ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পটিয়া রেলস্টেশন

সকালে উচ্ছেদ রাতে দখল

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

সকালে উচ্ছেদ রাতে দখল

বিকাশ চৌধুরী, পটিয়া, ৫ জানুয়ারি ॥ রেলওয়ের চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে পটিয়া রেলস্টেশন এলাকার অবৈধ স্থাপনা কোনভাবেই উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। রেল স্টেশনের দুই পাশেই রয়েছে বেশ কিছু অস্থায়ী ও স্থায়ী স্থাপনা। রেলওয়ের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী মাসোহারা নেয়ার ফলে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করছে না বলে অভিযোগ। বর্তমানে স্টেশন এলাকায় চায়ের দোকান, ফলের দোকান, পানের দোকান, পাহাড়ী বাঁশ-ছিবা বিক্রি, মাছের পোনা বিক্রির দোকানসহ ছোট ছোট বেশ কিছু দোকান রয়েছে। এসবের কারণে পটিয়া রেল স্টেশনের সৌন্দর্য হারাচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রেল কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ পরিচালনা করার আগেই এখানকার অবৈধ দখলকারীরা তাদের মালামাল স্ব উদ্যোগে সরিয়ে নেন। রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের ভূ সম্পদ কর্মকর্তা ইশরাত রেজার নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার এক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। তবে পটিয়া স্টেশনে যেসব অবৈধ স্থাপনা ছিল তা উচ্ছেদের আগেই সরিয়ে নিলেও শুক্রবার সকালে পুনরায় এসব অবৈধ স্থাপনা নিজ নিজ জায়গায় বসে যায়। জানা গেছে, রেলওয়ের দোহাজারী-কক্সবাজার প্রকল্পের কাজ কয়েক দিনের মধ্যে শুরু হবে। চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটের কালুরঘাট ব্রিজের পর থেকে গুমদন্ডী, বেঙ্গুরা, ধলঘাট, খানমোহনা, পটিয়া, চক্রশালা, খরনা, খাঁনহাট, কাঞ্চননগর, হাশিমপুর দোহাজারী রেল স্টেশন পর্যন্ত অসংখ্য অবৈধ স্থাপন এখনও রয়েছে। নতুন প্রকল্প কাজ শুরু করার আগে গত ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) আমজাদ হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম দোহাজারী পর্যন্ত পরিদর্শন করেছেন। তিনি যাওয়ার আগের দিন পটিয়া রেল স্টেশনসহ সব কয়টি স্টেশনের দু’পাশে যেসব অবৈধ স্থাপন ছিল তা উচ্ছেদ করা হয়। প্রতিই সকালে উচ্ছেদ করলে বিকেলে অথবা রাতে পুনরায় দখল করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার কিংবা কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মাসোহারা দেয়ার ফলে উচ্ছেদের অগ্রিম খবর দখলদারদের কাছে পৌঁছে যায়। যার কারণে উচ্ছেদ করার আগেই মালামাল স্ব উদ্যোগে নিজেরাই সরিয়ে নেন এবং পুনরায় দখল করে থাকেন। এদিকে, রেলওয়ের ডিজি আমজাদ হোসেন চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেল লাইন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি জানিয়েছিলেন চলতি মাসেই (জানুয়ারি) দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত রেলওয়ের নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যাওয়ার সুবিধার্থে সরকার দোহাজারী থেকে কক্সবাজার ও কক্সবাজার থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। শুরুতে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ কাজ শুরু করবেন। প্রথমে শঙ্খ নদীতে নতুন প্রকল্পের রেললাইন ব্রিজ নির্মাণ শুরু হবে। অপরদিকে, পটিয়া সদরসহ ৫টি স্টেশন এলাকায় যেসব লেভেল ক্রসিং গেট রয়েছে এসবের একটিতে গেট কিপার নেই। যার কারণে এলাকার লোকজন প্রায় সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়। সর্বশেষ গত ২১ ডিসেম্বর পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের গিরি চৌধুরী বাজার এলাকায় অনুমোদনবিহীন একটি লেভেল ক্রসিং গেট দিয়ে অবাধে বালু বোঝাই ট্রাক পারাপারের সময় যাত্রীবাহী একটি ট্রেনের ধাক্কায় বালু বোঝাই ট্রাক উল্টে ট্রেন ও ট্রাক চালক আহত হন। পটিয়া রেল স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী ও পটিয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ঝুন্টু জানিয়েছেন, পটিয়া রেল স্টেশন এলাকায় যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সেখান থেকে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাসোহারা পেয়ে থাকেন। যার কারণে উচ্ছেদের অগ্রিম খবর তারা পাচ্ছেন। অবৈধ স্থাপনার কারণে পটিয়া রেল স্টেশনের সৌন্দর্য হারাচ্ছে এবং স্টেশন এলাকার অবৈধ দোকানের ফলে ময়লা আর্বজনায় সব সময় ভরপুর থাকে। পটিয়া রেল স্টেশনের সৌন্দর্যের স্বার্থে অবৈধ সব স্থাপনা স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করা দরকার। পটিয়া রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সঞ্জীব দাশ জানিয়েছেন, রেল স্টেশনের দু’পাশেই যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে তা উচ্ছেদ করতে ইতোপূর্বে উর্ধতন কর্মকর্তাকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তাছাড়া তিনি (স্টেশন মাস্টার) নিজেও মৌখিকভাবে বলেছেন। স্থানীয়রা প্রভাবশালী হওয়ায় উচ্ছেদের পরও তারা পুনরায় রাতে দখল করে থাকেন। স্থায়ী উচ্ছেদ করতে হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে উচ্ছেদ ও জরিমানা করা দরকার।
×