ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবকাঠামো সম্প্রসারিত হলেও রোগীদের ভোগান্তি কমছে না

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

অবকাঠামো সম্প্রসারিত হলেও রোগীদের ভোগান্তি কমছে না

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলাতে অবকাঠামো স্থাপনা সম্প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমানের পাঁচ তলা ভবনকে সাত তলায় উন্নীত করে শয্যা সংখ্যা পাঁচ শ’ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে সাত শ’ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অবকাঠামো সম্প্রসারণের অর্থ বরাদ্দ মিলেছে। এদিকে এই হাসপাতালে চিকিৎসার আধুনিক সরঞ্জামাদি ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যার চিকিৎসক থাকার পরও রোগীদের ভোগান্তি কমছে না। পরিষেবার মান উন্নত হয়নি। অনেক রোগী পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে পালিয়েও যাচ্ছে। হালে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আহত রোগীর বেশিরভাগই এই হাসপাতালে যাচ্ছে। এই রোগী সামলাতে ক্যাজুয়েলটি বিভাগ চালু হয়নি। চালু করা হয়নি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। আরেকদিকে কিডনি ডায়লাইসিস মেশিনের অপ্রতুলতায় কিডনি রোগীদের সেবা দিতে বিঘ্ন ঘটছে। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মধ্য নগরী বগুড়ায় প্রথম বাইপাস সড়কের ধারে ৫শ’ শয্যার আধুনিক এই হাসপাতাল চালু হয় ২০০৫ সালে। নামকরণ করা হয় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) ও হাসপাতাল। ক্যাথল্যাব, ম্যাগনেটিক রেজনন ইমেজিং (এমআরআই), কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যানসহ মানব দেহের বিভিন্ন জটিল পরীক্ষার যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। বছর কয়েক আগে কার্ডিওলজি বিভাগে হার্টের ব্লক নির্ণয়কারী এবং সেই ব্লকে রিং পড়ানোর ইউনিট ক্যাথল্যাব (এ্যাঞ্জিওগ্রাম ও এ্যাঞ্জিও প্লাস্টি যন্ত্র) চালু করা হয়। সূত্র জানায়, হার্টের রোগীদের রিং পরানোর যে লোকবল থাকার কথা তা নেই। দিনে দিনে দেশে হার্টের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০ শয্যার কার্ডিওলজি বিভাগে নিত্যদিন হার্টের রোগী আসছে ৭০/৮০ জন করে। লোকবল এতই কম যে সড়ক দুর্ঘটনার রোগী বেশি এলে অন্যান্য সেবার বিঘ্ন ঘটে। এমনিতেই ৫শ’ শয্যার এই হাসপাতালে গড়ে নিত্যদিন ৮শ’ থেকে এক হাজার করে রোগী রাখতে হয়। বাড়তি রোগীর সেবা দিতে যে লোকবল দরকার তা নেই। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা দেয়ার লক্ষ্যে শজিমেক হাসপাতালে ১১টি নতুন বিভাগ চালু করা হয়েছে। নতুন বিভাগগুলো হলোÑ নিউরো মেডিসিন ও সার্জারি, রেপেরেটরি মেডিসিন, নেফরোলজি, পেডেট্রিক নেফরোলজি, ইউরোলজি, হেমটোলজি, হেপাটোলজি, গ্যাসট্র্রো এন্ট্রোলজি, ফিজিও মেডিসিন। এই হাসপাতাল কোন বার্ন ইউনিট নেই। দু’ বছর আগে বিএনপি জামায়াতের কথিত আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ রোগীদের কোন রকমে চিকিৎসা দেয়া হয় সাধারণ ওয়ার্ডের ১০টি শয্যাকে আলাদা করে। কথা ছিল এই হাসপাতালে ৫ শয্যার বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপিত হবে। তা আর হয়নি। দিনে দিনে কিডনি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রতিদিন রোগী আসছে। ডায়ালাইসিস যন্ত্র মাত্র ছয়টি। এই কয়টি যন্ত্রে ডায়লাইসিস সেবার বিঘ্ন ঘটছে। বর্তমানে প্রয়োজন অন্তত ৩০টি। দশতলার ভিত দিয়ে নির্মিত হয় শজিমেক হাসপাতালের অবকাঠামো। পাঁচ তলা নির্মিত হওয়ার পর কথা ছিল শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে সব বিভাগ চালু করতে পর্যায়ক্রমে হাসপাতাল দশতলায় উন্নীত করা হবে। বর্তমানে রোগী বেড়েছে, বিভাগ বেড়েছে। সেই ভাবনায় হাসপাতালকে সাত তলায় উন্নীত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গণপূর্ত বিভাগ গেল ডিসেম্বর মাসে টেন্ডার আহ্বান করেছে। ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। শজিমেকের উপাধ্যক্ষ ডাঃ রেজাউল আলম জুয়েল জানালেন, উন্নত ও আধুনিক এই হাসপাতালে রোগী সংখ্যা নিত্যদিনই বাড়ছে। সাত তলায় উন্নীত হওয়ার পর বর্তমানের শয্যা সংখ্যা ৫শ’ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে সাত শ’র অনুমোদন চাওয়া হবে। উপাধ্যক্ষ বললেন, কিছুদিন আগে হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) চালু করা হয়েছে। ক্যাজুয়েলটি বিভাগ এবং বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালু না করায় রোগীদের ঠিকমতো পরিষেবার বিঘ্ন ঘটছে। ডায়ালাইসিস যন্ত্র খুবই কম থাকায় কিডনি রোগীদের সময়মতো সেবা দেয়া যাচ্ছে না।
×