ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্যমেলা জমজমাট ফ্যাশন স্টল, জুয়েলারি স্টলে উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

বাণিজ্যমেলা জমজমাট ফ্যাশন স্টল, জুয়েলারি স্টলে উপচেপড়া ভিড়

ওয়াজেদ হীরা ॥ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। শীতের প্রকোপ টের পাচ্ছেন খোদ রাজধানীবাসীও। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের না হলেও বিনোদন পেতে ঠিকই বের হচ্ছেন। শীতও দমাতে পারেনি ঢাকার বিনোদনপ্রেমী মানুষদের। ছুটির দিন থাকায় শনিবারও ভিড় জমান ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। সব বয়সী মানুষের পদচারণায় বাণিজ্য মেলা রূপ নেয় মিলন মেলায়। তবে সকালের মিষ্টি রোদে ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে বিকেল আর সন্ধ্যায় শীতের পোষাক জড়িয়ে মেলায় ঘুরেছেন দর্শনার্থীরা। ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় গত দুই দিনই ছিল প্রাণের উচ্ছ্বাস। সোমবার থেকে শুরু হওয়া মেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ হয় ছুটির দিন শুক্রবার। এরই ধারাবাহিকতা ছিল গতকাল শনিবারও। যদিও কিছু অফিস শনিবার খোলা থাকলেও যাদের বন্ধ থাকে তারা ‘মিস’ করেনি মেলায় আসা। বাবা-মায়ের হাত ধরে মেলায় এসেছে ছোট্ট শিশু পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন মেলা শুরুর পর গত দুই দিন শুক্র ও শনিবার মানুষও যেমন বেশি হয়েছে বিক্রিও হয়েছে। মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, সকালের দিকে মানুষের আগমন তেমন একটা ছিল না। তবে দুপুরের পরপরই দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তরুণ-তরুণীদেরা দল বেধে এ দিন মেলায় আসতে দেখা গেছে। বিভিন্ন কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা মেলায় আসেন দল বেধে। পরিবার নিয়ে মেলায় আসা সুমন বাপ্পি জানান, অন্যদিন কাজ থাকে। শুক্রবার এসেছি। সন্তানের আবদারে আবারও আসলাম। আসলে এমন বিনোদনের সুযোগ তো সব সময় মেলে না। তরুণ-তরুণীদের ভিড় ছিল এ দিন বিভিন্ন ফ্যাশন স্টলে। এ ছাড়াও জুয়েলারি স্টলগুলোও ছিল লোকে লোকারণ্য। বাবা মায়ের হাত ধরে মেলায় এসেছে ছোট্ট শিশু তৌসিফ (১২)। মিনি শিশু পার্কের বিভিন্ন রাইডে উঠে বেশ খুশি হয়ে বলে, মেলা আমার খুব ভাল লাগে। শিশুটির বাবা আমিনুল ইসলাম বলেন, এটা আমাদের শহরবাসীর জন্য বড় একটা বিনোদন। আমরা নগরবাসী একটু স্বস্তি পেতে কত কিছুই না করি। এবারের মেলায় খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে খুশি এই সরকারী কর্মকর্তা। তরুণীরা ভিড় করেন ফেব্রিক্সের বিভিন্ন স্টলে। বিভিন্ন অফারে নানা থ্রি-পিস কিনতে মাতোয়ারা তারা। দুটি কিনলে একটি ফ্রি। দামও সাধ্যের মধ্যে। তিনটি থ্রি-পিস ৫৯৯টাকা। কোন স্টলে কাপড়ের মানভেদে ৯৯৯ বা ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তরুণীরা বার বার পছন্দসই কিনতে নড়ে চেড়ে দেখছেন। বিভিন্ন প্রিন্টের স্যালোয়ার কামিজেরও ব্যাপক চাহিদা তরুণীদের। এ দিকে, গোল্ডেন অফারের নামে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ডিজাইনের ব্লেজারের স্টলগুলো ছিল তরুণদের মূল আকর্ষণ। ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে নানা ডিজাইনের ব্লেজার। এ ছাড়াও মোদি ও মুজিব কোট বিক্রি হচ্ছে একটু সাশ্রয়ী মূল্যে। মেলায় গৃহিনীদের দেখা গেছে কোকারিজের বিভিন্ন স্টলে ভিড় করতে। ঘরের প্রয়োজনীয় পণ্য নিতে তারা স্বামীদের নিয়ে ছুটেছেন এক স্টল থেকে অন্য স্টলে। বিক্রেতা আবুল মানছুর বলেন, ছুটির দিনে কেনাকাটা ভাল হয়। অন্যান্য দিনে তেমন একটা হয় না। আগামীতে আরও বিক্রি বাড়বে এমন প্রত্যাশা তার। ছুটির দিন হওয়ায় অফিস ও কাজের চাপ না থাকায় অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে দেখেছেন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফার্নিচার প্যাভিলিয়ন। ফার্নিচারে, হাতিল, আখতার, নাভানাসহ নামীদামী ব্র্যান্ডগুলো কী অফার দিচ্ছে কত ছাড় দিচ্ছে তা অনেকেই ঘুরে ঘুরে জেনে নিচ্ছিলেন। ফার্নিচারের প্যাভিলিয়নগুলোতে কেনার চেয়ে ঘুরতেই বেশি দেখা গেছে। স্কুল-কলেজের তরুণ-তরুণীরা জুয়েলারি স্টলগুলোতেও বেশ ভিড় জমিয়েছে এ দিন। এ ছাড়াও বিভিন্ন শাল কিনতেও দেখা গেছে। বিভিন্ন সিঙ্গেল শাল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জুয়েলারির মধ্যে কানের দুল ও ঝুমকার প্রতিই বেশি আগ্রহী তরুণীরা। রান্নার সামগ্রী ও প্লাস্টিকের দোকানগুলোতে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি থাকলেও ইলেকট্রনিক্স পণ্যে তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায়নি। সন্ধ্যার পর দর্শনার্থীদের দেখা যায় বিভিন্ন খাবারের স্টলে বেশ আয়েশ করে আড্ডা দিতে। এ ছাড়াও রঙ্গিন আলো আর বিভিন্ন ফোয়ারার সামনে সেলফি নিচ্ছে এই প্রজন্ম। মাহমুদা খাতুন বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় এসে বলেন, মেলা মানেই একটু বাড়তি আনন্দ করা, মজা করা। বন্ধু ছাড়া মজাটা ভাল হয় না। তাই বন্ধুদের সঙ্গে এসেছি আবারও আসব। এ দিকে, বাণিজ্য মেলায় খাবারের মূল্য তালিকা না থাকা ও অস্বাস্থ্যকর খাবার রাখার দায়ে তিনটি হোটেলকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত মেলায় অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর সাংবাদিকদের বলেন, খাবারের মূল্য তালিকা না থাকায় ‘অরিজিনাল হাজীর বিরিয়ানী’ কে ২০ হাজার টাকা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার রাখায় ‘ড্রিম হাউস লেক ভিউ রেস্টুরেন্ট’কে ২০ হাজার ও বাসি খাবার রাখার দায়ে ‘আবুল হোটেল’কে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মেলা চলাকালে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান। এ ছাড়াও মেলা শুরুর পর প্রথম চার দিনেই ১৫ প্রতিষ্ঠান ও শুক্রবার দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে মেলায় অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অস্থায়ী অফিস। বিভিন্ন অভিযোগে ১৭টি প্রতিষ্ঠান থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। সহকারী পরিচালক মাসুম আরেফিন জনকণ্ঠকে বলেন, এখন পর্যন্ত ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি।
×