ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাটেশ্বর সংরক্ষণে আগামী বাজেটে বরাদ্দ থাকছে ॥ অর্থমন্ত্রী

বিক্রমপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পিরামিড আকৃতির স্তূপ আবিষ্কার

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

বিক্রমপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পিরামিড আকৃতির স্তূপ আবিষ্কার

মীর নাছিরউদ্দিন উজ্জ্বল, নাটোর থেকে ॥ নাটশ্বরের এবারের আবিষ্কার ২০১৭ সালে পৃথিবীর সেরা প্রতœতাত্ত্বিক আবিষ্কার একটি। অবশিষ্ট খনন সম্পন্ন করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা গেলে বৌদ্ধ সভ্যতা ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের’ তালিকাভুক্ত করেছেন দেশের খ্যাতনামা পুরাকীর্তি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, প-িত অতীশ দীপঙ্করের জন্মভূমি বিক্রমপুর প্রতœস্থান দক্ষিণ এশিয়ার শেষ শ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসাবে বিশ্ব প্রতœতত্ত্বে জায়গা করে নিতে যাচ্ছে। নাটেশ্বর দেউলে সাম্প্রতিক আবিষ্কার শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বিশ্বের প্রতœতাত্ত্বিক ইতিহাসে এটি সেরা আবিষ্কার। তিনি জানান, সদ্য আবিষ্কৃত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পিরামিড আকৃতির বিশালা নান্দনিক স্তূপ বিস্ময়কর। এই আবিষ্কারগুলো অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফা ইয়াসমিন এমিলি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, উচ্চ পর্যায়ের ১৪ জন চীনা প্রতœতাত্ত্বিকদের উপস্থিতিতে শনিবার সংবাদ মাধ্যমের কাছে তুলে ধরা হবে। অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০১০ সাল থেকে ঐতিহ্য অন্বেষণ (প্রতœতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র) বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রতœতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কাজ শুরু করে। রামপাল ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামে (প্রাচীন বজ্রযোগিনী) বিক্রমপুরী বৌদ্ধ বিহারের ৬টি ভিক্ষু কক্ষ, একটি ম-প ও পঞ্চস্তূপ আবিষ্কৃত হয়। ২০১৩ সাল থেকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বর দেউলে প্রতœতাত্ত্বিক খনন চলমান। প্রায় ১০ একর ঢিবিতে উৎখনন কাজের বিশালতা ও সংরক্ষণের কথা চিন্তা করে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন চীনের হুনান প্রাদেশিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রতœতত্ত্ব ইনস্টিটিউটকে আমন্ত্রণ জানায়। ২০১৩-২০১৮ যৌথভাবে উৎখননে পাঁচ হাজার বর্গমিটারের বেশি এলাকায় উৎখনন হয়েছে এবং ইতিহাস পুনর্গঠনের তাৎপর্যপূর্ণ প্রতœবস্তু আবিষ্কৃত হয়েছে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পিরামিড আকৃতির নান্দনিক স্তূপ, ৩টি অষ্টকোণাকৃতির স্তূপ; ইট-নির্মিত অতি সুন্দর ৪টি রাস্তা, চারদিকে চারটি স্তূপ হলঘর পরিবেশিষ্টত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অষ্টকোণাকৃতির কেন্দ্রীয় স্তূপ। এছাড়া বিভিন্ন পরিমাপের ৪টি কক্ষ এবং অন্যান্য স্থাপত্যিক নিদর্শন উন্মোচিত হয়েছে। “সদ্য আবিষ্কৃত প্রাচীন বৌদ্ধ নগরীরর নানা নির্দশন আবিষ্কার বিক্রমপুরের ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করবে।” শনিবার নাটেশ্বর গ্রামে প্রতœতাত্ত্বিক অনুসন্ধান ও খননে আবিষ্কৃত প্রতœবস্তু নিয়ে প্রেস কনফারেন্সে এই ঘোষণা দেন বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রতœতাত্মিক খনন ও গবেষণা প্রকল্প ও অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূহ-উল-আলম লেনিন। এতে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি এমপি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম, অধ্যাপক ড. সুফি মুস্তাফিজুর রহমান, চীনা গবেষক অধ্যাপক চাই এবং গেস্ট অব অর্নার হিসাবে অংশ নেন মি. জিনসহ চীনা একটি গবেষক দল। অতিথিবৃন্দ আবিষ্কৃত পুরাকীর্তি ঘুরে দেখেন। অতিথিরা নাটেশ্বরে আবিষ্কৃত প্রতœতাত্ত্বিক নিদের্শনা দেখে অভিভূত হন। আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রতœতাত্ত্বিক এই কাজে তার সহযোগিতার আশ্বাসের কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, মহেঞ্জোদারো’র আদলে নাটেশ্বর বৌদ্ধ নগরীকে সংরক্ষণের জন্য আগামী বাজেটে বরাদ্দ থাকবে। সেই লক্ষ্যে একটি প্রকল্প করে নাটেশ্বরের সাথে খনন কাজে সম্পৃক্ত একটি টিম মহেঞ্জোদারোতে পাঠানো হবে। তারা যাতে প্রশিক্ষত হয়ে আসতে পারে। অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতœতত্ত্ব ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে। প্রতœতত্ত্ব ইতিহাসের যে ভুলত্রুটি আছে সেগুলো দেখিয়ে দেয় এবং আমরাও চেষ্টা করছি এইখানে এই প্রতœতাত্ত্বিক আবিষ্কার তার মাধ্যমে আমাদের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করার। আমরা নাটেশ্বর এসে দেখতে পাই যে আমাদের পূর্বপুরুষেরা কতটা উন্নত জীবনযাপন করতেন। এখনো আমরা দেখতে পেলাম দেড়শ ফুট রাস্তার। মানে তখন কার সময়ের রাজপথ। তখনতো রাস্তা ছিল ছোট গাড়িও ছিল ছোট ছোট রাজপথও ছোট। এটাকে আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমার যতটুকু মেয়াদ রয়েছে এর মধ্য এখান থেকে কয়েক জন পর্যবেক্ষণ দলকে প্রশিক্ষণ ও সমৃদ্ধিশালী করতে মহেঞ্জোদারোতে পাঠানো হবে সেই ব্যবস্থাটা আমি করে যেতে চাই। যাতে প্রশিক্ষণ শেষে বিক্রমপুরের এই নাটেশ্বরে কিছু করতে পারি। আমাদের দেশে অনেক কম আছে এইরকম পুরাকীর্তি। তিনি বলেন, আমরা বিক্রমপুরে ইতোমধ্যে জাদুঘর তৈরি করেছি। এখন নাটেশ্বরের প্রাচীন শহরটাকে তৈরি করব। পুরনো শহর যেটা নাটেশ্বর, এইটাকে কিভাবে সংরক্ষণ করা যায়, সেটা আমাদের শিখতে হবে, করতে হবে, এইটাই আমাদের আগামীর দায়িত্ব। এটা যাতে পালন করা যায়, তার জন্য আমার মেয়াদকালে আমি কয়েক জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে যেতে চাই। যে জাদুঘর হয়েছে, সেখানে এই নাটেশ্বরের বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে যাওয়া দরকার। মন্ত্রী সর্বশেষ বলেন, এবার এসে দেড়শ ফিট রাজপথ দেখতে পেলাম। আগে ছোট আকারে রাস্তাটি দেখতে পেয়েছিলাম, এখন পুরটায় দেখতে পেলাম। এটা আমার সবচে বেশি পাওনা, সবচে আনন্দের। সদ্য আবিষ্কৃত পুরাকীর্তির পাশেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেয়।
×