ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

প্রতিবাদী চিত্রকর্মের রূপায়ণ ‘ভূমির সঙ্গে কথোপকথন’

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

প্রতিবাদী চিত্রকর্মের রূপায়ণ ‘ভূমির সঙ্গে কথোপকথন’

মনোয়ার হোসেন ॥ বর্ণবহুল চিত্রপটে ছবি আঁকেন মনসুর উল করিম। জীবনের সঙ্গে প্রকৃতির মেলবন্ধনে রাঙিয়ে দেন ক্যানভাস। সেই সুবাদে স্বদেশের ভূমিসংলগ্ন হয়ে ওঠে এই শিল্পীর চিত্রকলা। সেখানে বদলে যাওয়া সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে চিত্রকরের আঁকাআঁকি। তাই তো অবগুণ্ঠিত নারীর জীবনের পাশাপাশি উচ্চকিত রং ও রেখায় উদ্ভাসিত হয় প্রাণোচ্ছল নারী। অনগ্রসর জীবনকে ছাপিয়ে মুক্ত সমাজব্যবস্থার বারতা দিয়ে যায় এই চিত্রকরের চিত্রকর্ম। আবহমান গ্রাম বাংলার যাপিত জীবনের মাঝেই প্রকাশিত হয় রমণীর সৌন্দর্য ও উদারতা। ভাবনাতাড়িত এমন সব চিত্রকর্ম নিয়ে ধানম-ির গ্যালারি চিত্রকে চলছে এই চিত্রশিল্পীর চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘কনভারসেশন উইথ সয়েল’ বা ‘ভূমির সঙ্গে কথোপকথন’। শনিবার বিকেলে গ্যালারি চিত্রকে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী অধ্যাপক রফিকুন নবী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিল্প সংগ্রাহক ও ডিবিএল গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম ফিরোজ। সভাপতিত্ব করেন স্থপতি শামসুল ওয়ারেস। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন মনসুর উল করিম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক চিত্রশিল্পী মোঃ মনিরুজ্জামান। নিজের চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে মনসুর উল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘ ৩৯ বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শেষ করে ফিরে যাই আমার শেকড়ের কাছে। আপন সৃজনের তাগিদে আশ্রয় নেই রাজবাড়ীর প্রত্যন্ত গ্রামে। নিবিড় প্রকৃতির মাঝে অবলোকন করি কৃষিজীবী ও জেলেদের জীবনকে। উপলব্ধি করি আমূলভাবে বদলে গেছে আবহমান গ্রাম বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি। সহজিয়া জীবনের বদলে প্রবলভাবে দানা বেঁধেছে ধর্মভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। অকারণেই পর্দানশীন হয়ে উঠেছে নারী। বদলে যাওয়া সেই সংস্কৃতির প্রতিবাদ করেছি আমার আঁকা ছবিতে। আর আঁকার ক্ষেত্রে যে সমস্যা আমায় তাড়িত করে সেই সমস্যায় ভর করে অগ্রসর হই। তাই অবগুণ্ঠিত নারীর উল্টোপিঠে এঁকেছি উদার সমাজব্যবস্থায় বেড়ে ওঠা আপন সৌন্দর্যে প্রকাশিত নারীকে। সেই সঙ্গে জুড়ে দিয়েছি নিসর্গের নির্যাসকে। মনসুর উল করিমের ছবিতে উঠে এসেছে বাংলার চিরায়ত লোকজ ধারা। রঙের বিভোরতায় চিত্রিত চিত্রকর্মে যুক্ত হয়েছে ফোক মোটিফ। সেসব ছবিতে যেমন উঠে এসেছে মানব-মানবীর প্রেম। উদ্ভাসিত হয়েছে বহুমাত্রিক অভিব্যক্তি মেলে ধরা জননীর অবয়ব। পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্দায় আবৃত নারীর ছবির উল্টোপিঠে দেখা মেলে মনের সুখে গান গাওয়া বাউল ও একতারা বাজানো বৈষ্ণবীকে। আরেক ছবিতে অনাবৃত নারীর কোলজুড়ে শুয়ে থাকে নিষ্পাপ শিশু। চারপাশজুড়ে ওড়াউড়ি করে পাখির ঝাঁক এবং আনন্দে মেতে ওঠে রমণীগণ। চাঁদ-তারাখচিত টুপি পরিহিত হুজুরের হিজাবী বউয়ের ছবির পাশে যেন প্রতিবাদ জানায় শরীরী সৌন্দর্য মেলে ধরা নারীদের অবয়বের চিত্রকর্ম। এছাড়াও শিল্পীর ক্যানভাসে মূর্ত হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনীতির জটিল ঘূর্ণাবর্ত ও সামাজিক পরিবর্তনের নানা ইঙ্গিত। এ্যাক্রেলিক মাধ্যমে সৃজিত ৫০টি চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো প্রদর্শনী। শনিবার থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে দর্শনার্থীর জন্য। শিল্পকলায় সানী জুবায়েরের সঙ্গীতসন্ধ্যা ॥ সুরে সুরে শ্রোতাদের রাঙিয়ে দিলেন সানী জুবায়ের। আর সেই সুর ছিল বিচিত্র ধারার। একইসঙ্গে পরিবেশন করলেন পশ্চিমা ও উত্তর ভারতীয় গান। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীত পরিচালক শোনালেন ঠুমরি, গজল ও আধুনিক গান। শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো এ সঙ্গীত আসর। সঙ্গীতানুষ্ঠানটি আয়োজনের সহযোগিতায় ছিল জি সিরিজ। দেশবন্ধু-চ্যানেল আই প্রকৃতি মেলা ॥ পুরো প্রাঙ্গণ যেন সবুজে মোড়ানো একখ- বাগান। চারপাশে উঁকি দিচ্ছে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ। এমনই পরিবেশে প্রকৃতি রক্ষার শপথ নেয়ার মাধ্যমে শনিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো দেশবন্ধু-চ্যানেল আই প্রকৃতি মেলা। ‘সুন্দর প্রকৃতিতে গড়ি সুস্থ জীবন’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে রাজধানীর চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এ মেলার আয়োজন করে। এটি এ মেলার সপ্তম আসর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ঢোলের বাদ্য আর নৃত্য-সঙ্গীতের তালে। মেলার উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় বক্তব্য রাখেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন, দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান, নূর ইকো ব্রিকসর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান সিরাজ জুয়েল, মুকিত মজুমদার বাবুর স্ত্রী ও রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, ড. এনামুল হক, ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী, মিনারা জামান, আজাদ রহমান প্রমুখ। বাদ্যযন্ত্রসমৃদ্ধ বাংলার অতীত ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে চলছে দশ দিনব্যাপী যন্ত্রসঙ্গীত উৎসব। প্রতিদিন একাডেমির নন্দনমঞ্চে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইছে সুরের ধারা। শনিবার উৎসবের ৬ষ্ঠ দিনের সকালে একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে সংগীত গবেষক ও শিক্ষক কমল খালিদের উপস্থাপনায় ‘বাদ্যযন্ত্রসমৃদ্ধ বাংলার অতীত ঐতিহ্যের পুনর্জাগরন’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেনবিশিষ্ট তবলাবাদক মিলন ভট্টাচার্য, দোতারা বাদক অনুপম বিশ্বাস, সরকারী সঙ্গীত কলেজের প্রভাষক তিলোত্তমা সেন এবং সঙ্গীত গবেষক সায়েম রানা ও সায়মন জাকারিয়াসহ বরেণ্য ও তরুণ যন্ত্রশিল্পীবৃন্দ।
×