ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওষুধ শিল্প পার্কের মেয়াদ ও খরচ দুই-ই বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

ওষুধ শিল্প পার্কের মেয়াদ ও খরচ দুই-ই বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ওষুধ ও এর কাঁচামালকে ২০১৮ সালে প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৈরি পোশাকের মতো দেশের ওষুধ শিল্পকে এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে মুন্সীগঞ্জে তৈরি হচ্ছে ওষুধ শিল্পপার্ক। অথচ নানা জটিলতায় প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়। আবারও সংশোধনী এনে প্রকল্পটিতে খরচ বাড়ানো হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)। ‘এ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল এনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) শিল্পপার্ক’ শীর্ষক প্রকল্পটি এবার তৃতীয় দফা সংশোধনীর জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে উঠতে যাচ্ছে। যেখানে প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ দুইই বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধনের কারণ হিসেবে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সিইটিপির (বর্জ্য শোধনাগার) নির্মাণ কাজ সমাপ্তকরণ, অসমাপ্ত ২৫০০ বর্গমিটার আউটলেট নির্মাণ, প্লট ডিমারকেশন প্ল্যান প্রণয়ন, পূর্তকাজের ড্রইং, ডিজাইন ও টেন্ডার এবং অন্যান্য ভবন নির্মাণ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের চাহিদা অনুযায়ী অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা স্থাপন, আরডিএ, বগুড়ার প্রাক্কলন অনুযায়ী গভীর নলকূপ প্রতিস্থাপন, পানি সরবরাহের মূল লাইন ও সাব লাইন নির্মাণ, আরইবির প্রাক্কলন অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ বিদ্যুত সরবরাহ লাইন, স্ট্রিট লাইন স্থাপন ও ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন এবং গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপন করতে হবে। এজন্যই বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের দ্রুত অগ্রসরমান শিল্পের মধ্যে ওষুধ শিল্প অন্যতম। একটি পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো সুবিধাসহ শিল্পপার্ক স্থাপনের মাধ্যমে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল এবং ওষুধ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি ২০০৮ সালের জানুয়ারি হতে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ২১৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য ২০০৮ সালের ২২ মে একনেকে অনুমোদিত হয়। দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত খরচ ৩৩১ কোটি টাকা থেকে প্রায় ৮০ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৪১১ কোটি টাকা। এছাড়া মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এজন্য প্রকল্পটি তৃতীয়বারের মতো সংশোধন করা হচ্ছে। অধিগ্রহণ করা জমির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০০৯ সালের খরচ ২৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও মেয়াদ ১ বছর বাড়িয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের মাধ্যমে প্রথম সংশোধন করা হয় এবং পরে খরচ বাড়ানো ছাড়া শুধু বাস্তবায়নের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ডিসেম্বর করা হয়। পূর্তকাজ অসম্পূর্ণ থাকা, নির্মাণ কাজের রেট সিডিউল পরিবর্তনসহ মাটি ভরাটের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং প্রশাসনিক ভবনের ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে ৩৩১ কোটি ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা সংশোধিত ব্যয় এবং ২০০৮ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৫ সালে প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধনের জন্য ২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি একনেকে অনুমোদিত হয়। পরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব এবং আইএমইডির সুপারিশের কারণে পরিকল্পনা কমিশন খরচ না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফায় বাড়িয়ে ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পটির ওপর ২০১৭ সালের ১২ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধন প্রস্তাব ৩৮১ কোটি টাকা খরচ এবং ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালে বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য শামীমা নার্গিস বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য একটি পরিবেশবান্ধব শিল্পপার্ক স্থাপিত হবে। এ জন্য প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ না হলে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হবে না। সেজন্য প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদনযোগ্য। প্রকল্পের মূল কাজগুলো হচ্ছে, ২০০ দশমিক ১৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমির উন্নয়ন, ৪২টি প্লট তৈরি, ড্রন, কালভার্ট, ক্রস ড্রেন এবং সøুইচ গেট, পানি সরবরাহ লাইন, গভীর নলকূপ স্থাপন, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নির্মাণ, ৩৩ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন, বিদ্যুত সাবস্টেশন, স্ট্রিট লাইট স্থাপন, গ্যাস লাইন স্থাপন, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, শিল্পনগরীর সীমানা এবং ১টি শিল্পপার্কের প্রধান গেট করা হবে।
×