ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় রেলের এসডিও বাংলোর কূপ থেকে হাড়গোড় উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

বগুড়ায় রেলের এসডিও বাংলোর কূপ থেকে হাড়গোড় উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়া রেলওয়ে এসডিও বাংলো চত্বরের হানাদার পাক বাহিনীর বর্বরতার সাক্ষী ‘মৃত্যুকূপ’ হিসেবে চিহ্নিত কূপ থেকে মানুষের হাড় ও চুল পাওয়া গেছে। এটিকে বধ্যভূমির আলামত হিসেবে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে থমকে ছিল হানাদার পাক বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের বর্বরতার এই কালো অধ্যায়। বধ্যভূমির সন্ধানে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর কূপটি খনন শুরু হয়েছিল। এরপর দু’দফায় ৫ দিন খনন হয়। শুক্রবার থেকে তৃতীয় দফায় খনন কাজ শুরুর পর পাওয়া যায় মানুষের বেশকিছু হাড় ও চুল। শনিবার বিকেলে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিনের চিকিৎসক কূপ প্রাপ্ত হাড় ও চুল মানুষের বলে নিশ্চিত করেন। বিশেষজ্ঞ ও বোর্ড গঠন করে এগুলো পরীক্ষা এবং ডিএনএ টেস্টের জন্য পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মানুষের হাড়গোড় বেরিয়ে আসায় বগুড়া জেলা প্রশাসক নূরে আলম সিদ্দিকী বিকেলে খননস্থল পরিদর্শন করেন। বগুড়া রেলওয়ে এসডিও বাংলোটি পাকিদের কসাই খানা ও মৃত্যুকূপ হিসেবে পরিচিতি হয়ে আসছে। রেল স্টেশনের উত্তরে প্রায় ২/৩শ’ গজ উত্তরে এই বাংলোটির অবস্থান। বর্তমানে এটি রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলীর বাস ভবন। তবে সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সেখানে থাকেন না। একাত্তরে পাক বাহিনী তাদের দোসরদের নিয়ে বাংলোটি নিরীহ বাঙালী হত্যার টর্চার সেলে পরিণত করেছিল। প্রতিদিন স্টেশনসহ আশপাশের এলাকা থেকে লোকজনকে এনে টর্চার সেলে নির্যাতনের পর তাদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হতো। হানাদার পাক বাহিনী বাংলোটিকে টর্চার সেলের পাশাপাশি নিজেদের মদের আসরও বসাত। টর্চার সেলে ধরে আনা বাঙালীদের নির্যাতনের পর হত্যা ও পরে লাশ ফেলা হতো সেখানকার কূপে। নানা ধরনের কথা রয়েছে এই বাংলো ও মৃত্যুকূপ ঘিরে। বাংলোর টর্চার সেলের প্রতিটি ঘর ও দেয়ালে ছিল রক্তের দাগ। রেলওয়ের এসডিও বাংলোর কসাইখানা ও মৃত্যুকূপের বিষয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র’ বইয়ের অষ্টম খ-ে উল্লেখ রয়েছে। ১৯৭২ সালে দৈনিক সংবাদের এক প্রতিবেদনেও এর উল্লেখ রয়েছে। মৃত্যুকূপ হিসেবে চিহ্নিত স্থানটি ছিল জঙ্গলে ঢাকা। ১২ ডিসেম্বর খনন শুরু হওয়ার পর একটি দীর্ঘ কূপ বেরিয়ে আসে। এর পর দু’দফায় ৫ দিন খননের পর শ্রমিকদের নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে মাঝে বন্ধ রাখা হয় খনন কাজ। শুক্রবার থেকে ফায়ার সার্ভিসের তত্ত্বাবধানে আবার শুরু হয় খনন কাজ। ফায়ার সার্ভিসের ৫ কর্মীর উপস্থিেিত ৫ খনন শ্রমিক তৃতীয় দফার খনন কাজ করেন। প্রায় ৩৫ ফুট খননের পর কিছু হাড় ও একটি কাপড়ের অংশ পাওয়া যায়। শনিবার পাওয়া যায় আরও কিছু হাড় ও চুল। কূপের প্রায় ৪০ ফুট খননের পর কাজ চালানো ঝুঁকি ও কঠিন হয়ে পড়ায় খনন বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া নিচ থেকে পানি উঠতে শুরু করেছে। হাড় ও চুল পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক খননস্থল পরিদর্শন করে প্রাপ্ত হাড় ও চুল পর্যবেক্ষণের জন্য বগুড়া মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগকে অনুরোধ করেন। ফরেনসিক মেডিসিনের প্রভাষক ডাঃ মিজানুর রহমান ও সদর বগুড়া সদর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডাঃ সামির হোসেন মিশু ‘মৃত্যুকূপ’ থেকে পাওয়া হাড় ও চুল পর্যবেক্ষণ করে প্রাথমিকভাবে এটি মানুষের বলে নিশ্চিত করেন। তারা বলেন, এগুলো শিশুসহ একাধিক মানুষের। এসব হাড় মানুষের পাঁজর, হাত ও পায়ের। তবে বিশেষজ্ঞ, বোর্ড ও ডিএনএ টেস্টের আগে এগুলো কত পুরান বা মহিলা-পুরুষের তা নিশ্চিত হওয়া যাবে না। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, শুধু খনন শ্রমিক দিয়ে এই কূপ আর খনন করা সম্ভব নয়। এখন বড় পরিসরে আধুনিক পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতির সহায়তায় খুঁড়তে হবে। এজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হবে।
×