ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের উন্নয়নের ৯ বছর ॥ জনগণের বিবেচনায় কতটুকু থাকবে?

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৮ জানুয়ারি ২০১৮

সরকারের উন্নয়নের ৯ বছর ॥ জনগণের বিবেচনায় কতটুকু থাকবে?

(গতকালের পর) ২৫. জানুয়ারি ২০০৯ থেকে নবেম্বর ২০১৭ মেয়াদের মোট ৯২৫৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের মোট স্থাপিত সক্ষমতা ক্যাপটিভসহ ১৫৮২১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে এবং বিদ্যুতের সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৮৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। নবেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত মোট সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬২২ সার্কিট কিলোমিটার। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা-উত্তরকালে জাতীয় অগ্রগতির লক্ষ্যে যেসব দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন, তন্মধ্যে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিতকরণ ছিল অন্যতম। জাতির পিতার দূরদর্শী নির্দেশ মতে ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট তৎকালীন বিদেশী তেল কোম্পানি শেল-এর মালিকানাধীন ৫টি বৃহৎ গ্যাসফিল্ড, যথাÑ তিতাস, হবিগঞ্জ, রশিদপুর, কৈলাসটিলা ও বাখরাবাদ বাংলাদেশ সরকার মাত্র ৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড বা ১৭.৮৬ কোটি টাকায় ক্রয় করে। বঙ্গবন্ধুর এই দূরদর্শী সিদ্ধান্ত দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এক দৃঢ় অভিযাত্রার সূচনা করে। ২৬. বহুমুখী ও কার্যকর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার কারণেই দৈনিক প্রায় ২৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। গ্যাসের মজুদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন অনুসন্ধান ও উৎপাদন কার্যক্রম আরও জোরদার করা জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জাতিসংঘের সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল এবং আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের রায়ের ফলে বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা অর্জিত হয়েছে, যা দেশের আয়তনের প্রায় ৮২ শতাংশ। সমুদ্র বিজয় এই সরকারের এক বিশাল অর্জন। ২৭. বর্তমানে ৪০.৫৮ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চার-লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। বর্তমান সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে দেশে প্রথমবারের মতো ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনের সংস্থান রেখে সিরাজগঞ্জের হাটিকামরুল মোড় থেকে নাটোরের বনপাড়া মোট পর্যন্ত ৫১.২৬ কিলোমিটার দুই-লেন বিশিষ্ট জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমান সরকারের এই মেয়াদে প্রায় ৩৯৩.৬৮ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক উভয় পাশে একস্তর নিচু দিয়ে পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার-লেনে উন্নীতকরণের কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তন্মধ্যে ঢাকা-পদ্মা সেতু-ভাঙ্গা জাতীয় মহাসড়ক, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা জাতীয় মহাসড়ক, এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক এবং আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ক অন্যতম। অনুরূপভাবে আরও ৭৯৩.৩০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চার-লেনে বা ধীরগতির যানবাহনের জন্য উভয় পাশে এক স্তর নিচু দিয়ে পৃথক পৃথক সার্ভিস লেনে সংস্থানসহ চার-লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন। নিরবচ্ছিন্ন জাতীয় মহাসড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার প্রধান প্রধান নদীসমূহের ওপর সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশে প্রথম ৩২.২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাতাল রেল নির্মিত হতে যাচ্ছে। গাবতলী-ধানম-ি-পান্থপথ-হাতিরঝিল লিংক রোড-নগরপাড়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ আন্ডারগ্রাউন্ড গজঞ খরহব-৫ [দক্ষিণাংশ] নির্মাণের লক্ষ্যে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নিমিত্ত কারিগরি সহায়তা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশের সংযোগ স্থাপন, যানজট নিরসন, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ সহজীকরণ এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যে ৮,৪৪৬ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে রেলওয়ের উন্নয়ন বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে। ২৮. বাংলাদেশ রেলওয়েকে নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব, যুগোপযোগী ও গণমুখী করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রেলপথ বিভাগকে ৪ ডিসেম্বর ২০১১-তে স্বতন্ত্র রেলপথ মন্ত্রণালয়ে উন্নীত করা হয়েছে। অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য অধিক অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। খষড়ুফ’ং খরংঃ জরিপে বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি কন্টেইনার পোর্টের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর পাঁচ ধাপ এগিয়ে ৭৬তম থেকে ৭১তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২৭ ধাপ এগিয়ে ৯৮তম স্থান থেকে ৭১তম স্থানে উন্নীত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌনিরাপত্তা আইনসমূহের যথাযথ প্রয়োগের কারণে বিগত দুই বছর ধর্মীয় উৎসবকালীন নৌপথে জীবনহানিমূলক কোন দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়নি। নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে ২০১২ সাল থেকে ফিমেল ক্যাডেট প্রশিক্ষণ এবং তিন বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রী (পাস) কোর্সের স্থলে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’র আওতায় চার বছরের অনার্স ডিগ্রী প্রবর্তিত হয়েছে। ২৯. প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালকে ‘পর্যটন বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এর কার্যকাল ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে। এ সময়ের মধ্যে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। ডড়ৎষফ ঞৎধাবষ ধহফ ঞড়ঁৎরংস ঈড়ঁহপরষ (ডঞঞঈ)-এর সূত্রমতে ২০১৬ সালে জিডিপি-তে এই শিল্পের সরাসরি অবদান ৫.৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সামগ্রিকভাবে ১০.২ বিলিয়ন ডলার। এই শিল্পে সরাসরি প্রায় ১১ লাখ লোক নিয়োজিত আছে এবং সামগ্রিকভাবে এই শিল্পে প্রায় ২২ লাখ লোক জড়িত। ৩০. বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে ১৫ হাজার নতুন পদসৃজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিজিবিতে পুরুষ সৈনিকের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো ২০১৬ সালে ১৯০ নারী ভর্তি হয়েছে। ৩১. মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বর্তমান সরকারের একটি প্রধান রাজনৈতিক অঙ্গীকার। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত অপরাধ-সংক্রান্ত ৫৩টি মামলায় ২০৮ জনের বিরুদ্ধে তদন্তকার্য সম্পন্ন করেছে। তন্মধ্যে ২৯টি মামলায় ৫৬ জনের বিচারকার্য সম্পন্ন করে ২৯ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড এবং ২২ জনের বিরুদ্ধে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়, যার মধ্যে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। বর্তমানে ১৮টি মামলায় ১৫২ জনের মধ্যে বিরুদ্ধে বিচারের কার্যক্রম বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। বিভিন্ন কোর্ট, থানা ও জনগণের কাছ থেকে সারাদেশে ৩ হাজার ৫১৫ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৬৬০টি মামলা/অভিযোগ অনুসন্ধান/তদন্তের অপেক্ষায় আছে। ৩২. মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী গৃহীত জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কাজ করে যাচ্ছে। এই অধিদফতরের কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে ১ হাজার ৭০৬ সংখ্যক জনবলের স্থলে ৮ হাজার ৪২১ সংখ্যক জনবলের সমন্বয়ে অস্ত্র ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোজন করে একে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মাদকের প্রবেশমুখ বন্ধ করার জন্য কক্সবাজারের টেকনাফে বিশেষ জোন সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকার কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেই লক্ষ্যে নতুন নতুন কারাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কেরানীগঞ্জে নতুন কারাগার নির্মাণ করে পুরান ঢাকায় অবস্থিত প্রায় আড়াইশ বছরের কেন্দ্রীয় কারাগারকে কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া সিলেট ও খুলনাসহ অন্যান্য জেলায় নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের স্থানে ঐতিহ্য সংরক্ষণপূর্বক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ এবং কনভেনশন সেন্টার, খেলার মাঠ ও পার্ক স্থাপনের কাজ চলছে। বর্তমানে কারাগারে বন্দীদের বিভিন্ন উপার্জনমুখী কর্মে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত ভাষণে সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ঘোষণা করেছিলেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরিতা নয়’ এবং ‘সকল বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানই হবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র’। এর ধারাবাহিকতায় স্বাধীন ও আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন কূটনীতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেনা ও মূল্যবোধসমৃদ্ধ বলিষ্ঠ পররাষ্ট্রনীতির অনুসরণে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক নিবিড়করণসহ দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকার কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ১৯-২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ মেয়াদে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। এবারের অধিবেশন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন হাজার হাজার নিরীহ রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিতর্ক পর্বে প্রদত্ত বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণসমূহ তুলে ধরে এর স্থায়ী সমাধানে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ৫টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করেন, যা সর্বমহলে সমাদৃত হয়। ৩৩. গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের আওতাধীন গ্রন্থাগারসমূহের মাধ্যমে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ৫৯ হাজার পাঠককে গ্রন্থাগার ও তথ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারসহ ৬টি বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারে বিনামূল্যে ১ লাখ ৫০ হাজার ৩০০ জনকে ইন্টারনেট-সেবা প্রদান করা হয়েছে। সারাদেশে পাঠক সৃষ্টির লক্ষ্যে বেসরকারী গ্রন্থাগারকে নগদ টাকা ও বই অনুদান দেয়া জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের একটি প্রধান কাজ। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মাধ্যমে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৯৫টি বেসরকারী পাঠাগারকে মোট ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। ৩৪. সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গণমাধ্যমকে উন্মুক্ত করে দেয়ায় সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। বর্তমান সরকারের গত আট বছর মেয়াদে সাত শতাধিক পত্রিকার নিবন্ধন প্রদানসহ বেসরকারী খাতে ৩১টি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, ২৪টি এফএম বেতার ও ৩২টি কমিউনিটি রেডিওর লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ৪টি সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের পাশাপাশি বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় ২৬টি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে; প্রচাররত এফএম বেতারের সংখ্যা ২১ এবং কমিউনিটি রেডিওর সংখ্যা ১৭। দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক এবং ষান্মাসিক প্রভৃতি মিলে ২৮ শতাধিকের বেশি পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। ৩৫. সাংবাদিকদের বৃহত্তর কল্যাণের বিষয়টি আইনী কাঠামোর আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে ‘সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৪’ এবং ‘সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট বিধিমালা, ২০১৬’ প্রণয়ন করা হয়েছে। উক্ত আইনের আওতায় প্রথমবারের মতো ১৯৬ দুস্থ, অসচ্ছল, দুর্ঘটনায় আহত ও মৃত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়েছে। ৩৬. স্বাধিকার ও স্বাধীনতাকামী বাঙালী জাতি ও জাতিসত্তাকে সমূলে বিনাশ করার লক্ষ্যে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে যে বর্বরোচিত গণহত্যা, নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, তা ছিল ইতিহাসের একটি কলঙ্কিত অধ্যায়ের সূচনা এবং যার ব্যাপ্তি ছিল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন পর্যন্ত। এই প্রেক্ষাপটে সরকার ২৫ মার্চ-কে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণাক্রমে দিবসটি জাতীয়ভাবে প্রথমবারের মতো পালন করেছে। ৩৭. ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা খাতে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার ও বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবারের সদস্যগণকে স্বল্পমূল্যে রেশন সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেশনখাতে ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের দাফন-কাফন বাবদ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত ছয় মাসে ৪ কোটি টাকা সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। ৩৮. ২০১৩ সালে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার অনুকূলে সম্মানি ভাতা প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হয়, যা বর্তমান সরকারের একটি বিশেষ উদ্যোগ। এই প্রেক্ষাপটে ‘খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা বিতরণ নীতিমালা-২০১৬’ প্রণয়ন করা হয়েছে। উক্ত নীতিমালার আলোকে বর্তমানে ৬৭৬ খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা; ৬৮ জন বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ২৫ হাজার টাকা; ১৭৫ জন বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ২০ হাজার এবং ৪২৬ জন বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ১৫ হাজার টাকা হারে সম্মানি ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা খাতে ১৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্মানি ভাতাপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার ও মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে স্বল্পমূল্যে রেশনসামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিল প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় তালিকাভুক্ত করা এবং যেসব অমুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন তাদের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য সুপারিশ করে থাকে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সুপারিশের আলোকে এ পর্যন্ত ১৮৮ মহিলা মুক্তিযোদ্ধার (বীরাঙ্গনার) নাম গেজেটে প্রকাশ করা হয়েছে এবং তাদের ভাতাভোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অধিকন্তু, তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৬৪টি জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ-ব্যয়ের জন্য ১৫৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকার সংস্থান আছে। তন্মধ্যে ৪৯টি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে, ১১টির নির্মাণকাজ চলমান এবং ৪টি জেলায় নির্মাণ-প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হচ্ছে।
×