ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

’১৭ সালে রেকর্ডসংখ্যক কর্মীর বিদেশে চাকরি ॥ সবচেয়ে বেশি সৌদিতে

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

’১৭ সালে রেকর্ডসংখ্যক কর্মীর বিদেশে চাকরি ॥ সবচেয়ে বেশি সৌদিতে

ফিরোজ মান্না ॥ বিদেশে গত বছর রেকর্ডসংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। দশ লাখ আট হাজার কর্মী বিভিন্ন দেশে চাকরি পেয়েছেন। দেশের ইতিহাসে প্রথম এত বেশিসংখ্যক কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। এ হিসাব ২০১৬ সালের তুলনায় শতকরা ২৮ শতাংশ বেশি। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মী নিয়োগ পেয়েছেন সৌদি আরবে। এর পরেই জর্দান ও ওমানের স্থান। এ দাবি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসির। তবে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে শ্রমবাজারে কিছুটা সমস্যা রয়েছে বলে মন্ত্রী স্বীকার করেছেন। মন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, এসব দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। ‘তিনি বলেন, আশা করি অল্পদিনের মধ্যে বাজারগুলো ঠিক হয়ে যাবে। অবশ্য সমস্যার কারণও রয়েছে। তেল প্রধান দেশগুলোতে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় কর্মী নিয়োগও কমিয়ে দিয়েছে তারা। তেলের দাম একটু ভাল হলেই বাজারগুলো আবার চাঙ্গা হবে।’ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য অভিবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দেশের মানুষই দেশের সম্পদ। তারা বিশ্বের ১৬৫টি দেশে শ্রম ঘাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশে পাঠাচ্ছেন। তাদের টাকায় দেশের অর্থনীতি প্রতিনিয়ত সুসংহত হচ্ছে। অভিবাসন খাতকে দেশের অন্যতম প্রধান খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট দশ লাখ আট হাজার কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৭ সালেই প্রথম এত বিপুল সংখ্যক কর্মী বিদেশে চাকরি পেয়েছেন। মানবাধিকার ও অভিবাসন নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ হলে তারা বলেন, সংখ্যার দিক থেকে বেশি কর্মী পাঠানোর রেকর্ড হলেও কর্মীদের সুরক্ষার দিকটি উপেক্ষিত। বিভিন্ন দেশে কর্মীরা নানা রকম অসুবিধার মধ্যে থাকলেও তাদের বিষয়ে তেমন কোন নজর নেই মন্ত্রণালয়ের। এটা যেমন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের থাকা উচিত তেমনই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও। বন্ধ হয়নি প্রতারণা। এ বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এই তিন মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি থাকলেও দীর্ঘদিনেও কোন সভা অনুষ্ঠিত হয়নি অভিবাসন বিষয়ে। ফলে কর্মীরা কোন নিরাপত্তা ছাড়াই বিদেশে কাজ নিয়ে যাচ্ছেন। শুধু কর্মী সংখ্যা বাড়িয়ে তেমন কোন লাভ হবে না শ্রমবাজারে। কর্মীদের নিরাপদ পরিবেশ, চাকরির নিরাপত্তাসহ আরও অনেক বিষয় জড়িত রয়েছে। যা সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিদেশে বেশিসংখ্যক কর্মী পাঠিয়ে তাদের বিপদে না ফেলে বরং তারা যাতে ভাল থাকে সেই কাজ করা জরুরী। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা আমাদের নারী অভিবাসী কর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষার পাশাপাশি অভিবাসনকে নারীর ক্ষমতায়নে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। এ জন্য নারী কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও ব্রিফিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৬৫টি দেশে আমরা কর্মী প্রেরণ করছি। এর মধ্যে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে সর্বাধিকসংখ্যক কর্মী প্রেরণ করেছি। এসব দেশ থেকেই সর্বাধিক পরিমাণ রেমিটেন্স পেয়ে আসছি। নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে নারী কর্মী প্রেরণ করা হচ্ছে। সৌদি আরবেই সর্বাধিকসংখ্যক নারী কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। বর্তমানে গৃহকর্মী পেশায় সবচেয়ে বেশি নারী কর্মী চাকরি নিয়ে বিদেশ যাচ্ছেন। তবে গৃহকর্মী ও গার্মেন্টস কর্মীর বাইরেও সেলসম্যান, কেয়ার গিভার, বেবি সিটারসহ অন্যান্য পেশায়ও নারী কর্মীরা আগ্রহ নিয়েই কাজ করছেন। মন্ত্রণালয় ও এর দফতর-সংস্থা অভিবাসন ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়ন, দক্ষ কর্মী তৈরি, যৌক্তিক অভিবাসন ব্যয় এবং অভিবাসী কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশ্ব শ্রমবাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বহুবিধ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ঢাকাসহ ২৬টি জেলায় বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের সেবা সহজ করার লক্ষ্যে ফিঙ্গার প্রিন্ট কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। ফলে এই ২৬টি জেলার কর্মীদের ফিঙ্গার প্রিন্ট কার্যক্রমের জন্য ঢাকায় আসতে হয় না। মন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতকে সরকার ‘থার্স্ট সেক্টর’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এখাতের গুরুত্ব অপরিসীম বিবেচনায় সরকার বিদ্যমান শ্রমবাজার ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টির ওপর জোর দিয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন কর্মী প্রেরণ করেছি। বিদেশে কর্মসংস্থানের বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বিদ্যমান শ্রমবাজার ধরে রাখাসহ আমরা নতুন নতুন সম্ভাবনাময় শ্রম বাজার অনুসন্ধান করছি। নতুন শ্রমবাজারের সন্ধানে ৫২ দেশের শ্রম বাজার নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম সমাপ্তির পথে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী বিদেশগামী বাংলাদেশী কর্মীদের শতভাগ বীমার আওতায় আনা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমরা এ বছরের ১১ জুন ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০১৭’ গেজেট প্রকাশ করেছি। সম্প্রতি মন্ত্রিসভা বৈঠকে ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড আইন-২০১৭ চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব লাভের পর থেকেই এই সেক্টরে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।
×