ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘ইরানে বিক্ষোভ দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়’

জাতিসংঘে কড়া সমালোচনার মুখে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

জাতিসংঘে কড়া সমালোচনার মুখে যুক্তরাষ্ট্র

ইরানে চলমান বিক্ষোভ নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ওয়াশিংটনের ডাকা বৈঠক শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। ইরানের বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন ঘোষণার লক্ষে ট্রাম্প প্রশাসন শুক্রবার রাতে ওই বৈঠকের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য দেশ বিষয়টিকে ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এ নিয়ে মার্কিন উদ্যোগের বিরোধিতা করে। বিবিসি, এএফপি। বৈঠকের শুরুতে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন প্রতিনিধি নিকি হ্যালি বলেন, ইরানের শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে নিজ জনগণের অধিকারের প্রতি অবমাননা করে আসছে। ইরানে চলমান আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের প্রতি ওয়াশিংটনের পূর্ণসমর্থন রয়েছে। বৈঠকে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, দুঃখজনকভাবে আজ আমরা এমন এক ঘটনার সাক্ষী হলাম যে ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে নিরাপত্তা পরিষদের প্ল্যাটফর্মকে নিজের স্বার্থে অপব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি মানলে ২০১৪ সালের অগাস্টে মিসৌরির ফার্গুসনে হওয়া কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতিবাদের সময়ও নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হওয়া উচিত ছিল। শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্যের গুলিতে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ যুবক নিহতের ওই ঘটনায় সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছিল। আজকের বৈঠকে যে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে তার সঙ্গে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কোন সম্পর্ক নেই। নিরাপত্তা পরিষদ গোটা বিশ্বে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়ে কাজ করে। তাই বিশ্বে এই সংস্থাটির ভূমিকা দুর্বল হয়ে যায় এমন কোন কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের উচিত নয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের শক্তির অপচয় হয়। নেবেনজিয়া আরও বলেন, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, উত্তর কোরিয়া এবং আফ্রিকার দীর্ঘদিনের সমস্যা বাদ দিয়ে আমরা ইরান বা অন্য কাউকে অস্থিতিশীল করার জন্য বৈঠক করতে পারি না। ফরাসি রাষ্ট্রদূত ফ্রাঁসোয়া দেলাত্রে ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে বলেন, ইরানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়নি। বৈঠকে চীনের রাষ্ট্রদূত ইরানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা নিরাপত্তা পরিষদের উচিত হবে না। বৈঠকে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত গোলাম আলী খোশরু আমেরিকার জনগণের সঙ্গে মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিগত কয়েক দশকের বর্বর আচরণের কিছু ঘটনা তুলে ধরে বলেন, এসব ঘটনা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা তো দূরের কথা কেউ সেসব প্রসঙ্গ জাতিসংঘে উত্থাপনের কথাও চিন্তা করেনি। ঠিক একইভাবে ইরানের ব্যাপারে কথা বলার কোন নৈতিক বা রাজনৈতিক অধিকার আমেরিকার নেই। তিনি বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উচিত ফিলিস্তিনী ভূমির ওপর ইসরাইলের দীর্ঘদিনের দখলদারিত্ব কিংবা ইয়েমেনের নিরস্ত্র জনগণের ওপর সৌদি আরবের তিন বছরের বর্বরোচিত আগ্রাসন নিয়ে আলোচনা করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কথা বলতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ। বলিভিয়া, হল্যান্ড, কুয়েত ও কাজাখস্তানসহ আরও কয়েকটি দেশ ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে। শেষ পর্যন্ত বৈঠক থেকে ইরানের ব্যাপারে কোন প্রস্তাব পাস করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির প্রতিবাদ জানিয়ে ইরানের বেশ কিছু শহরে মানুষজন বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় কিছু স্থানে বিক্ষোভ সহিংস ওঠে, এতে গত কয়েকদিনে ইরানে ২২ জন নিহত এবং অন্তত ১০০০ বিক্ষোভকারী গ্রেফতার হন। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও সৌদি আরবের গণমাধ্যমগুলো এই বিশৃঙ্খলার খবর ফলাও করে প্রচার করে এবং ইরানের বিক্ষোভকারীদের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন ঘোষণা করেন। তবে গত বুধবার থেকে ইরানের রাজপথের চেহারা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। বিক্ষোভকারীদের প্রতি নিন্দা জানিয়ে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর রাস্তায় শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
×