ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফেলানী হত্যাকাণ্ড

ভারতের সুপ্রীম কোর্টে দুই রিটের শুনানি ১৮ জানুয়ারি

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

ভারতের সুপ্রীম কোর্টে দুই রিটের শুনানি ১৮ জানুয়ারি

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ ২০১১ সালের এই দিনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার রামখানা অনন্তপুর সীমান্তের বাসিন্দা কিশোরী ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর নিথর দেহ। এই হত্যাকা-ে গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম নুরু জানান, দিনটি ছিল শুক্রবার। ভোর সোয়া ৬টার দিকে ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে আহত ফেলানী আধাঘণ্টা ধরে ছটফট করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। এরপর সকাল পৌনে ৭টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত মৃতদেহ কাঁটাতারের উপর দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা ঝুলে থাকে। পরে বিএসএফ সদস্যরা লাশ নামিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে মৃত্যুর ৩০ ঘণ্টা পর ৮ জানুয়ারি লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ। বাংলাদেশে আর এক দফা ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দাফন হয় ৭৩ ঘণ্টা পর। ফেলানীর মা জাহানারা বেগম জানান, হাতে মেহেদী রাঙাতে যে কিশোরী মেয়েকে দেশে পাঠিয়েছিলাম। সেই ফেলানী চির বিদায় নিয়ে শুয়ে আছে ৭ বছর ধরে। কবরের পাশে বসে হাহাকার করা ছাড়া আর আমাদের কিছুই করার নেই। রামখানা ইউনিয়নে টিনের একটি ঘরে কোন রকমে মাথা গুঁজে দিন কাটছে আমাদের। ওই ঘরটির সামনের অংশে একটি ছোট মুদি দোকান দিয়ে সংসার চালাই। নাখারগঞ্জ বাজারে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বিজিবি’র দেয়া অপর দোকানটি চালায় ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম। কিন্তু মূলধনের অভাবে ব্যবসা ভাল চলছে না। এ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন জানান, ফেলানী হত্যার দায় স্বীকার করার পরেও বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বিএসএফের বিশেষ আদালত ২ বছর ৮ মাস পরে বেকসুর খালাস দেয়। তবে সেই রায় যথার্থ মনে করেনি বিএসএফের মহাপরিচালক। তিনি রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আদেশ দেন। এরপর ২ জুলাই ২০১৫ সালে বিএসএফ বিশেষ আদালত আবারও নির্দোষ ঘোষণা করেন অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে। মেয়ের হত্যার ন্যায়বিচার পেতে ভারতের মানবাধিকার সংস্থার (মাসুম) মাধ্যমে ফেলানীর পরিবার একই বছরের ১৩ জুলাই ভারতের সুপ্রীমকোর্টে ২০১ এবং ২৪৫ নং দু’টি রিট করে। ভারতের সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চে শুনানি রিট আবেদন গ্রহণ করে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি সংস্থাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়। গত ২৫ অক্টোবর ভারতের সর্বোচ্চ আদালত আগামী ১৮ জানুয়ারি দু’টি রিটের শুনানির দিন ধার্য করে। রামখানা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম সরকার জানান, দীর্ঘদিন ধরে ফেলানীর হত্যার ন্যায় বিচার না পেয়ে ফেলানীর পরিবার ও গ্রামবাসীরাও হতাশা হয়ে পড়েছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাহারা খাতুনের দেয়া অনেক প্রতিশ্রুতির মধ্যে শুধুমাত্র ফেলানীর কবরটি পাকাকরণ ছাড়া আজ পর্যন্ত অন্যান্য প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। ফেলানী হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আশা প্রকাশ করে সীমান্তে হত্যাকা- বন্ধের জন্য ও এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে জাতীয় দিবস ঘোষণার দাবি জানান তিনি।
×