ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এলএনজি সরবরাহে প্রয়োজন ২শ’ কোটি ডলার

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

এলএনজি সরবরাহে প্রয়োজন ২শ’ কোটি ডলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ করতে প্রায় দুই শ’ কোটি (দুই বিলিয়ন) মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। চলতি বছরে আমদানিকৃত এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্যাস সঞ্চালন লাইনে যোগ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারের গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি চলতি সপ্তাহেই বৈঠকে বসছেন। জ্বালানি বিভাগের উর্ধতন এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান। সরকার গঠিত কমিটির সদস্য সচিব রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, এলএনজির জন্য আমরা ইতোমধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে কিছু টাকা পাচ্ছি। এছাড়া বেশ কিছু কোম্পানি এই খাতে বিনিয়োগ ও কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। কমিটির কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের প্রয়োজন মেটাতে যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন তার যোগানের বিষয় নিয়েই কমিটি মূল কাজ করবে। এ জন্য আমরা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামি ট্রেড ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইটিএফসি) এবং অন্যান্য দাতা সংস্থার কাছে প্রস্তাব দেব। কী ধরনের প্রস্তাব হবে তা কমিটির সদস্যরা আলোচনা করে নির্ধারণ করবেন। কামরুজ্জামান জানান, আমরা আশা করছি চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট এবং অক্টোবর মাসে আরও ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যোগ করতে পারব। এ জন্য আমাদের ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১৬ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, সরকারের এলএনজি নির্ভর ১৩ হাজার ৮৩ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে যেসব কোম্পানি এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে প্রস্তাব দিয়েছে সরকার তাদের গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে দেশের সামিট গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ, ভারতীয় কোম্পানি রিলায়েন্স, জাপানি কোম্পানি মিতশু এ্যান্ড কোং এবং জার্মানির সিমেন্স। এদের মধ্যে জার্মানির কোম্পানি সিমেন্স এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) করার কথা জানিয়েছে। ভারতের রিলায়েন্স পাওয়ার লিমিটেড মহেশখালীতে ৩২শ’ মেগাওয়াট এবং চায়না পেট্রেলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড মেঘনা ঘাটে ১৫শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব করেছে। ওই কর্মকর্তা জানান, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার চারটি ভাসমান এলএনজি স্টোরেজ এ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) স্থাপন করবে। এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি (লিকুফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) খাতে অর্থায়নের জন্য নয় সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) জাকির হোসেনকে ৯ সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এছাড়া রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে কমিটিপর কার্যপরিধি সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, এলএনজি খাতে কমিটি দেশী-বিদেশী অর্থায়নের সম্ভাব্য সোর্স নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থায়নের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ ও পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়নের সম্ভাবনা পরীক্ষা করে সুপারিশ তৈরি করা। আগামী এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে সুপারিশ প্রনয়ণের জন্য বলা হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে বড় আকারে এলএনজি আমদানির দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর একটি করছে আমেরিকান কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি। অন্যটি শীর্ষ স্থানীয় দেশীয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ। প্রতিষ্ঠান দুটি দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সমপরিমাণ এলএনজি এনে তা পুনরায় গ্যাসে রূপান্তরিত করে পাইপলাইনে সরবরাহ করবে। এর জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে তৈরি হচ্ছে ভাসমান টার্মিনাল বা এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট)। এর মধ্যে এক্সিলারেট এনার্জির ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে আগামী বছরের এপ্রিলে। সে অনুযায়ীই সব কাজ করছে কোম্পানিটি।
×