ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিপন্ন ব্রহ্মপুত্র

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

বিপন্ন ব্রহ্মপুত্র

নদীরও শুশ্রƒষা প্রয়োজন। অথচ নদীর প্রাণ না বাঁচিয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে আমরা অপরিণামদর্শিতার উদাহরণ বাড়িয়ে চলেছি। দখল-দূষণে দেশের বহু নদী বিপন্ন-বিপর্যস্ত। সুপ্রাচীনকাল থেকেই দেশজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদী। এসব নদী দেশের অর্থনীতি এবং জনজীবনকে সতেজ ও সচল রাখতে পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে নদীকে বাদ দিয়ে কল্পনা করা যায় না কৃষির কথা, কল্পনা করা যায় না মৎস্যপুষ্টির কথা। পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রেও নদ-নদীর রয়েছে অতুলনীয় ভূমিকা। কিন্তু অযতœ-অবহেলা এবং দখন-দূষণে আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে এসব নদ-নদী। খনন না হওয়ায় দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীতে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। এ বিষয়ে বহু অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে দেশের পত্র-পত্রিকায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় একের পর এক নদী সুস্বাস্থ্য হারিয়ে ক্রমশ মৃত্যুমুখে পতিত হতে চলেছে। শুক্রবার জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ব্রহ্মপুত্র নদের বিপন্নতার চিত্র। হোসেনপুরে ব্রহ্মপুত্র নদ নাব্য সঙ্কটে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সেচসহ জীববৈচিত্র্য। এ কারণে স্থানীয়রা এ নদ খননে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে জরুরী প্রতিকার দাবি করেছেন। বিগত ৬০-৭০ বছরেও কোন খনন না করায় নদের তলদেশে পলি জমে এর নাব্য হ্রাস পেয়ে এককালের উত্তাল নদ ছন্দ হারিয়ে আজ মরা খালে পরিণত হচ্ছে। আর এতে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্যসহ মৎস্যসম্পদ ও নানা জলজ প্রাণী। হাজার হাজার জেলে পরিবার এখন তাদের আদি পেশা ছেড়ে বেকারত্ব ঘোচাতে বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। খেয়া পারের মাঝিরা বৈঠা ছেড়ে কলের নৌকা চালিয়েও শেষ অবধি ছাড়তে হয়েছে বাপ-দাদার পেশা। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা শাখা নদীগুলোও এখন বিত্তবানদের ফসলি জমি। ভয়াবহ নাব্য সঙ্কট ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি আবাদে নেমে এসেছে স্থবিরতা। নদীর তলদেশে পানি না থাকায় সেচনির্ভর কৃষকরা পড়েছে মহাসঙ্কটে। তাই ব্রহ্মপুত্র নদের দু’পাড়ের মানুষের দাবি অতিদ্রুত নদের ড্রেজিং করে পানির প্রবাহ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। জনশ্রুতি রয়েছে, তৎকালীন বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে নৌ-বহর নিয়ে হোসেনপুর এলাকা দিয়ে যাতায়াত করতেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নৌবহর ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে নিয়মিত টহল দিত ও রসদ সরবরাহের নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহার করত। হোসেনপুরে তারা নীলকুঠিও স্থাপন করেছিল। সমৃদ্ধ ইতিহাস আজ কেবল স্মৃতি, নাব্য সঙ্কটে ব্রহ্মপুত্র বিপন্ন। নদ-নদীর ক্ষেত্রে প্রথমেই চাই ‘নদীকে বাঁচতে দাও’-এর নীতি মেনে চলা। অথচ তা না করে এসব অভিন্ন নদীকে গলাটিপে হত্যা করা হচ্ছে। ‘মনুষ্য ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ মাধ্যমে এই হনন কাজ চালানো হচ্ছে। নদ-নদীর স্বাভাবিক যাত্রাপথ, ¯্রর্্েরাত, বহনকৃত পলি ও জলজ জীবের স্বাভাবিক চারণ এবং প্রজনন ক্ষেত্র ইত্যাদি এভাবে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। নদীকে ‘হত্যা’ করার এরূপ আত্মহননের পথ পরিত্যাগ করতে হবে। নদীকে নিজের মতো করে বাঁচতে দিতে হবে। নদী খননের কাজে চাই গতি। নদী রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজে সক্রিয়তা জরুরী।
×