কথাসাহিত্যিক শওকত আলী লাইফ সাপোর্টে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুরুতর অসুস্থ একুশে পদকজয়ী কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। বর্তমানে অশীতিপর এই কথাশিল্পীকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। ফুসফুসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিসাধীন ছিলেন শওকত আলী। প্রখ্যাত এই কথাসাহিত্যিকের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। এ অবস্থায় তাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তিনি সমীরণ কুমার সাহার তত্ত্বাবধানে সাত সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে অবস্থানরত শওকত আলীর ছোট ভাই ডাঃ ওসমান আলী হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ডের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমকে জানান, সন্ধ্যার পর থেকে শওকত আলীর অবস্থা আরও শঙ্কটাপন্ন হয়েছে। বলা যায়, তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। তার রক্তচাপ কমে গেছে, কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে না এবং ফুসফুসে নিউমোনিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। শরীরের লবণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এছাড়া আগে থেকেই হৃদযন্ত্রে সমস্যা ছিল। এর বাইরে অসুস্থতার মধ্যেই ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ায় মস্তিষ্কও যথাযথভাবে কাজ করছে না। বর্তমানে তাকে ২৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা এতই নাজুক যে দেশের বাইরে নেয়াও সম্ভব নয়। এদিকে বাবার অসুস্থতার খবরে শওকত আলীর বড় ছেলে আরিফ শওকত পল্লব শনিবার ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এ তথ্য জানিয়েছেন শওকত আলীর আরেক ছেলে আসিফ শওকত কল্লোল। ৮১ বছর বয়সী কথাশিল্পী শওকত আলীর জন্ম ১৯৩৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলার থানা শহর রায়গঞ্জে। ছাত্র জীবনে কমিউনিস্ট আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন শওকত আলী। সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও কিছুদিন পরে শিক্ষকতায় যোগ দেন তিনি। বামপন্থীদের ‘নতুন সাহিত্য’ পত্রিকায় লেখালেখি করেন শওকত আলী। এছাড়া দৈনিক মিল্লাত, মাসিক সমকাল, ইত্তেফাকে তার অনেক গল্প, কবিতা ও শিশুতোষ লেখা প্রকাশিত হয়। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯০ সালে একুশে পদক অর্জন করেন শওকত আলী। এছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। শওকত আলীর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’, ‘দক্ষিণায়নের দিন’, ‘পিঙ্গল আকাশ’, ‘অপেক্ষা’, ‘উত্তরের খেপ’, ‘জননী ও জাতিকা’ ইত্যাদি । সম্পাদনা করেছেন ‘উন্মুল বাসনা’, ‘লেলিহান সাধ’, ‘শুন হে লখিন্দর’, ‘বাবা আপনে যান’সহ বেশ কয়েকটি গল্পগ্রন্থ।