ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাক-মার্কিন টানাপোড়েন

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৮ জানুয়ারি ২০১৮

পাক-মার্কিন টানাপোড়েন

পাকিস্তানের মাটি থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক নির্মূলে ব্যর্থতার অভিযোগে দেশটির সঙ্গে প্রায় সব ধরনের নিরাপত্তা সহযোগিতা স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হাক্কানি নেটওয়ার্ক ও আফগান তালেবানদের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ যতদিন ব্যবস্থা না নেবে ততদিন এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবেÑ এমনটাই সিদ্ধান্ত আমেরিকার। নতুন বছরের শুরুতে আমেরিকা-পাকিস্তান সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হবে ওই সিদ্ধান্তের ফলে, এটা বাস্তবতা। অথচ এ দুটি দেশ মিত্রতার বন্ধনেই আবদ্ধ থেকেছে বহু বছর। অবশ্য সম্প্রতি রাজনৈতিক চালচিত্র পরিবর্তিত হচ্ছে। পাকিস্তান ঝুঁকছে চীনের ওপর যা আমেরিকার পছন্দ হওয়ার কথা নয়। চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরে ইতোমধ্যে চীন বিনিয়োগ করেছে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার। একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের মুদ্রা ব্যবহারে অনুমতি দিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সব সামরিক সহায়তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত তাই বিনা মেঘে বজ্রপাত নয়। নয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনের আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে বিগত বছরের শেষার্ধের শুরু থেকেই। সেই মেঘের ঘনত্ব বেড়েছে। নতুন বছরের প্রথম দিনই ট্যুইটারে ট্রাম্পের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় পাকিস্তান সম্পর্কে তার অস্বস্তি ও উষ্মার বিষয়টি। শেষমেশ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র পাকিস্তানের ব্যাপারে সামরিক সহায়তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। আফগান তালেবানদের বিষয়ে পাকিস্তান কঠোর নয়; আমেরিকার এই অভিযোগ মোটেই নতুন নয়। ব্যাপারটা অনেক পুরানা এবং গভীর। যদিও এ প্রসঙ্গে সহজ ব্যাখ্যাটা হলো এরকম যে, পাকিস্তান বা এর জেনারেলরা সব সময় জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দেয় সেটা এবার ট্রাম্পও বুঝেছেন এবং তিনি সরব হয়েছেন। কিন্তু ব্যাপারটা এত সরল নয়। আমেরিকা, আফগান সরকার এবং পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মধ্যে কোন সন্দেহ নেই যে পাকিস্তান তাদের কৌশলগত স্বার্থে তালেবানকে গোপনে সাহায্য-সহযোগিতা করছে। কিন্তু আমেরিকার এই হুমকি ধমকিতে তা কি বন্ধ করবে পাকিস্তান? সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এটা বলা যায় যে, পাকিস্তান এখন আমেরিকার ‘আধা মিত্র-আধা সমস্যা।’ ২০০১ সালে আফগান যুদ্ধে পশ্চিমা বাহিনীগুলোকে পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে আল কায়েদার বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অনুমতি দেয়ার সময়ও ইসলামাবাদ আফগান জঙ্গীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিল বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ট্রাম্প জঙ্গী দমনে পাকিস্তানের ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করে আসছেন। পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। তাদের বড় অর্থসহায়তাকারী দেশ আমেরিকা আবার সন্ত্রাসবিরোধী রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি তৈরিতে সচেষ্ট। বিষয়টি কিছুটা গোলমেলেই বটে, অর্থাৎ বিভ্রান্তিকর। কারণ, সন্ত্রাস নির্মূলের নামে আমেরিকার সন্ত্রাসী কর্মকা- সম্পর্কে বিশ্ববাসী অবগত রয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের টানাপোড়েন বিশ্বশান্তির জন্য অশুভ ইঙ্গিত কিনা, হলে কতখানিÑ সেসব চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন বিশ্লেষকরা। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সন্ত্রাসের যোগফলে কখনও সমাধান হিসেবে শািন্তর প্রাপ্তি ঘটে না। আবার দুটির মধ্যে বিবাদও ভীতিকর। দেখা যাচ্ছে, বর্তমান বিশ্বে শান্তিকামী মানুষ মহাক্ষমতাধর রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে ক্রমশ জিম্মি হয়ে পড়ছে। তারপরও মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে। সেই আশাবাদ থেকেই শান্তিময় জীবনের পথরেখার সন্ধান মেলেÑ এটা সুনিশ্চিত।
×