ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকরা অবস্থান ধর্মঘটে

এবার জাতীয়করণ দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মসূচী ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

এবার জাতীয়করণ দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মসূচী ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে এমপিওভুক্তির দাবিতে অনশন বন্ধ হলেও এবার জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষক আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। জাতীয়করণের দাবিতে মার্চ মাসে শিক্ষক মহাসমাবেশসহ নানা কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচী ঘোষণার হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি। এদিকে জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ষষ্ঠদিনের মতো অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষক সংগঠনগুলো সরকারের শেষ সময়কে দাবি আদায়ের মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বেছে নিয়েছে। নানা দাবিতে তারা রাজপথে সক্রিয় হতে চান। শিক্ষক সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষক নেতারা মূলত দাবি আদায়ের কৌশল হিসাবেই সরকারের মেয়াদ শেষের এই সময়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে চান। কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন সরকারের শেষ সময়ে দাবি আদায় সহজ। কারণ নির্বাচন আসন্ন থাকায় সরকারও এ বিষয়ে সহনীয় মনোভাব দেখায়। এর আগে টানা ১১ দিন অবস্থান ও ৬ দিন ধরে অনশন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন প্রত্যাহার করেছেন শিক্ষকরা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সম্মতি ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আশ্বাস পেলেও আন্দোলন প্রত্যাহার না করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলেন শিক্ষকরা। এ অবস্থায় শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে তারা কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নিয়ে শনিবার থেকে কাজে ফিরেছেন। তাদের দাবি দেশের সকল বেসরকারী নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান এমপিও করতে হবে। ২০১০ সালের পর আর কোন প্রতিষ্ঠান এমপিও হয়নি। এখন দেশে এমন প্রতিষ্ঠান আছে ৭ হাজারেরও বেশি। যেখানে শিক্ষক আছেন প্রায় ৮০ হাজার। শনিবার তারা কাজে ফিরলেও ওই দিনই জাতীয় প্রেসক্লাবে বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচীর হুমকি দেয়। দাবি আদায়ে আগামী মার্চে ঢাকায় শিক্ষক মহাসমাবেশসহ নানা কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন তারা। মহাসমাবেশের আগে ১৪ জানুয়ারি থানায় থানায় মানববন্ধন, ২৩ জানুয়ারি জেলা শহরে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেবেন শিক্ষকরা। সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারীদের ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, বৈশাখী ভাতা, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ভাতা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা আবেদনের সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে পরিশোধ, নন-এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের এমপিওর দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সভাপতি সৈয়দ জুলফিকার আলম চৌধুরী, মহাসচিব ইয়াদ আলী খান, অতিরিক্ত মহাসচিব ফরিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সচিব আবদুর রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব শরিফুল আলম, আবদুল কুদ্দুস, ফজলুর রহমান, অর্থ সচিব হরেন্দ্রনাথ মজুমদার, গণসংযোগ সচিব আউয়াল মোল্লা, ক্রীড়া সচিব মোহাম্মদউল্লাহ ভূঁইয়া প্রমুখ। এদিকে জাতীয়করণের দাবিতে শনিবার ষষ্ঠদিনের মতো অবস্থান ধর্মঘট করেছে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সব ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে মাদ্রাসা শিক্ষকেরা এ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। ১ জানুয়ারি থেকে তাদের এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। ধর্মঘট চলাকালে সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন সমিতির সভাপতি কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী। উপস্থিত রয়েছেন সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি তাজুল ইসলাম ফরাজি, মহাসচিব কাজী মোখলেসুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আবু মুসা, অর্থ সম্পাদক জিয়াউল হক জিয়া, দফতর সম্পাদক ইনতাজ বিন হাকিম, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এবিএম আব্দুল কুদ্দুস প্রমুখ। কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী বলেন, ১৯৯৪ সালে জারি হওয়া একটি পরিপত্রেই রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতন ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে বেতন বাড়িয়ে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি বর্তমান মহাজোট সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারী প্রাইমারি স্কুল জাতীয়করণ করে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো সরকারের সব কাজে অংশগ্রহণ করেন। অথচ মাস শেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ২৫-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পান। কিন্তু ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা তেমন কোনো বেতন ভাতা পান না। তবুও তারা শিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, মাত্র ১ হাজার ৫১৯টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ২৫০০ টাকা, সহকারী শিক্ষক ২৩০০ টাকা ভাতা পান। বাকি মাদ্রাসা শিক্ষকরা ২৯ বছর ধরে বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত। তাই জাতীয়করণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলে জানান সংগঠনটির সভাপতি। কিন্তু এখন হঠাৎ করে কেন সকলে আন্দোলনে নামছেন? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনই কৌশল হিসাবে সরকারের শেষ সময়কে দাবি আদায়ের মোক্ষম সময় হিসাবে বেছে নিয়েছে। তাই তারা জাতীয়করণ, এমপিওসহ নানা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় হতে চান। সরকারের শেষ সময় ছাড়াও আগামী বাজেটে যাতে নিজেদের সমস্যা, বৈষম্য দূর করার পথ খুঁজে পান তারও একটা আশা থাকে বলে মনে করছেন শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার। বাংলাদেশ বেসরকারী কারিগরি শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার জনকণ্ঠকে বলছিলেন, দেখেন এটাই বাস্তব যে বর্তমান সরকার শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য যতটা করেছেন তা কেউ কোনদিন করেনি। তার পরেও অনেক সমস্যা, অনেক বৈষম্যের শিকার হয়ে আছেন কোটি কোটি শিক্ষক-কর্মচারী। তারা সব সময়েই চান তাদের মানবিক দাবি দেখা হোক। তার পরেও এখন আসন্য বাজেট ও সরকারের সময়ের কথা চিন্তা করে স্বাভাবিকভাবেই আগাতে চান তারা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১০ সালের পর কোন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। এতদিন ধরে হাজার হাজার শিক্ষক কাজ করেও সরকারী কোন টাকা পান না। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে পদক্ষেপ নিয়েছেন শিক্ষক সমাজের জন্য এটা ইতিবাচক একটা পদক্ষেপ। শিক্ষক নেতারা একে কৌশল বলেছেন। নেতারা বলছেন, সরকারের শেষ সময়ে দাবি আদায় সহজ। কারণ নির্বাচন আসন্ন থাকায় সরকারও এ বিষয়ে সহনীয় মনোভাব দেখায়, যা অন্য সময় দেখায় না। জানা গেছে, গেল ডিসেম্বরে দুইটি শিক্ষক আন্দোলন হয়েছে। প্রথমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের চেয়ে সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড তিন ধাপ কম থাকাকে বৈষম্য দাবি করে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেছেন শিক্ষকরা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর আশ্বাসে তারা কর্মসূচি স্থগিত করার পর শুরু হয় এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন। যেসব স্কুলের শিক্ষকদেরকে সরকার আর্থিক সুবিধা দেয় না, সেসব স্কুলের শিক্ষকরা এই সুবিধার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেছেন। টানা আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে ঘরে ফিরে যাব। তবে আবার আন্দোলনে মেনেছেন অন্যরা। আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছে আরও কিছু শিক্ষক সংগঠন। সরকারের শেষ বছরে আন্দোলন কেন-এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমপিওর দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষক আজহার আলী বলছিলেন, আন্দোলন তো দীর্ঘসময় ধরে করা যায় না। সরকারের মেয়াদের শেষে আন্দোলন করলে দাবি পূরণ সহজ হয়। এই কারণেই আমরা এখন রাজপথে।
×