নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর, ৬ জানুয়ারি ॥ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে গুলিবিদ্ধ যুদ্ধাহত হতদরিদ্র কেশবপুরের আফাজ আলী স্বীকৃতি পাননি আজও। টাঙ্গাইল ১১ নং সেক্টরে কাদেরিয়া বাহিনীর ৫ নং কোম্পানীর অধীনে বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে লড়াই করেন আফাজ আলী। কালিহাতি এক যুদ্ধে তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতও হন। যুদ্ধে অংশগ্রহণের তিনটি সার্টিফিকেট থাকলেও তিনি স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। তিনি জানান, তখন তার বয়স মাত্র ১৬ বছর কয়েক মাস। আতাউল গনি ওসমানী তাকে টাঙ্গাইল পাহাড়তলি ট্রেনিং সেন্টারে ঢুকিয়ে দেন। টাঙ্গাইলের পাহাড়তলি ট্রেনিং সেন্টারের দ্বিতীয় ব্যাচে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে কোম্পানী কমান্ডার রবিউল আলমের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন। টাঙ্গাইল শহর সদরের চারাবাড়ী, খুদিরামপুর, কালিহাতির বলা বাজার, রতনগঞ্জ, তেজপুর, জোগারচর, বল্লববাড়ী, ঘমজানি, পৌজান, ছাতিহাটি, ঘোনাবাড়ী, ঘাটাইলের ঝাওয়াইল, গুপ্ত বৃন্দাবন, কালিদাসপাড়াসহ ওই এলাকার বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রায় সত্তর বছর বয়সী আফাজ আলী বলেন, কালিহাতি যুদ্ধে তার সঙ্গে থাকা সুকুমার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ সময় মোসলেম ও লুৎফর আহত হয়। ঘাটাইল ক্যান্টমেন্ট দখলের দিন তিনি ডান পায়ের গোড়ালীতে গুলিবিদ্ধ হন। কালিহাতির রতনগঞ্জ যুদ্ধে ডিগবাজি দেওয়ার সময় এসএলআর বুকের নিচে পড়ে বুকের ডান পাশের একখানা পাজরের হাড় ভেঙে যায়। তিনি জানান, টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী স্কুল মাঠে বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেন। ওই অনুষ্ঠানে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এবং আতাউল গনি ওসমানী উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত সনদপত্র, সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি ওসমানীর স্বাক্ষরিত সনদপত্র (ক্রমিক নং-৩২৩০৮), ১১ নং সেক্টরের আঞ্চলিক অধিনায়ক কাদের সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র এবং রণাঙ্গণের (৫নং কোম্পানী) কমান্ডার রবিউল আলম গেরিলা স্বাক্ষরিত সনদপত্র রয়েছে যুদ্ধাহত আফাজ আলীর। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বাধীনতার পরও ৪৬ বছর অতিবাহিত হয়ছে। আজও আফাজ আলী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। বর্তমানে আফাজ আলী স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে কেশবপুর পৌর এলাকার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে বসবাস করেন। তাঁর পিতার নাম মৃত শরীতুল্লাহ দফাদার। দীর্ঘ ৪৬ বছরে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম না উঠার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর সার্টিফিকেট হারিয়ে গিয়েছিল।
বাবার পুরনো ভিটে খোঁড়ার সময় মাটির নিচে পড়ে থাকা সার্টিফিকেটের বাক্সটি খুঁজে পান। ২০০৫ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিকট মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্তির জন্য সরাসরি আবেদন করেন। ০৩/০৯/২০০৫ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সীল ও স্বাক্ষর দিয়ে আবেদন গ্রহণ করা হয়। চলতি বছরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই বোর্ডে তিনি যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে জানানো হয়েছে কমান্ডার রবিউল আলমকে বোর্ডে আনতে হবে। আফাজ আলী জানান, কমান্ডার রবিউল আলমকে কেশবপুরে আনা খুবই কঠিন। কারণ তিনি এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। কেশবপুর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বলেন, আফাজ আলী ১১ নং সেক্টরে টাঙ্গাইল এলাকায় সরাসরি যুদ্ধ করেছেন। তার মুক্তিযুদ্ধের ৩টি সনদপত্র রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। তবে যাচাই বাচাই কমিটির বোর্ডে হাজির না হওয়ায় তিনি তালিকাভুক্ত হতে পারেননি।