ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায়

যাত্রী বাড়ছে দর্শনা সীমান্তপথে

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

যাত্রী বাড়ছে দর্শনা সীমান্তপথে

এস কে দাস, দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা ॥ চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে সড়কপথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত গত ২০১৭ সালে সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। ১৯৮৬ সালে দর্শনার জয়নগরে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থানান্তরের পর বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এক বছরে ৪ লাখ ২০ হাজার ৯৮১ জন যাত্রী যাতায়াত করেছে এ রুটে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ কোটি ৩৯ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫০ টাকা ও গত ৬ মাসে ৫ কোটি ৫০ লাখ ২২ হাজার ৫৪৬ টাকা রাজস্ব আয় করেছে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৬২ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা দিয়ে ভারতের গেদে রেলরুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে তা বন্ধ হয়ে গেলেও দেশ স্বাধীনের পর আবার ও চালু হয়। এ সময় সীমিত আকারে হলেও রেলপথ ধরে পায়ে হেটে পাসপোর্ট যাত্রীদের চলাচল শুরু হয়। তখন ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হত দর্শনা স্টেশনের ওপর ছোট্ট একটা কক্ষে। পরবর্তীতে যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ১৯৮৬ সালে দর্শনার সীমান্ত সংলগ্ন জয়নগরে কাস্টমস চেকপোস্ট স্থানান্তর করে কার্যক্রম শুরু হয়। তখন ট্রেনলাইন ধরে যাত্রীদের পায়ে হেটে ভারতের গেদে স্টেশনে পৌঁছাতে হত। বর্তমানে রেললাইনের পাশ দিয়ে পাকা সড়ক নির্মিত হয়েছে। পাশাপাশি বিজিবির উদ্যোগে রাস্তার দু-ধার দিয়ে লাগানো হয়েছে মনোমুগ্ধকর ফুলের বাগান, তা যেন আগতদের সর্বদা অভিবাদন জানাচ্ছে। অপরদিকে ভারতের অংশেও নির্মাণ করা হয়েছে পাকা সড়ক। ফলে যাত্রীরা ভ্যানযোগে সহজেই উভয় দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারছে। বাংলাদেশের যে কোন সীমান্ত রুটের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব দর্শনা দিয়ে সড়কপথে কম এবং রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এই রুটে যাত্রীদের চলাচল ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতীতের বছর গুলোতে যেখানে সারাবছরে ২-৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করত, সেখানে ২০১৬ সালে এই রুটে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৩৭ জন বাংলাদেশী, ১৩ হাজার ৯৮১ জন ভারতীয় এবং ৪৭ জন অন্যান্য দেশী। একই সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৮৬ জন বাংলাদেশী, ১৩ হাজার ৪৩৮ জন ভারতীয় এবং ৫৫ অন্যান্যদেশী। গত ২০১৭ সালে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ২ লাখ ৪০ জন বাংলাদেশী, ১৪ হাজার ৭০২ জন ভারতীয় এবং ১০৩ জন অন্যান্য দেশী। একই সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ১ লাখ ৯১ হাজার ১৪৮ জন বাংলাদেশী, ১৪ হাজার ৯০৪ জন ভারতীয় এবং ৮৪ জন অন্যান্যদেশী অর্থাৎ গতবছর সর্বমোট ৪ লাখ ২০ হাজার ৯৮১ জনের রেকর্ড পরিমাণ যাত্রী যাতায়াত করেছে। বাংলাদেশী যাত্রীদের হঠাৎ ভারতমুখী হবার পেছনে যে সমস্ত কারণগুলো রয়েছে, তার মধ্যে ভারত কর্তৃক ভিসা ব্যবস্থা সহজীকরণ, দেশের তুলনায় ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত ও বিশ্বাসযোগ্য এবং দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের প্রবণতা বৃদ্ধি ইত্যাদি। তবে দর্শনা রুটে যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য চেকপোস্টের সঙ্গে দর্শনার সংযোগ সড়কগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি চেকপোস্টে ভ্রমণকর পরিশোধের সুবিধার্তে সোনালী ব্যাংকের একটি বুথ খোলা প্রয়োজন, কারণ কোন যাত্রী ভুলক্রমে ট্রাভেলট্যাক্স প্রদান করে না আসলে তাকে আবার ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দর্শনায় ফেরত আসতে হয়। একই সঙ্গে ঢাকা-খুলনাগামী ডাউন আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের দর্শনা হল্ট স্টেশনে স্টপেজ দিলে ঢাকা থেকে আগত যাত্রীদের জন্য এই পথ আরও সহজতর হবে। দর্শনা ইমিগ্রেশনের নবাগত কর্মকর্তা এস.এম আব্দুল আলিম জানান, সীমিত সামর্থের মধ্যেও আমরা যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবার চেষ্টা করছি, বর্তমান নির্মাণাধীন ইমিগ্রেশন ভবন চালু হলে যাত্রী সেবা আরও বৃদ্ধি পাবে।
×