ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাখাইনে সেনা গাড়িতে আরসার হামলায় আহত ৫

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার মধ্যেও থেমে নেই অপতৎপরতা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার মধ্যেও থেমে নেই অপতৎপরতা

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তির পর সামগ্রিক প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেও অপতৎপরতা থেমে নেই। সক্রিয় রয়েছে ষড়যন্ত্র এবং নীলনক্সা। রাখাইনে আবারও সেনাবাহিনীর একটি যানবাহনের ওপর হামলার ঘটনার খবর দিয়েছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ একাধিক সংবাদ সংস্থা শনিবার জানিয়েছে, শুক্রবারের এ হামলায় আহত হয়েছে ৫ সেনা সদস্য। হামলার দায় স্বীকার করেছে রোহিঙ্গা সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। এদিকে, স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই চলছে তাদের নিরুৎসাহিত করতে ক্যাম্পগুলোতে নানা অপপ্রচার। পরিকল্পিতভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে রাখাইন প্রদেশে ভীতিকর এবং অনিরাপদ পরিস্থিতির। রোহিঙ্গাদের ওপর এখনও নির্যাতন চলছে বলে গুজব রটানো হচ্ছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে স্থানীয় স্বার্থান্বেষী মহল ছাড়াও কিছু এনজিও এবং সংগঠন। সর্বশেষ বিচ্ছিন্নভাবে আবারও রাখাইনে সেনাবাহিনীর গাড়ির ওপর হামলা, দায় স্বীকার এবং পাশাপাশি অপতৎপরতার ঘটনা প্রত্যাবাসনে অশনি সঙ্কেত কিনা সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর আগেও আনান কমিশনের রিপোর্ট পেশের ছয় ঘণ্টার মধ্যে রাখাইনে ঘটেছিল ৩০টি পুলিশ পোস্টে হামলার ঘটনা। এরপর থেকে শুরু হয় সেনা অভিযান। নির্যাতনের মুখে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে বাধ্য হয় ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। বার্তা সংস্থা রয়টার্স মিয়ানমারের সরকারী কর্মকর্তা এবং আরসা’র নেতাদের বরাত দিয়ে শনিবার জানায়, শুক্রবার উগ্রবাদী সংগঠনটির একটি গ্রুপ হামলা চালিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি গাড়ির ওপর। এতে আহত হয়েছে ৫ জন। মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, আরসা এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। সেনাবাহিনী আরসাকে বাংলাদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিযুক্ত করে বলেছে, সন্ত্রাসীদের ২০ জনের একটি গ্রুপ পাহাড় থেকে হাতে বানানো মাইন এবং ছোট অস্ত্রের মাধ্যমে এ হামলা চালিয়েছে। আরসার এক স্পোকম্যান রয়টার্স প্রতিনিধির কাছেও হামলার কথা স্বীকার করেছে বলে সংবাদ সংস্থাটি উল্লেখ করে। তবে সংগঠনটি এও দাবি করেছে যে, তাদের সঙ্গে কোন আন্তর্জাতিক ইসলামিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা নেই। এটা শুধুই রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। ইয়াঙ্গুন ভিত্তিক পত্রিকা ফ্রন্টিয়ারও এই সংবাদটি প্রকাশ করেছে। এদিকে, ঘটনাটি সত্যিই হামলা নাকি পরিকল্পিত প্রচার তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা প্রচ- আক্রমণ ও নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা এখন বড়ই শক্তিহীন। সেখানে যারা রয়েছে তারা আছে নানামুখী শঙ্কায়। তাছাড়া বাংলাদেশে যারা আশ্রিত তারা এখন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে। ঠিক এমনই সময়ে এই ধরনের হামলা কোন রোহিঙ্গা সংগঠন ঘটাতে পারে কিনা সে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। তবে এর আগে আনান কমিশনের রিপোর্টের পর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। প্রত্যাবাসনে নিরুৎসাহিত করতে প্রচার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ॥ বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে রোহিঙ্গা ফেরতের দিন তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রোহিঙ্গাদের মধ্যে ফেরত না যেতে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে চলছে একাধিক মহল। একেকদিন একেকটা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মিয়ানমারের রাখাইনে এখনও রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে এবং আকিয়াবে ৫ জন রোহিঙ্গা যুবককে পিটিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেছে বলে গুজব রটানো হচ্ছে। অনেক সময় রোহিঙ্গা যুবকদের হত্যা এবং নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে বলে মিথ্যা গুজব রটিয়ে ভয়ভীতিতে রাখছে নিরীহ রোহিঙ্গাদের। এসবের পেছনে আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ আরএসও, আল ইয়াকিন ও কিছু এনজিও কর্মী অতি উৎসাহী হয়ে এসব গুজব রটাচ্ছে বলে জানা গেছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বহুমাত্রিক ব্যবসা ॥ টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রিত রোহিঙ্গারা বহুমাত্রিক ব্যবসায় নেমে পড়েছে। আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইন অনুসারে ভিনদেশে আশ্রিত হিসেবে রোহিঙ্গারা বাড়তি রোজগার করতে পারে না। এ আইনের তোয়াক্কা না করে রোহিঙ্গারা ইয়াবা, মাদক ও হুন্ডিসহ বহু ধরনের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। এমনকি বহু রোহিঙ্গা আশ্রিত ক্যাম্পের পার্শ্বস্থ বাজারে দোকান খুলে বসেছে। দিব্যি বেচাকেনা করে চললেও বাধা দেয়ার যেন কেউ নেই। রোহিঙ্গারা দোকান খুলে সস্তা দামে বিক্রি করছে চাল-ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ-রসুন, কম্বল, সাবান ও হাড়িপাতিল। এতে স্থানীয় দোকানিরা লোকসান গুনছে চার মাস ধরে। স্থানীয় দোকানিরা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য গাড়ি ভাড়া করে চট্টগ্রাম ও বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আসে টেকনাফ ও উখিয়ার নির্ধারিত স্থানে। এদিকে রোহিঙ্গারা ওসব পণ্য নিয়ে আসছে পার্শ্ববর্তী ক্যাম্প থেকে। রোহিঙ্গাদের হাতে লাখ লাখ টাকা ॥ টেকনাফ-উখিয়া আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কাছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রচুর নগদ অর্থ পৌঁছছে বলে জানা গেছে। তবে বর্তমানে কিছু কিছু রোহিঙ্গার কাছে রয়েছে লাখ লাখ নগদ টাকা। সরকারের অগোচরে ওসব টাকা প্রেরণ করে চলছে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গ্রুপ আরএসও-আল ইয়াকিন ক্যাডাররা। মিয়ানমারে সহজে ফিরে না যেতে রোহিঙ্গাদের একাধিক সংগঠন তথা আরাকান বিদ্রোহীরা উঠেপড়ে লেগেছে। ওই মুভি ক্যাশের মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা পাঠানোতে একদিকে সরকারের ব্যাংকগুলোতে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে অপরদিকে রোহিঙ্গারা বিনাশ্রমে ওসব নগদ টাকা পেয়ে স্বদেশে ফিরে না যাওয়ার উৎসাহ পাচ্ছে। রোহিঙ্গা আশ্রিত ১২টি ক্যাম্পভিক্তিক অন্তত অর্ধশতাধিক মোবইল ফোনে টাকা লেনদেনের দোকান বসেছে। তাদের ওসব দোকানে প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকা লেনদেন হয়ে থাকে বলে জানা গেছে। ওসব দোকানিদের নিবন্ধিত নম্বর ছাড়াও নামে বেনামে অসংখ্য সিম রয়েছে। অনেক সময় রোহিঙ্গাদের শেডে গিয়েও টাকা পৌঁছে দিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। উখিয়ার কুতুপালং বাজারের মৌলভি ছৈয়দুল আমিন, রফিক, বশর, আলী, বালুখালী পানবাজারের জাহাঙ্গীর, পালংখালী বাজারের সোহেল, থাইনখালী বাজারের মানিক, বশর ও এন ইসলামসহ অর্ধশতাধিক হুন্ডি ব্যবসায়ী এ অবৈধ কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
×