান জীবিকা। তবে এই চাষ পদ্ধতি অন্য এলাকার চেয়ে ভিন্ন। এখানকার বন-পাহাড়ে আদি পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক বনগাছে বহু যুগ থেকে পান চাষ করা হয়। পানকে খাসিয়া ভাষায় বলা হয় পাথা। আর এ পান শুধু খাসিয়ারাই চাষ করছে বলে সবার কাছে খাসিয়া পান বলে পরিচিত। জুমে লতানো পানগাছের পরিচর্যা করেন মূলত খাসিয়া পুরুষরা বছরে একবার গাছের ডালপালা ও পাতা ছেঁটে দেয় তারা। এছাড়া ছাঁটানো ডালপালা ও পাতা পানগাছের গোড়ায় দিতে হয় বছরে একবার। ডালপালা ও পাতা পচে প্রাকৃতিক জৈব সার তৈরি হয়। তবে এখন অনেকে বাজার থেকে জৈব সার কিনে নিজেদের পান জুমে বেশি ফলানোর আশায় দিয়ে থাকে। খাসিয়া পুরুষরা লু-উ নামে (অর্থ মই) এক ধরনের বাঁশের মই দিয়ে পান তুলে থাকে। পান তোলার সময় এরা সঙ্গে পান সংগ্রহ করার জন্য ঝুড়ি রাখে। এই পান তুলে রাখা হয় ঝুড়িতে। পরে পান সংগ্রহ করে জুম থেকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসেন খাসিয়া পুরুষরা। আর খাসিয়া নারীরা ঘরে বসে পান গুছিয়ে তা বিক্রি করে। খাসিয়া আদিবাসীরা মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। তাই পরিবারে নারীদের অধিকারই বেশি। হিসেবে ১২টি পান পাতায় এক গুছি ও ১২টি গুছিতে এক কান্তা আর ১২ কান্তায় এক কুড়ি। তাদের নিজেদের মধ্যে নারী শ্রমিকও আছেন, যারা শুধু নিজের পুঞ্জিতে পান গুছি করে। এক কুড়ি গুছি করলে পারিশ্রমিক পাওয়া যায় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। লাউয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জির গ্রামপ্রধান ফিলাপথমী জানান, প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে খাসিয়া আদিবাসী নারীরাই এ এলাকার বাজারে নিয়ে নিজেদের পান বিক্রি করত। তবে এখন স্থানীয় বাঙালি ক্রেতারা খাসিয়া পুঞ্জিগুলোর বাড়িতে বাড়িতে এসে পান কেনেন নারীদের কাছ থেকে। খাসিয়া পানপাতায় সমতল অঞ্চলের পানের চেয়ে ঝাঁজ বেশি। খাসিয়া আদিবাসীরা পান জুমে কাজের সময় শরীরে ছোটখাটো ঘা হলে রক্ত বন্ধ করার জন্য বুনো ওষুধ হিসেবে পানপাতা ব্যবহার করে। বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের জন্য পানের উৎপাদন বেশি হওয়ায় পানের দাম কম থাকে। কুড়িপ্রতি ৪০০-৫৫০ টাকা আর শুকনো মৌসুমে পানের উৎপাদন কম হওয়ায় কুড়িপ্রতি ২৫০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর পানের দাম অনেক কম। খাসিয়া পান এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
×