ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুভাষ সিংহ রায়

সরকারের উন্নয়নের ৯ বছর ॥ জনগণের বিবেচনায় কতটুকু থাকবে?

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

সরকারের উন্নয়নের ৯ বছর ॥ জনগণের বিবেচনায় কতটুকু থাকবে?

আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ সরকারের সময় দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছিল। সারাবিশ্বে তখন অর্থনৈতিক টালমাতাল অবস্থা ছিল সেখানে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ছিল মাত্র ১.৫২। যে কোন বিচারে সেটি ছিল বিস্ময়কর সাফল্য। কিন্তু ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনের ফলাফলে তার কতটুকু প্রভাব পড়েছিল? এবার দেখা যাক গত ৯ বছরের উন্নয়নে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কতটুকু হয়েছে। ১. ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭.২৮ শতাংশ। পূর্ববর্তী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির এই হার ছিল ৭.১১ শতাংশ। এ সময়ে মাথাপিছু জাতীয় আয় ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় পূর্ববর্তী অর্থবছর হতে ১৪৫ মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০১০ সালে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১.৫ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৪.৩ শতাংশে। এ সময় চরম দারিদ্র্যের হার ১৭.৬ থেকে ১২.৯ শতাংশে নেমে এসেছে। ২. ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি আয় পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৭) রফতানি আয় পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৯ শতাংশ। এর মধ্যে মূলধনী পণ্য আমদানির প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.৫ শতাংশ, যা শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ইঙ্গিত বহন করে। ৩. ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জনশক্তি রফতানি পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৩২.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহে গতিশীলতা ফিরে এসেছে এবং প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৭) রেমিটেন্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৪.৪ শতাংশ। সর্বশেষ ১৯ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৭) সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৫.৯ শতাংশ, পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ে এই হার ছিল ৫.৪ শতাংশ। ৪. কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে যথাক্রমে ৩৩৮.৯০, ৩৩৮.৩৪, ৩৪৩.৫৭, ৩৪৭.১০ ও ৩৪৭.১০ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। ফলে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জিত হয়েছে। ৫. আদালতের কার্যক্রম আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ডিজিটাল মোবাইল কোর্ট সিস্টেম () চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে খুব সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে অনলাইনে এবং প্রয়োজনে অফলাইনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ মোবাইল কোর্টের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন। প্রায় ৭৯ হাজার ৬০টি মামলা ই-মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে এবং এ পর্যন্ত ৪.২ মিলিয়ন সেবাগ্রহীতা ই-মোবাইল কোর্ট থেকে সেবা গ্রহণ করেছে। ৬. ঢাকা মহানগরী ও বুড়িগঙ্গা নদীর পরিবেশ দূষণ রোধে রাজধানীর হাজারীবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থিত ট্যানারিসমূহকে সাভারে পরিবেশবান্ধব স্থানে স্থানান্তরের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার ও ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণসহ চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্প বাস্তবায়নেরর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনের লক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জে এ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস (এপিআই) শিল্পপার্ক বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রকল্পটি মুন্সীগঞ্জ জেলাধীন গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া এলাকায় ২০০ একর জমিতে স্থাপিত হচ্ছে। এ প্রকল্পে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ৪২টি উন্নত প্লট তৈরির মাধ্যমে ৪২টি শিল্প-কারখানা স্থাপিত হবে এবং ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ৭. তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত। এই খাত থেকে রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের অধিক অর্জিত হয়। তৈরি পোশাক শিল্পে ৪৫ লাখ শ্রমিক সরাসরি কাজ করে। যার প্রায় ৮০ শতাংশ নারী। সরকারের সার্বিক প্রচেষ্টা ও বেসরকারী খাতের উদ্যোগে তৈরি পোশাক রফতানি আয় ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৯.০৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৮.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আশা করা যায় ২০২১ সালে এ খাতে রফতানি আয়ের পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশের নেতৃত্বে এলডিসি গ্রুপ ডব্লিউটিওর দশম মিনিস্টেরিয়াল কনফারেন্সে মেধাস্বত্বের অব্যাহতির মেয়াদ বৃদ্ধিতে সমর্থ হয়েছে। সাধারণভাবে মেধাস্বত্বের এই অব্যাহতি ১ জুলাই ২০২১ এবং ওষুধ শিল্পের ক্ষেত্রে ১ জানুয়ারি ২০৩৩ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ৮. বাংলাদেশে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। দেশে ২০০৮-০৯ সালে দানাদার খাদ্যশস্য (চাল, গম ও ভুট্টা) উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। ডাল, তেল, আলু, সবজিসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও একইভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মৎস্য আহরণে ২০১৬ সালে বিশ্বে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে। ৯. সরকারের মৎস্যবান্ধব কার্যক্রম পরিচালনা এবং চাষী ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক কারিগরি পরিষেবা প্রদানের ফলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ৪০.৩৯ লাখ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে মৎস্য উৎপাদন ৪০.৫০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। মৎস্য উৎপাদনের এই প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে আশা করা যায় চলতি বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৮ হাজার ৩০৬ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানি করে ৪,২৮৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আয় হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে মাংসের মাথাপিছু চাহিদার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এবং দুধ ও ডিমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রবৃদ্ধির হারও উৎসাহব্যঞ্জক। ১০. বর্তমান সরকার স্বল্প ও সীমিত আয়ের জনগোষ্ঠীকে খাদ্য নিরাপত্তা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি পরিকল্পনা গ্রহণ ও তত্ত্বাবধানে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে বছরে পাঁচ মাস ধরে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করছে। ১১. ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন ২০১০’-এর আওতায় গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড। ২০০৯-১০ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিলে মোট ৩,২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৬ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গঠিত ঐরময খবাবষ চধহবষ ড়হ ডধঃবৎ-এর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১২. জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে সরকার ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭’ প্রণয়ন করেছে। এতে জনগণ জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ বাজার মূল্যের ৩ গুণ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে, যা পূর্বে ছিল মাত্র দেড় গুণ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শান্তিনগর থেকে চতুর্থ বুড়িগঙ্গা ব্রিজ হয়ে ঢাকা-মাওয়া রোডে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প পর্যন্ত ১৩.৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। ১৩. চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচীর আওতায় বয়স্কভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির জন্য মোট ৩,৬০৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। ১৪. জাতীয় হজ নীতিমালায় ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়, যা হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভূ-উপরিস্থ পানি (সারফেস ওয়াটার) সংরক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের পুকুর, দীঘি ও খাল খনন করার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। রাজধানীর তীব্র যানজট সমস্যার সমাধানে রাজধানী মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে ইন্টারচেঞ্জ/আন্ডারপাস এবং ফ্লাইওভার অবকাঠামো নির্মাণ বাংলাদেশ সরকার গৃহীত কল্যাণমুখী বহুবিধ কৌশলের অন্তর্ভুক্ত। ১৫. পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের তৎকালীন বিরাজমান পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চারখণ্ডে বিভক্ত পার্বত্য শান্তিচুক্তিতে মোট ৭২টি ধারা রয়েছে। এর মধ্যে ৪৮টি ধারা ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ, ১৫টি আংশিক এবং অবশিষ্ট ৯টি ধারার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির অবশিষ্ট অঙ্গীকার ও ধারাসমূহ বাস্তবায়ন করা হবে। ১৬. প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পে ঢাকার বেইলি রোডে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে মূল ভবনের বেজমেন্টের কাজ সম্পন্ন করা হয়। সরকার ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন পুনর্গঠন করেছে। এটি পঞ্চম কমিশন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১’-এর সংশোধনী ইতোমধ্যে জারি হয়েছে। ১৭. ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে বিদেশে প্রেরিত কর্মীর সংখ্যা ৭৩৬৪৬১। এ সময়ে অর্জিত রেমিটেন্সের পরিমাণ ৯,৯৮৫.৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমান সরকারের সফল শ্রম কূটনীতির ফলে ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আলোকে সৌদি আরবে নারী কর্মী গমন শুরু হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭১৪৩৩ নারী কর্মী সৌদি আরব গমন করেছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়াতে নির্মাণ, কৃষি ও শিল্পখাতে ৪৯ হাজার ৩০৭ কর্মী প্রেরণ করা হয়েছে। ১৮. প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় ৯ হাজার ৫৯৮টি পদে সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ/পদায়ন করা হয়েছে। আরও ৪ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং ৬০০ মিডওয়াইফ নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২ মে ২০১৭ তারিখে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার ৩৭৮ সহকারী সার্জন এবং ৬৭ সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন প্রদান করেছেন। তন্মধ্যে প্রথম ধাপে ৪ হাজার ৮৯২ জন চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ১৯. ১৩ হাজার ৪৪২টি কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমানে চালু আছে (যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৭ শতাংশ) এবং এই সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে গ্রামীণ জনগণ কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবায় সন্তুষ্ট। বর্তমানে সারাদেশে মাসে গড়ে ৯৫ লাখ থেকে ১ কোটি সেবাগ্রহীতা কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিয়ে থাকেন। ২০. বাংলাদেশে প্রায় ৯৮ শতাংশেরও বেশি ওষুধ বর্তমানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়। বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশে^র ১৪০টি দেশে ওষুধ রফতানি হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ওষুধ রফতানির পরিমাণ যেমন বাড়ছে, তেমনি ওষুধ আমদানিকারী দেশের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওষুধ শিল্পকে সামগ্রিকভাবে আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সরকার ঢাকার অদূরে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় একটি এপিআই পার্ক স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ‘ওষুধ নীতি-২০১৬’ জারি করা হয়েছে। ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ ঢাকার নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এককভাবে বেড সংখ্যা বিবেচনায় এটি বিশে^র বৃহত্তম বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি কোর্সে প্রতিবছর মোট ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তির সুযোগ পাবে। ২১. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার অব্যবহিত পর ১৯৭৩ সালে দক্ষ ও মেধাসম্পন্ন সুশিক্ষিত মানবসম্পদ গড়ার লক্ষ্যে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণসহ ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেন, যা জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। এই ধারাবাহিকতায় তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ‘শিক্ষানীতি-২০১০’ প্রণীত হয়েছে। ২০১৩ সালে দ্বিতীয়বারের মতো এক সঙ্গে ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। যার মধ্যে ২৫ হাজার ১৫৯টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট ১ লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণ করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের নিজস্ব বর্ণমালায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং সংশ্লিষ্ট ভাষা জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে ৯ হাজার ৭০৩ কপি ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করে বিতরণ করা হয়েছে এবং প্রাক-প্রাথমিক স্তরে গারো, মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা ও সাদ্রি এই ৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রাথমিক স্তরের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মাঝেও তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে। ২২. কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিকমানের জাতীয় সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। এই ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে সমুদ্রসম্পদ চিহ্নিতকরণ ও আহরণের নিমিত্ত সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে একটি মেরিন এ্যাকুরিয়াম নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ২৩. বর্তমানে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১৩.৯৩ কোটি এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৭.৭১ কোটি। বর্তমানে দেশে টেলিডেনসিটি ৮৯.৭১ শতাংশ এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি ৪৭.৬৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বর্তমানে দেশে ২৮টি হাই-টেক/আইটি পার্ক নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পার্কসমূহের নির্মাণ কাজ শেষ হলে ২৮.৭২ লাখ বর্গফুট স্পেস বরাদ্দ প্রদান করা যাবে এবং এর মাধ্যমে সম্ভাব্য ২.৪৩ লাখ জনের কর্মসংস্থান হবে। জাতীয় পর্যায়ে সর্বস্তরের জনগণের জন্য মোবাইল ফোনভিত্তিক হেল্পডেস্ক বাস্তবায়ন কর্মসূচীর আওতায় পরিচালিত ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ‘৯৯৯’ কল সেন্টারটি দেশের সব নাগরিকের জন্য জরুরী পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করছে। চলবে... লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
×