ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সময় থাকতে সাবধান

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৮ জানুয়ারি ২০১৮

সময় থাকতে সাবধান

চালের দাম গত কয়েক মাস ধরেই চড়া। একই সঙ্গে পেঁয়াজের। আমদানি করেও এই দুটো পণ্যের দাম এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। অবশ্য বাজারে নতুন ধান-চাল ও পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। তবে গতি কম। বিরূপ আবহাওয়া, শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় ক্লোরোফিল কমে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে বোরো বীজতলা। অন্যদিকে রোদের তাপ ও পরিমাণ কম থাকায় সময়মতো ধান কাটা, শুকানো ও মাড়াই করা যাচ্ছে না। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে আরও বাড়তে পারে ধান-চালের দাম। সরকার ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য বাড়ালেও ক্রয় কেন্দ্রগুলোতে তেমন সাড়া নেই, ধানে আর্দ্রতা বেশি থাকায়। এর সুযোগ নিতে পারেন চাতাল মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগীরা। ২০১৭তে দেশে আকস্মিক পাহাড়ী ঢল ও অতিবৃষ্টিতে হাওড় অঞ্চলে ফসলহানি হয়েছে ব্যাপক। অতিবৃষ্টি ও বন্যা হয়েছে উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে। অন্যদিকে ব্যাপক পাহাড়ধস ঘটেছে রাঙ্গামাটিসহ পার্বত্য অঞ্চলে। এর অনিবার্য নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ধান, চাল, শাক-সবজিসহ ফসল উৎপাদনে। পাশাপাশি বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে আসা ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলায় সরকার আদৌ প্রস্তুত ছিল না। দুর্বল তদারকি ব্যবস্থাসহ সরকারী গুদামগুলোতে চালের মজুদও ছিল কম। পাশাপাশি ছিল ধান-চালের চাতাল মালিক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী সর্বোপরি আমদানিকারকদের কারসাজি। ফলে বাজারে চালের দাম বেড়ে যায় হু হু করে, প্রতি কেজিতে গড়ে ৩০ শতাংশ। এর অনিবার্য অভিঘাত গিয়ে পড়ে দেশের দরিদ্র মানুষের ঘাড়ে। বাস্তবতা হলো, সাধারণ মানুষের আয়ের ৮০ শতাংশই ব্যয় হয় দৈনন্দিন চাল কেনায়। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং বা সানেম এই বিষয়টিই বিশ্লেষণ করে বলেছে, এর ফলে ২০১৭ সালে দশমিক ৩২ শতাংশ মানুষ নেমে গেছে দারিদ্র্যসীমার নিচে। তবে ৩ কোটি ৮০ লাখ গরিবের মধ্যে সোয়া ৫ লাখ মানুষ তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। কেননা, সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রিসহ খোলাবাজারে ২৪ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ব্যবস্থা করেছে। জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় চাল আমদানির ওপর যাবতীয় শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তদুপরি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ২ হাজার ৯১২ কোটি টাকার চাল আমদানি করেছে বিভিন্ন দেশ থেকে। বেসরকারী পর্যায়েও প্রচুর চাল আমদানি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নতুন ফসল উঠতে শুরু করেছে। উৎপাদনও আশাব্যঞ্জক। অন্তত এই মুহূর্তে দেশে চালের ঘাটতি নেই, এটুকু নিশ্চিন্তে বলা যায়। তবে আশঙ্কার কথা এই যে, ইত্যবছরে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বাড়তির দিকে। অন্যদিকে সরকারের চালের মজুদ সন্তোষজনক নয়। সুতরাং আগামীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অতিরিক্ত খাদ্যের চাহিদা মোকাবেলা করাসহ জরুরী পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার তথা খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত বাজার মনিটরিংও জরুরী। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। ‘সানেমের’ বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটা সাময়িক। আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীদের মনে রাখতে হবে যে, ধান-চালের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে নয়; বরং যুক্তিসঙ্গত মূল্যবৃদ্ধির দিকে নজর দেয়া বাঞ্ছনীয়। সরকারকেও বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। সরকারী ক্রয়কেন্দ্রগুলোকে আমন ধান ক্রয়ে এখনই সক্রিয় করে তুলতে হবে। তা না হলে আগামীতে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ধান-চালের বাজারে।
×