ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মহিউদ্দিন বাবর

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সিএসআর

প্রকাশিত: ০৭:০০, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সিএসআর

মানবজাতির বৃহত্তর কল্যাণে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারী ও বেসরকারী খাতের একযোগে কাজ করা আজ অত্যাবশ্যক। স্থানভেদে কিছুটা পরিবর্তনীয় হলেও একটি টেকসই উন্নয়ন সমৃদ্ধ বিশ্ব গঠনে ১৭টি লক্ষ্য অর্জনে ঘোষিত ১৬৯ উদ্দেশ্য অর্জনও প্রাসঙ্গিক। এই বিশাল লক্ষ্য অর্জন ও এর সুফল পেতে হলে সরকার ও বেসরকারী খাতের একযোগে কাজ করার কোন বিকল্প নেই। সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত দু’দিনব্যাপী কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির ওপর এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনও সেই বার্তা দিল। সিউলভিত্তিক গ্লোবাল কমিউনিটি এম্পাওয়ারমেন্ট ফোরামের সঙ্গে স্থানীয় সংস্থা বিজকেয়ার ছিল সম্মেলনের আয়োজনে। সত্যিকারের বাণিজ্যিক সামাজিক দায়বদ্ধতা হতে পারে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রকৃত শক্তি। এসজিডি অর্জনে আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে প্রচলিত উৎপাদন ও ভোক্তা ব্যবস্থায়। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার আজ সময়ের দাবি। একই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করতে হবে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সুবিধাভোগী ও ভোক্তারাও মানসম্মত পণ্য ও যথাযথ সেবা পায়। অপচয়রোধে হতে হবে সচেষ্ট। বিশ্বখ্যাত সিএসআর বিশেষজ্ঞ ও সিএসআর ইনস্টিটিউট অব কানাডার প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ওয়েনি ডানের মতে সিএসআর এবং এসজিডির সমন্বয় সাধন জটিল একটি কাজ হলেও এগিয়ে যেতে হলে এর কোন বিকল্প নেই। তার মতে যে কোন ব্যবসায়িক পদক্ষেপ গ্রহণে পরিবেশের ভারসাম্য ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করলেও এ লক্ষ্য অর্জনে মূল ভূমিকা নিতে হবে বেসরকারী খাতকেই। সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও কর্মসংস্থানে বেসরকারী বাণিজ্যিক খাতের ভূমিকাই মুখ্য। আর সে কারণেই অনেক ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্বও বেশি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে গৃহীত বাণিজ্যিক কার্যক্রম জাতিসংঘ ঘোষিত এসজিডি অর্জনের যেমন সহায়ক হতে পারে তেমনি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ভিশন-২০২১ অথবা বাংলাদেশের বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন আজ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে আমাদের চিন্তা ও কর্মকে তখন এর ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমনে বা পরিবর্তনের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে বাণিজ্যিক খাতকে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে থাকা বাংলাদেশের মত দেশগুলোর জন্য বিষয়টির গুরুত্ব অনেক বেশি। এ বিষয়ে সরকার, বেসরকারী খাত, এনজিও এবং সামাজিকভাবে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এটি জোর দিয়ে বলা হয় যে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় মোকাবেলায় বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোকে সামাজিক দায়বদ্ধতা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ইতোমধ্যে অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানই সামাজিক দায়বদ্ধতা বজায় রেখে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে যা এসজিডি ঘোষিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক। সুযোগ আছে আরও ভাল ফল লাভের যদি তারা এসজিডির সঙ্গে অধিক সমন্বয় করে তাদের কার্য পরিচালনা করে। এক্ষেত্রে কিছু প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ রীতিমতো অনুকরণীয়। সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি হতে পারে আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত। ড. আমানুল্লাহর নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপ দলের মতে এ কোম্পানি পরিচালিত নানামুখী উদ্যোগ স্থানীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এবং পরিবেশ বির্পযয় রোধে বিশাল ভূমিকা রাখছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে তারা উল্লেখ করেণ ব্যাপক বনায়নের মাধ্যমে ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণ রোধ যেমন সম্ভব হচ্ছে তেমনি স্থানীয়ভাবে এটি হয়ে উঠছে বিকল্প আয়ের উৎস। আর্সেনিক মুক্ত নিরাপদ পানির জন্য নলকূপ স্থাপন, বিদ্যুতহীন অঞ্চলে গৃহে ব্যবহার্য সোলার সিস্টেমের সুবিধাভোগ করছে স্থানীয়রা। বনায়ন এখন সুবিধাভোগীদের কাছে বাড়তি আয়ের উৎস। এই কার্যক্রমগুলো হতে পারে এসজিডি অর্জনে বাণিজ্যিক সামাজিক দায়বদ্ধতার উদাহরণ। এটি থেকে বেসরকারী খাতের সামাজিক দায়বদ্ধতার গুরুত্বও প্রমাণিত হয়। এই লক্ষ্য অর্জনে আরেকটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের অধীনে বেসরকারী খাতের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণ। এর মাধ্যমে সরকার যেমন এসজিডির দেশীয় লক্ষ্য পূরণ করতে পারে তেমনি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যেতে পারে দ্রুত। ইউএসএইডের অর্থায়নে পরিচালিত আরণ্যক ফাউন্ডেশন শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের সঙ্গে কাজ করছে বনায়ন ও তা সংরক্ষণের। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ফরিদউদ্দিন আহমেদের মতে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে গৃহীত বনায়ন ও বন সংরক্ষণ দুভাবে ভূমিকা রাখছে। পরিবেশ সংরক্ষণে পাশাপাশি স্থানীয়দের বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে। এ কথা সত্যি যে, নির্দিষ্ট সংজ্ঞা ও দিকনির্দেশনার অভাবে সামাজিক বাণিজ্যিক দায়বদ্ধতা বিষয়টি নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি বিদ্যমান। বিষয়টি ত্বরান্বিত হয়েছে এসজিডি ঘোষণায়। এই কনফারেন্স এসজিডি ও সিএসআরকে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে একসূত্রে গাঁথায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। পাশাপাশি আকর্ষণ ছিল প্রদর্শনী যেখানে দশটি প্রতিষ্ঠান তাদের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম প্রদর্শন করে। আয়োজনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল তরুণ উদ্যোক্তা ও ছাত্রদের ব্যাপক অংশগ্রহণ। নেক্সটজেন সিএসআর নামক এই কার্যক্রমে তরুণরা ভবিষ্যত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশ সংরক্ষণে বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা ও মতবিনিময় করেণ। বৃহৎ বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সামাজিক দায়বদ্ধতা আজ সময়ের দাবি। পাশাপাশি টেকসই ঊন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জণে সরকার ও বৃহৎ বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একযোগে কাজ করতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ হতে পারে কার্যকর ক্ষেত্র। আগামী প্রজন্ম ও আমাদের আবাস পৃথিবী নামক এই গ্রহের স্বার্থে ঊৎপাদন ব্যবস্থা হতে হবে পরিবেশ বান্ধব। অর্থনীতিতে চাই নতুন নীতিমালা। এর মাধ্যমেই সম্ভব জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জণ। অনুবাদ : আকিল জামান ইনু
×