ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পে অনিয়ম

খামার আছে পশুনেই

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৮ জানুয়ারি ২০১৮

খামার আছে পশুনেই

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ নৃতাত্তিক আদিবাসীদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে নির্মিত কিশোরীগঞ্জ উপজেলার একমাত্র সরকারী অনুদানের গরুর মোটাতাজাকরণ খামারটির ঘর থাকলেও নেই খামারে কোন গবাধিদপশু। এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলা পরিষদের সংশ্লিষ্টদের গাফলতির কারণে খামারের কার্যক্রম থমকে গেছে। এটি তৈরিতে উপজেলা পরিষদের সংশ্লিষ্টরা ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে। বিভিন্নজন অভিযোগ করে জানায়, ২০১২ ও ২০১৩ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম আজম থাকাকালে প্রধানমন্ত্রীর দফতর হতে ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছিল, যা দিয়ে নৃতাত্ত্বিক আদিবাসীদের গরুর খামারের ঘর তৈরি ও গরু ক্রয় করে মোটাতাজাকরণের প্রকল্প চালু করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু উপজেলায় কোন আদিবাসী সম্প্রদায় না থাকলেও আদিবাসী দেখিয়ে তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম আজম নিজ হাতে উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের চারমাথা এলাকায় একটি সরকারী গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প চালু করেন। এ জন্য তিনি ৯০ হিন্দু সম্প্রদায়কে সদস্য করে নৃতাত্ত্বিক আদিবাসী সমবায় সমিতি নামে কমিটি গঠন করেছিলেন। এরপর ১০ হাজার করে ২০ টি গরু দুই লাখ টাকায় ক্রয় এবং খামারের ঘর তৈরি করেন ৫ লাখ টাকায়। যা সমিতির সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেদিকে আর ফিরেও তাকাননি। এতে করে হয় অনিয়ম ও দুর্নীতি। ফলে গরুর খাওয়া ও রাখালের বেতন প্রদানে অর্থসঙ্কট দেখা দেয়। তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা বদলি হয়ে গেলে তার ফাইলটিও উপজেলা পরিষদে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে কথা বলা হলে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মেহেদী হাসান জানান, চাঁদখানা ইউনিয়নের চারমাথা এলাকায় একটি সরকারী গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প আছে কিনা এ ধরনের কোন তথ্য বা ফাইল আমি দেখতে পাইনি। অপরদিকে চাঁদখানা নৃতাত্ত্বিক আদিবাসী সমবায় সমিতির সভাপতি ও রামকৃষ্ণ রায় জানান, আগের ইউএনও গোলম আজম নিজেই সব কিছু করেছেন। সরকারীভাবে গরু কেনা ও ঘর নির্মাণে কত টাকা বরাদ্দ ছিল আমাদের বলেনি। তবে শুনেছিলাম ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু দায়সারাভাবে খামারের টিনের ঘর আর কম দামের গরু কিনে দেয়। তবে প্রকল্পের জন্য যে ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছিল তাতে টিনের চালে লোহার এঙ্গেল দেয়ার কথা শুনেছিলাম কিন্তু ঘরটির কিছু অংশ পাকা করলেও টিনের চালে দেয়া হয় কাঠ। এরপর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে ২০ টি গরু ২ লাখ টাকায় কিনে দিয়েছিল। কিন্তু গরুগুলো মোটাতাজাকরণে আর কোন অর্থ দেননি। তিনি আরও জানান, ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে ওই ইউএনও বদলি হয়ে গেলে খামারে নিয়োজিত রাখালের বেতন বকেয়া পড়ে। তিনটি গরু বিক্রি করে রাখাল বেতন নেয়। চারটি গরুর মৃত্যু হয়। বাকি ১৩টি গরু বাঁচাতে খামার হতে বাইরে তা ১৩ টি পরিবারকে পালতে দেয়া হয়। এদিকে সমিতির সভাপতি ১৩টি গরু থাকার কথা জানালেও গরু পাওয়া যায় ৭টি। বাকি ৬টি গরুর হদিস তিনি জানাতে পারেননি। এলাকার অনেকে জানান, ওই প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সরকারীভাবে ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু এটি অতিরিক্ত ৮ লাখ টাকা খরচ করে বাকি ১৮ লাখ টাকার অনিয়ম করা হয়। এই ঘটনা নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে বলে এলাকাবাসী দাবি করেছে।
×